শীতকাল মানেই শরীরে আলস্যের আগমন। সর্দিকাশি, হাতে পায়ে ব্যথা, সকাল সকাল গরম লেপ ছেড়ে ওঠার যন্ত্রণা, কাজে-কর্মে-আলস্য সব মিলে একেবারে জবুথবু অবস্থা। কিন্তু তাই বলে তো আর আপনার রোজনামচা থেমে থাকতে পারে না।
তাই শীতকালেও যদি নিজেকে একেবারে ফিট এবং অ্যাক্টিভ রাখতে চান এবং শরীর থেকে যদি আলস্য দূর করতে চান, তাহলে কিন্তু যোগাসনকে নিজের ডেলি রুটিনে ইনক্লুড করতেই হবে। এর ফলে যেমন আপনার শরীর সচল থাকবে তেমনি হাতে পায়ে কোমরে ইত্যাদি ব্যথাও কিন্তু শীতের আমেজকে নষ্ট হতে দেবে না। তাহলে আজকে ছোটকে দেখে নিন শীতকালে ঠিক কোন কোন যোগাসন আপনাকে ফিট এবং ফাইন রাখবে শীতকালেও।
১. ত্রিকোনাসন
আমাদের মধ্যে যাদের বয়স একটু বেশী তাঁদের কিন্তু শীতকালে শরীরে যেমন হাত পা, কোমর, ঘাড় ইত্যাদি স্থানে ব্যথা হতে দেখা যায়। এই আসন কিন্তু আপনাকে এই ধরনের ব্যথা-বেদনা থেকে আরাম দেবে। তবে এই যোগাসন কিন্তু আমাদের সকলের জন্যই খুব উপকারী। কারণ এটি আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায়, বিশেষ করে যারা কনস্টিপেশনের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য এই আসন অত্যন্ত উপকারী।
পদ্ধতি
১. প্রথমে সোজা হয়ে দাড়াতে হবে। এরপর পা দুটি ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।
২. এবার হাত দুটি দু পাশে লম্বা করে দিন।
৩. এবার আস্তে আস্তে পাশের দিকে শরীরকে বেঁকিয়ে বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের আঙুলকে স্পর্শ করুন। এবং ডান হাতটি অপরের দিকে একেবারে সোজা করে রাখুন। মাথা আপনার ডান হাতের দিকে থাকবে। পায়ের হাঁটু দুটি ভাঙা চলবে না। এই অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১০ অবধি গুনে একেবারে দুটি হাতকে না ভেঙে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
৪. এবার একই ভাবে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের আঙুল স্পর্শ করুন।
৫. পর পর তিনবার এই আসনটি করুন।
৬. মাইগ্রেন বা লো ব্লাড প্রেসার থাকলে বা কারোর যদি ঘাড়ে বা কোমরে কোনো ব্যথা লেগে থাকে তাহলে সেই অবস্থায় এই আসন না করাই ভালো।
২. ভুজঙ্গাসন
এই আসন আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলকে খুব ভালো ভাবে সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি আমাদের শরীরকে বিশেষ করে কোমরের অংশটির স্ট্রেংথ বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়িয়ে তোলে। তাই শীতকালের আলস্য কাটানোর জন এই যোগাসনটি করুন।
পদ্ধতি
১. প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনার পায়ের পাতা দুটি যেন মাটিতে স্পর্শ করানো থাকে এবং আপনার কপাল মেঝেতে স্পর্শ করানো থাকে।
২. আপনার পা দুটিকে পাশাপাশি রাখুন এবং আপনার গোড়ালি দুটি যেন পরস্পরের স্পর্শে থাকে।
৩. আপনার হাতের পাতাদুটিকে উল্টো করে আপনার কাঁধের কাছে রাখুন এবং আপনার কনুই দুটি যেন সমান্তরাল থাকে।
৪. এবার লম্বা শ্বাস নিয়ে হাতের পাতার ওপর ভর করে আপনার দেহের অপরের অংশটি সামনের দিকে তুলুন। আপনার কোমর কিন্তু একই স্থানে থাকবে এবং মাথা ওপরের দিকে থাকবে। এই অবস্থায় যতটা আপনার শরীরকে স্ট্রেচ করানো সম্ভব ততটাই স্ট্রেচ করুন। পুরোপুরি স্ট্রেচ হয়ে গেলে ১০ অবধি গুনে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে ৩ বার পর পর আসনটি করুন।
