মক্কা মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক অতি পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতি বছর হজযাত্রা উপলক্ষ্যে বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে। বর্তমানে এই মসজিদের পুনর্নির্মাণ চলছে। আর, আপনারা কী জানেন যে এই পুনর্নির্মাণের কাজে আছেন আমাদেরই পাশের দেশ, বাংলাদেশের শ্রমিকরা! এটা তাদের কাছে একটি বৃহৎ প্রাপ্তি, সম্মানও বটে। কিন্তু, কেন বাংলাদেশী শ্রমিক? মুসলমান প্রধান দেশতো আরও অনেক ছিল। আসুন, আমরা একবার এই নিয়ে আলোচনা করে দেখি।
সৌদি আরবে যাতায়াত আছে বাংলাদেশী মানুষের
১৯৮০ সাল থেকে একটা বড় সংখ্যার দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক সৌদি আরবে চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে সকল ধরনের বাংলাদেশী বাস করেন সৌদি আরবে ২.৫ মিলিয়ন তো হবেই। শ্রমিক ছাড়াও ছাত্র ও ধার্মিক মানুষরাও যান। অর্থাৎ সৌদি আরবে যাতায়াত আছেই বাংলাদেশী মানুষের, সেটা অনেকসময় বসবাসকারী হিসাবেও পরিগণিত হবার জায়গায় চলে যায়। বর্তমানে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন বাংলাদেশী শ্রমিক আছেন সৌদি আরবে।
রাজা সালমান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে মিটিং
বাংলাদেশ সৌদি আরবের অন্যতম প্রথম সারির শ্রমিক যোগানের দেশ। ২০০৭ সালে সৌদি আরবের ১.৫ মিলিয়ন ভিসা ইস্যু হয় যার ২৩.৫০ শতাংশ ছিল বাংলাদেশের শ্রমিকদের। এই যোগাযোগের একটা কারণ হতে পারে জুন মাসে সৌদি আরবের রাজা সালমান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে মিটিং হয় যাতে এই শ্রমিকদের নিয়ে নানা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। দু’তরফেই শ্রমিকদের থাকা, স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাই শ্রমিকদের পক্ষে সৌদি আরবে গিয়ে কাজ করাটা আপত্তির না হয়াটাই স্বাভাবিক।
মজুরী অনেক বেশি
বাংলাদেশ এখনও যে আর্থিকভাবে খুব স্বাবলম্বী তা নয়। শিল্প ব্যবস্থাও যে খুব উন্নত তা বলা যাবে না। তৃতীয় শ্রেনীর উন্নতিশীল দেশের শিল্প ব্যবস্থা যেমন হয়, শ্রমিকদের অবস্থা যেমন হয় বাংলাদেশেও তেমন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কম মজুরী, অনেকসময় দুর্ব্যবহার এই সব মিলে অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অন্যদিকে বাইরের দেশে গেলে টাকার পরিমান, থাকা-খাওয়া এইসব খানিক ভালো হতে পারে এটা বাংলাদেশের শ্রমিকদেরও বাইরে গিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করে।
তাছাড়া বাংলাদেশ তথা এই গাঙ্গেয় উপত্যকার যে আবহাওয়া তার সাথে যে শ্রমিকরা মানিয়ে নিতে পারছে তারা সৌদি আরবের ওই গরমের মধ্যেও মানাতে পারবে বলে ধরে নেওয়া যায়। ইরাক, ইরান সৌদি আরবের প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশ আর্থিকভাবে। তাই সেখানকার রাজনীতিতে শ্রমিক ব্যবস্থা হয়ত অনেকসময় সুগম নাও হতে পারে। অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক না এনে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনলে সৌদি আরব সরকারকেও অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় তাদের কম টাকা দিতে হবে। এই সৌদি আরব সরকারের পক্ষেও লাভজনক।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশী শ্রমিকদের সততা ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন, যারা সংখ্যায় সেখানে প্রায় ৩,৮০,০০০ মতো আছেন। এই প্রশংসাও বাংলাদেশী শ্রমিকদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়িয়েছে সৌদি আরবে। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষের ভাষা আন্দোলন ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি যে ভালোবাসা তা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটা সম্মানের জায়গা দিয়েছে। এই সম্মানের খানিক অংশীদার তো শ্রমিকরাও।
এই সব কারণেই হয়তো বাংলাদেশের শ্রমিকরা মক্কা মসজিদ পুনর্নির্মাণে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে আগে।
হালাল ও হারাম মাংস এই দুইয়ের আক্ষরিক অর্থ জানা না থাকলে অবশ্যই তা জেনে রাখুন
মন্তব্য করুন