পুজো তো প্রায় এসেই গেল। এরপরই দুম করে হঠাৎ একদিন শীতকালও এসে পড়বে। গায়ে হালকা গরম জামা চড়াতে শুরু করার পরই দেখবেন ঠোঁটও চড়চড় করে ফাটতে শুরু করেছে। সেই সাথে ত্বকেরও দফারফা! ত্বক রুক্ষ হতে শুরু করবে, আপনিও ত্বককে রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে যাবেন।
কোন ময়েশ্চারাইজার আপনার স্কিনের সাথে স্যুট করল তাই নিয়ে গুচ্ছ এক্সপেরিমেন্ট করার পর যখন ফাইনালি শীতকালটা চলে যাবে, দেখবেন আপনার ত্বকের বারোটা কেন, পুরো একটা বেজে গেছে! একগাদা প্রোডাক্ট ইউজ করার পর আপনার সুপার-সেনসিটিভ স্কিন নিয়ে তখন দেখবেন ডাক্তারের পেছনে ছুটছেন! কিন্তু এমনটা যদি হয় বলুন তো, শীত এলো, শীত গেলও, অথচ আপনার ত্বক আগের মতোই জেল্লাদার চকচকে মাখনের মতোই রয়ে গেল—তাহলে? আজ্ঞে হ্যাঁ বন্ধুরা। এবার দাশবাসের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য তাই নিয়ে এলাম শীতের স্পেশাল ফাটাফাটি স্কিনকেয়ার টিপস।
শীত শীত ভাব, জেল্লার অভাব?
শীতকাল মানেই কি আপনার স্কিনের ক্লিন বোল্ড হবার দিন চলে আসে বুঝি? আসলে শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে। আর এইসময় আমরা জল এমনিতেই কম খাই। মোটকথা সব মিলিয়ে শীতকাল মানেই রুক্ষ শুকনো একটা ব্যাপার। তাই আপনার ত্বকও এইসময় তার স্বাভাবিক জেল্লা হারিয়ে ফেলে। ভাবুন, গরমকাল এলেই যাদের ত্বক থেকে তেল চুয়িয়ে গড়াতে থাকে, তাদেরও এই ভয়াবহ শীতকালে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ গোছের অবস্থা হয়। আর ম্যাড়মেড়ে ত্বকে শীতের পার্টি আর পিকনিক? মনে করলেই দিনটা মাটি! তার থেকে এবার শীতের আগে থেকেই ত্বকের স্পেশাল যত্ন নেওয়া স্টার্ট করে দিন দেখি!
ভালো দেখে ময়েশ্চারাইজার বাছুন হুম।
এই পার্টটি কিন্তু গভীর চিন্তার। এবং গোটা শীতকাল জুড়ে আপনার ত্বককে দীপিকার মতো গ্লোয়িং রাখারও এটাই প্রধান টোটকা। ময়েশ্চারাইজার কিন্তু খুব যত্ন নিয়ে বাছুন। নর্মাল সময়ে যেরকম ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন, তার থেকে ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এই সময়ে, যা আপনার ত্বকের রুক্ষতায় বাড়তি পুষ্টির যোগান দিতে পারবে ও ত্বককে হাইড্রেট রাখবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন এমন ময়েশ্চারাইজার বাছতে যাতে সেরামাইড থাকে আর কিছু এসেনশিয়াল আর হেলদি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো অবশ্য এমনি গরমে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়। কিন্তু শীতকালে তার অন্য ব্যবস্থা করতে হয়। রাতে শোবার আগে বা মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার সবসময় দিন, নয়ত কিন্তু আপনার ত্বকের বারোটা বেজে যাবে!
বডি লোশন ভুলেছেন নাকি?
আপনার ত্বককে মাথা টু পা শীতকালে পারফেক্ট রাখতে এটা কিন্তু মাস্ট। ওই শুকনো, খড়ি ওঠা চামড়ায় একটুখানি জাস্ট ঢালুন আপনার পছন্দের ব্র্যান্ডের বডি লোশন। বডি লোশনে থাকা ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে পুষ্টি তো দেবেই, আর সেইসাথে বাইরের ধুলোবালির হাত থেকেও বাঁচাবে।
ঘন ঘন এক্সফোলিয়েট? একদম না!
শীতকালের রুক্ষতায় এমনিতেই আপনার ত্বকের দফারফা হাল। তারপর পাকামো করে এক্সফোলিয়েট করে আর ব্যাতিব্যস্ত করে তুলবেন না। দোহাই। হ্যাঁ। মাঝে মাঝে শুকনো মরা চামড়া, মরা কোষকে ঝেটিয়ে বিদায় করাই অবশ্য ভালো, কিন্তু জানেন তো এক্সফোলিয়েট ঘন ঘন করলে তা স্কিনকে রাফ করে দেয়। সপ্তাহে একদিন করুন। ত্বকে রক্ত চলাচলও ভালো হবে, আর ত্বক পরিষ্কারও থাকবে! তবে এক্সফোলিয়েট করে বডি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ইউজ করতে ভুলবেন না।
ভেতর থেকে ত্বককে আর্দ্র রাখুন
যতই দামী দামী ক্রিম-ট্রিম লাগান, ত্বকের জেল্লা কিন্তু খুলবেই না ভালো করে না খেলে। শীতের স্পেশাল ডায়েট চার্টে এবার একগাদা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যুক্ত ফল আর সবজি খান। বেদানা, বেরি, কুমড়ো খান রোজ। এগুলো আপনার ত্বককে ভেতর থেকে জেল্লাদার করবে আর দেখবেন আয়নার সামনে দাঁড়ালেই বয়সটা কেমন পাঁচ বছর কম কম লাগবে!
শীতকালের সহজপাঠ
আর ঘন ঘন মুখ ধোবেন না। গরমকালের মতো যদি ঠাণ্ডা জল দিয়ে ঘন ঘন মুখ ধুতে শুরু করেন, তাহলে তার ফল মোটেই সুবিধার হবে না। একে শীতকাল, তায় ঠাণ্ডা জল—অতো সয় নাকি? আবার তাই বলে গরম জলও ব্যবহার করবেন না। ওতে কিন্তু আপনার মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে যেতে পারে। তখন আমাদের দোষ দেবেন না। আর শীতের সাবান তো! ওটাও একটু সাবধানে বাছুন। ঘন ঘন সাবান ব্যবহার করলেও কিন্তু আপনার ত্বকের বারোটা বাজতে পারে। সাবান মাখুন, কিন্তু ওতেও যেন ময়েশ্চারাইজার থাকে।
ব্যাস! তাহলে আর কি? এবার শীতের শুরু থেকেই কোমর বেঁধে লেগে পড়ুন তো, যাতে আপনার ত্বকের একটা বাজাটা অন্তত বন্ধ হয়। আর আলসেমি না করে যা বললাম তাই করুন। আফটার অল ইট’স পার্টি টাইম। আপনাকে তো পার্টি রেডি থাকতেই হবে। তাই না?
মন্তব্য করুন