৩. সলভাসন
এই আসন আমাদের নার্ভ এবং মাংশপেশীকে সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি আমাদের কাঁধ ও ঘাড়ের স্ট্রেংথ বাড়িয়ে তোলে, এছাড়া আমাদের পেটের ভেতরের অর্গানগুলিকে ভালো রাখে।
পদ্ধতি
১. উপুড় হয়ে শুতে হবে প্রথমে|
২. আপনার থুতনিটি মাটিতে স্পর্শ করান। পা দুটি সোজা রাখুন এবং গোড়ালি দুটিকে স্পর্শ করান। হাতের পাতা উল্টো করে থাইয়ের নিচে সোজা করে রাখুন।
৩. এবার প্রথমে বাঁ পা হাঁটু না ভেঙে সোজা করে সামান্য ওপরের দিকে তুলে ৫ অবধি গুনুন এবং নামিয়ে নিন। একই ভাবে ডান পা-টি ওপরের দিকে তুলে নামিয়ে আনুন। এবার দুটি পা একসাথে ওপরের দিকে তুলুন। ১০ অবধি গুনে পা দুটি নামিয়ে আনুন। মনে রাখতে হবে হাতের ওপর ভর দিয়ে কোনো মতেই পা তুলবেন না। এই ভাবে পর পর তিনবার আসনটি করুন।
৪. পদহস্তাসন
আপনার শরীর ও মন দুটিকেই একেবারে তরতাজা করে দেবে এই আসন। এছাড়া হজম শক্তি বাড়িয়ে তুলতেও এই আসন খুব কার্যকরী।
পদ্ধতি
১. প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান পা দুটি জোড়া করে এবং হাত দুটি দুপাশে রাখুন।
২. দীর্ঘ প্রশ্বাস নিতে নিতে দুটি হাত দু’পাশ দিয়ে ওপরের দিকে তুলুন, পাতা দুটি জোড়া করে পেছনের দিকে কিছুটা বেন্ড হয়ে যান। ১০ অবধি গুনে আবার দীর্ঘ প্রশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকুন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে। আপনার হাতের পাতা দিয়ে নিচের মেঝে স্পর্শ করুন হাঁটু না ভেঙে এবং আপনার মাথা হাঁটুতে স্পর্শ করানোর চেষ্টা করুন। এই ভাবে ১০ অবধি গুনুন। এবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন। একই ভাবে পরপর তিনবার এই আসনটি করুন।
৫. পশ্চিমোত্থাসন
এই আসন পদহস্থাসনের পরে করা উচিত। এটি স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে এবং আমাদের দেহের স্টিফনেস দূর করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি
১. প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। আপনার শিরদাঁড়া যেন সোজা থাকে। এবার একে একে দুটি পা সামনের দিকে সোজা করে ছড়িয়ে দিন। পায়ের পাতা দুটি যেন পরস্পরের স্পর্শে থাকে।
২. এবার আপনার হাত দুটি দীর্ঘ প্রশ্বাসের সাথে দু’পাশ থেকে মাথার ওপরের দিকে সোজা করে তুলুন। শিরদাঁড়া যত সম্ভব সোজা সোজা স্ট্রেচ করে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকে হাতের পাতা দুটি দিয়ে পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন এবং মাথা হাঁটুতে লাগানোর চেষ্টা করুন হাঁটু না ভেঙে। ১০ অবধি গুনুন। এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন ধীরে ধীরে। এই আসনটিও পরপর তিনবার করে করতে হবে।
আমাদের শরীর ও মনকে অ্যাক্টিভ রাখতে যোগাসন কিন্তু ভীষণভাবে জরুরী| তার ওপর যদি সময়টা শীতকাল হয় তাহলে শরীরকে ফিট রাখতে এর থেকে ভালো ফর্মুলা কিন্তু আর কিছুই হতে পারে না। তাই প্রতিদিন সকালে বা রাতে খাবার আগে বা দুপুরে স্নানের আগে ৩০ মিনিট সময় বের করুন নিজের জন্য এবং যোগাসন নামক ফর্মুলাটি প্রয়োগ করুন। আর শীতকালেও থাকুন একেবারে ফিট এবং হেলদি।
মন্তব্য করুন