নখ ত্বকেরই একটি শক্ত অংশ।নখ আমাদের হাত এবং পায়ের সৌন্দর্য প্রকাশ করে।কিন্তু অবহেলাবশতঃ নখের যত্ন নেওয়ার মানসিকতা অনেকেরই নেই।অবহেলার কারণে নখের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়।নখের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফাঙ্গাস।সময় মত নখের যত্ন না নিলে এই ফাঙ্গাস নখের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলে।সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করেন যারা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত।আমরা নিজেদের অজান্তেই এ সকল সমস্যার সম্মুখীন হই।তাই নখের যত্ন নিয়মিত নেওয়া চাই।
নখ পরিচিতি
নখ শক্ত ‘কেরাটিন’নামক প্রোটিন দ্বারা গঠিত ত্বকের একটি অংশ।প্রতিদিনই নখের বৃদ্ধি হয়ে থাকে,তবে তা দৃষ্টিগোচর হয় না।মাসে এর বৃদ্ধি ১”-৮” পরিমাণ পর্যন্ত হতে পারে।কিন্তু পায়ের নখ হাতের নখের চেয়ে তুলনামূলক ধীরে বৃদ্ধি পায়।নখ হাত-পায়ের আঙ্গুলকে বাহ্যিক যে কেনো আঘাত হতে রক্ষা করে।স্বাভাবিক অবস্থায় নখ মসৃণ ও উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে।দেহে কোনো রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করতে প্রাচীন যুগে ডাক্তারগণ নখের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে রোগের নাম বলে দিতে পারতেন।সুন্দর নখ আপনার সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে।নখকে সুন্দর রাখতে এর যথাযথ পরিচর্যা করতে কোনো গড়িমসি করা চলবে না।
কীভাবে সুন্দর নখ পাবেন
সুন্দর নখ বলতে শক্ত ও মসৃণ নখকে বোঝায়।পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে সুন্দর ও শক্ত,মজবুত নখ পাওয়া যাবে।কখনো দাঁত দিয়ে নখ কাটবেন না,এটা দৃষ্টিকটু লাগে।দাঁত দিয়ে নখ খাওয়া বদঅভ্যাসও বটে ।
নখের যত্নে করণীয়
১.নখের ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখবেন
সুন্দর নখ পেতে নখ পরিষ্কার রাখা চাই।অপরিচ্ছন্ন নখে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে রোগের সৃষ্টি করে।যদি নিয়মিত নখগুলোকে কেটে পরিষ্কার রাখা হয় তবে ব্যাকটেরিয়া থেকে আপনার নখগুলো সুরক্ষিত থাকবে।ঘরোয়া কাজগুলো যেমন ওয়াশিং,ক্লিনিং ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন জীবাণুনাশক কেমিক্যাল যা নখের ক্ষতি করতে পারে।তাই কাজ করার সময় হাতে রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন এবং নখ শুকনো রাখুন ।
২.নখের পরিচ্ছন্নতা
নখ কাটার সময় অবশ্যই কাটার’টি পরিষ্কার কিনা যাচাই করুন।প্রায় ক্ষেত্রেই কাটারের ব্লেডে অসতর্কতাবশতঃ আগের ময়লাগুলো লেগে থাকতে পারে বা অন্য কেউ ব্যবহারের ফলে এতে কোনো ময়লা থাকতে পারে।তাই কাটারটি ব্যবহারের পূর্বে ভালো ভাবে অ্যান্টি-সেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।সপ্তাহে দু’বার আপনার হাত-পায়ের নখগুলো কেটে পরিষ্কার করুন।সঠিক নিয়ম জেনে নখ কাটুন।নখ কাটতে আপনার কাটারটি যেন ধারালো হয়।
বাড়তি কিছু সৌন্দর্যচর্চা
১.নখের যত্নে লেবুর রস
লেবুর রসে ভিটামিন সি থাকায় এটি নখের যত্নে ভূমিকা রাখে।৩টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন।হাতের নখ এতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।এরপর ধুয়ে ফেলুন।লেবু নখে ঘষলে কালো দাগ চলে যায়।
২.নখের নমনীয়তায় নারিকেল তেল
নারিকেল তেল নখকে ময়শ্চারাইজ করে নখকে নরম করে।রাতে নারিকেল তেল কুসুম গরম করে হাত-পায়ের নখে ম্যাস্যাজ করুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।
নখ যন্ত্র নয়
নখকে কখনোই যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।নখ দিয়ে স্ক্র বা ক্যান খোলার চেষ্টা করবেন না।এতে ব্যথা পাবেন,নখও ভেঙে যেতে পারে।অনেকসময় রক্তপাত হয়ে সেখান থেকে সেপটিক হতে পারে।
সুন্দর মানেই বড় নখ নয়
নখ যদি সুস্থ থাকে তবেই তা সুন্দর।ছোট নখ দেখতে মন্দ,এ কথা ভুল।কিন্তু আমরা সবাই নখ বড় রাখার ব্যাপারে কেন এত প্রতিযোগিতা করি?বড় নখ রাখার অনেকগুলো নেতিবাচক দিকও আছে।নখ বড় রাখলে অনেক সময় যে কোনো কাজে অলসতা চলে আসে।আপনি নিজেকে জখমও করতে পারেন।সজাগ বা ঘুমন্ত অবস্থায় আপনার নখের আঁচড় লেগে ক্ষত হবার সম্ভাবনা থাকে।এছাড়া সহবাসের সময় আপনি আপনার স্বামীকে নখের আঘাতে আহতও করতে পারেন।সহবাসে অনিচ্ছা তৈরি হতে পারে।এ কারণে আপনার বর আপনার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পারে যা দাম্পত্য জীবনে কলহ তৈরি করে।
এভাবেই তাহলে আপনি আপনার নখের যত্ন নিয়ে যান।আশা করছি,এরপর একদিন আপনিই আমাদের বলবেন,ভাগ্যিস ‘দাশবাস’ ছিল,তাই তো এমন নখ হল।
মন্তব্য করুন