চাঁদের শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ অনুযায়ী একাদশী হয়। আর উৎপন্না একাদশী হয় কৃষ্ণপক্ষে। হিন্দুধর্মে এই উৎপন্না একাদশী খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়। সাধারণত হিন্দু ধর্মে বিধবাদের জন্য এই একাদশী পালনের নিয়ম আছে। এটি পালনে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। মনে করা হয় শারীরিক উপকারও পাওয়া যায়। মাসে দুটো একাদশী হয়। অনেকে তাই দুটোই পালন করেন। এটি শুদ্ধ ভাবে পালনের বিভিন্ন নিয়ম আছে। কিছু কিছু খাদ্য একাদশীতে খেতে বারণ করা হয়। প্রচলিত আছে, ওগুলি খেলে একাদশী ব্রত বিফলে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন নিয়ম আছে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক উৎপন্না একাদশীর নিয়মবিধি।
যে যে খাবার খাবেন না
সাধারণত এটি নির্জলা পালনের নির্দেশ আছে। নির্জলা ব্রতর সাথে ফলমূল খেতে পারে। আর কিছু কিছু খাবার খাওয়া যায় না। বিশেষত পঞ্চশস্য খেতে নিষেধ করা হয়। যেমন
১. ধান ও ধান থেকে তৈরি সমস্ত খাদ্য। যেমন চাল, মুড়ি, চিড়ে, খই , খিচুরি ইত্যাদি, ও আরও চাল থেকে তৈরি নানারকম খাবার।
২. গম ও গম থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার। যেমন আটা, ময়দা, বিস্কুট, সুজি ইত্যাদি, ও আরও নানারকম খাবার, যা গম থেকে তৈরি হতে পারে।
৩. যব ও যব থেকে তৈরি নানা খাবার। যেমন ছাতু, যবের আটা ইত্যাদি।
৪. যেকোনো প্রকার ডাল ,ও ডাল থেকে তৈরি নানারকম খাদ্য। এমনকি মটরশুঁটি, বরবটি এসবও খেতে বারন করা হয়।
৫. সর্ষে, সয়াবিন, তিল ইত্যাদি, ও এগুলো থেকে উৎপন্ন তেলও খাওয়া যাবে না। এগুলিকে রবিশস্য বলে। এই পাঁচরকমের রবিশস্য খেতে বারন করা হয়। এই শস্য গুলি খেলে নাকি ব্রত নষ্ট হয়। তবে যেকোনো ফল, দুধ, মিষ্টি, সবজি খেতে পারে। আর তেলের বদলে ঘি খাওয়া যায়। তবে বাদাম তেল চলতে পারে।
৬. আর যেকোনো রকম নেশার দ্রব্য বারণ। এমনকি চা কফিও। অনেকেই দুপুরে খাওয়ার পর পান খান। কিন্তু ওইদিন পান না খাওয়াই ভালো।
ব্রতের নিয়ম
ব্রত পালনের আগেরদিন রাতে বারোটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। খাওয়ার পর ব্রাশ করে নিতে হবে ভালো করে। অর্থাৎ খাবার পর ভালো করে মুখ পরিষ্কার। কারণ পরদিন শুধু কুলকুচি ও স্নান। স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরে, ঠাকুরের নাম করুন। তারপর ভগবানকে ফল, মিষ্টি এসব নিবেদন করে নিজে খেতে পারেন। ওইদিন রাত্রি জাগারও রীতি প্রচলিত রয়েছে। ওইদিন কোন পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া নয়। শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ, ঈশ্বরের নামগান। এই ভাবেই সারাদিন কাটবে। তার পরেরদিন যতটা সময় পর্যন্ত একাদশী থাকবে, তার মধ্যে ঈশ্বরকে পঞ্চশস্য দিতে হবে। পঞ্চ শস্য ঈশ্বরকে নিবেদন করে প্রসাদ নিয়ে তারপর ব্রত ভঙ্গ করবে। এই ভাবেই ব্রত হবে। তবে ব্রতের আরও কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার।
১। একাদশীতে সবজি খাওয়াই যায়। তবে রান্নার সময় খেয়াল রাখা দরকার, যেন মশলার মধ্যে সর্ষে, তিল এসব না আসে।তবে হলুদ, নুন, মরিচ, লঙ্কা এসব ব্যবহার করা যায়।
২। ওইদিন যেন কোন রকম রক্তক্ষরণ না হয় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সবজি কাটা ইত্যাদি কাজের সময় খেয়াল রাখতে হবে। হাত যেন না কেটে যায়।
৩। ওইদিন চুল ও নখ না কাটার নিয়ম প্রচলিত আছে।
৪। ওইদিন শরীরে মাথায় কোনোরকম প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ আছে। এমনকি তেল, সাবান, শ্যাম্পু এসবও না।
৫। ওইদিন গীতার বাণী শোনা খুব শুভ। শোনা সম্ভব না হলে, নিজেই গীতা পাঠ করতে পারেন।
এই কটি নিয়ম পালন করে একাদশী পালন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই এবার থেকে এই নিয়ম গুলি মাথায় রাখুন।
মন্তব্য করুন