বিশ্বের সকল দেশেই পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি।কন্যাশিশু ও ছেলেশিশুর জন্মহার প্রায় সকল দেশেই সমান।তবুও কন্যাশিশুর সংখ্যা বেশি।যদিও অনেক কন্যাশিশুকে মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় নষ্ট করা হয়।এশিয়ার কয়েকটি দেশে এ ধরনের ঘটনার কথা শোনা গেছে।গবেষণায় দেখা গেছে,পুরুষের মৃত্যুহার নারীদের তুলনায় অনেক বেশি।কারণ পুরুষদের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।নারী-পুরুষের জীবন-যাপনের ধরনও একটি বিষয় যে কারণে পুরুষের মৃত্যুহার অনেক বেশি।খাদ্যাভ্যাস,কর্মজীবন এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নারী-পুরুষের আয়ুর মাঝে অনেক ব্যবধান তৈরি করে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া-তে অভিজ্ঞ গবেষকদের তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা থেকে জানা যায়,বিগত ১৮০০-১৯০০ সালের প্রথম দিকে জন্ম নেওয়া মানুষের মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়েছে।এর সাথে সাথে উন্নত খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।ফলে মৃত্যুর হার কমেছে,তবে নারীদের ক্ষেত্রে তা কমেছে অনেক দ্রুত।
জৈবিক কারণ
১.ভ্রুণগত কারণ
মাতৃগর্ভে পুরুষ ভ্রুণে পরিপূর্ণ গড়নের পরিপক্কতা আসে না।শিশু জন্মের পরও দেহের পরিপক্কতা আসতে অনেক সময় লাগে।অন্যদিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগের নারী ভ্রূণ মাতৃগর্ভ থেকে পরিপূর্ণতা পায়।ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়।এতে তাদের আয়ু দীর্ঘ হয়।
২.হরমোনগত পার্থক্য
নারী শিশুর দেহে থাইরক্সিন নামক হরমোন উৎপাদিত হয়।এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নারীদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।কিন্তু পুরুষদের হরমোনগুলো অনেকটাই অপরিণত থাকে।রোগ প্রতিরোধেও তাই কম সাহায্য করে।
৩.ক্রোমোজমের পার্থক্য
নারীদেহের ক্রোমোজোমে দীর্ঘজীবী টেলোমেয়ার নামক উপাদান থাকে। এটি ক্রেমোজোমকে সুরক্ষিত রাখে।দীর্ঘজীবী টেলোমেয়ার থাকার কারণে নারীরা বেশিদিন বাঁচেন।
৪.স্বাস্থ্য সচেতনতা
নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবেন।নিয়মিত দেহকে সুস্থ রাখা নারীদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ,শরীরচর্চায় নারীরা অধিক সচেতন।পুরুষের মতো নারীরা খাবার নিয়ে অসচেতন নয়।একজন পুরুষ দৈনিক প্রায় ২০-৩০টি সিগারেট খান যা মৃত্যুর কারণ হয়।
৫.শক্ত সামাজিক বন্ধন
একটি গবেষণায় জানা যায়,যারা সামাজিক যোগাযোগ করে,তারা অনেক বেশিদিন বাঁচেন।নারীরা সাধারনত পুরুষদের তুলনায় বেশি সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করে।
৬.ঝুঁকিপূর্ণ জীবন-যাপন
পুরুষদের তুলনায় নারীদের জীবনযাপন কম ঝুঁকিপ্রবণ।নারীরা পুরুষের তুলনায় কম মদ্যপানে আসক্ত।ধুমপান ও মদ্যপান দেহে মারাত্মক সব রোগ সৃষ্টি করে যা পুরষের আয়ু কমিয়ে দেয়।এছাড়া সীমান্ত প্রহরী,ভারী শিল্প কারখানার শ্রমিক,নির্মাণশিল্প ইত্যাদি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোতে পুরুষরা বেশি ভূমিকা রাখেন।এগুলোতে তারা প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান।
৭.হিউম্যান জিনোম
নারীরা বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং হিউম্যান জিনোম পদ্ধতিতে অবদান রাখে যা নারীদের দীর্ঘজীবী করতে সাহায্য করে বলে সাম্প্রতিক কিছু গবেষক মত প্রকাশ করেছেন।
৮.শারীরিক পরিশ্রম
নারীরা বেশি শারীরিক পরিশ্রমী।পুরুষরা নারীদের তুলনায় কম পরিশ্রম করে থাকে।হাঁটা-চলা,ব্যায়াম নারীরা বেশি করে।তাই নারীরা দীর্ঘজীবী হয়।
৯.রোগব্যধির ঝুঁকি
পুরুষরা স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক অসচেতন।এছাড়া তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।অধিকাংশ সময় তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হন।তাদের অসচেতন খাদ্যাভ্যাস তাদেরকে মৃত্যুর নিকটবর্তী করে।
১০.মানসিক কারণ
পুরুষরা প্রায় সময় বিভিন্ন মানসিক চিন্তায় ভোগে।এটি তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।বিভিন্ন দুশ্চিন্তার কারণে তাদের ব্রেইনস্ট্রোক হতে পারে,এটি দীর্ঘজীবনের স্বপ্ন নস্যাৎ করে দেয়।
এই সমস্ত কারণেই হয়তো বলা হয় যে মেয়েদের কই মাছের জান।কিন্তু, পুরুষদেরও বর্তমানে আয়ুর পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে তাদেরও জীবনের মেয়াদ এমন কিছু কম নয়।তবে পুরুষদের নিজেদের দিকে একটু খেয়াল রাখাই উচিৎ।
মন্তব্য করুন