আপনার সকালটা,যে, পাতিলেবুর রস আর মধু গরম জলে মিশিয়ে খেয়ে শুরু হয় সেটা জানি। এটা খুবই ভালো অভ্যেস একটা। কিন্তু পাতিলেবুর উপকারিতা এখানেই শেষ হয়ে যায় না। আমাদের ত্বক আর চুলের যত্নে পাতিলেবু আমরা অনেকভাবে কাজে লাগাতে পারি। তাই বাজার থেকে সস্তায় পাচ্ছেন বলে এই ছোট ফলটিকে হেলাফেলা করবেন না। বরং আজ থেকেই পাতিলেবুকে আপনার ত্বক আর চুলের বিশ্বস্ত বন্ধু করে তুলুন।
কেন পাতিলেবু ব্যবহার করব
নাম পাতি হলেও কাজে কিন্তু পাতি নয় একদম। অন্য সব লেবুর মতো পাতিলেবুতেও আছে ভিটামিন-সি। আমরা সবাই জানি ভিটামিন-সি আমাদের ত্বকের জন্য কত ভালো। শুধু ভিটামিন সি’ই নয়, সঙ্গে আছে ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম। এছাড়াও লেবুতে আছে ফ্ল্যাভনয়েডস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। লেবু ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। একটি ১০০ গ্রাম লেবুতে ভিটামিন সি ৪০ মিলিগ্রাম, সুগার ৩ গ্রাম, ভিটামিন বি ৬০.০৪ গ্রাম, ক্যালোরি ১২ কিলোক্যালোরি। এছাড়া লেবু ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের প্রকোপ থেকেও আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
ত্বকের যত্নে পাতিলেবু
ত্বকের যত্নে লেবু আমরা নানাভাবে কাজে লাগাতে পারি। আসুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি পদ্ধতি।
ত্বকের রোদে পোড়া দাগ কমাতে
শীত হোক কি গ্রীষ্ম, রোদে আমাদের পুড়তেই হবে। আর তার ফলে আমাদের সাধের উজ্জ্বল রঙ হয়ে যাবে তামাটে, যাকেই আমরা বলি রোদে পোড়া দাগ। কিন্তু লেবু দিয়ে আপনি সুন্দরভাবে এই দাগ তুলে ফেলতে পারেন। লেবু আসলে একটা প্রাকৃতিক ব্লিচ, যা অনায়াসেই দূর করতে পারে এই পোড়া দাগ।
উপকরণ
সমপরিমাণ লেবু আর শশার রস।
পদ্ধতি
কয়েক টুকরো শশা ব্লেন্ড করে নিন। এবার এটা একটা পরিষ্কার কাপড়ে নিয়ে চিপে রস বের করে নিন। এর সাথে এবার পাতিলেবুর রস মেশান। ভালোকরে মেশান। এই মিশ্রণটা এবার পোড়া জায়গায় লাগিয়ে রাখুন দিনে অন্তত দুবার। ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই হবে। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে। সপ্তাহে তিন দিন মতো করুন। দেখবেন দু’সপ্তাহ পর থেকে দাগ হাল্কা হতে শুরু করছে।
এক্সফোলিয়েট করতে
স্কিন এক্সফোলিয়েট নিয়মিত করা খুবই প্রয়োজন। তাহলেই ময়লা ত্বক থেকে দূর হয়, উজ্জ্বলতা আসে ত্বকে।
উপকরণ
৩ চামচ বাদামী চিনি, ১টা ডিমের সাদা অংশ, ২ চামচ লেবুর রস।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ ভালো ভাবে মেশান। এবার এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ, হাত, গলা সব ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন। সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারবেন স্কিন কি ভালোভাবে পরিষ্কার হচ্ছে। এটা পারলে রোজ করুন নয়তো একদিন বাদ দিয়ে দিয়ে করুন।
উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবুর ফেস মাস্ক
উজ্জ্বলতা তো আমরা সবাই চাই। ত্বক উজ্জ্বল হলে যে কোনো রঙের পোশাক, যে কোনো মেকআপই আমাদের মানিয়ে যায়। তাই স্কিন টোন ফর্সা হোক কি শ্যামলা, উজ্জ্বল হতে লেবু ব্যবহার করুন।
উপকরণ
৪ চামচ লেবুর রস, ৬ চামচ টম্যাটোর রস, চন্দন বাটা।
পদ্ধতি
চন্দন বাটা একটু বেশি করে নিন। তার সাথে লেবুর আর টম্যাটোর রস মেশান। মিশ্রণটা মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে। এটা রোজ মাখবেন না, কারণ চন্দন স্কিন ড্রাই করে দেয়।
ব্রণ দূর করতে
ব্রণ একটা খুবই কমন সমস্যা। এটা আমাদের মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তাই ব্রণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূর করতে হয়। আর দূর করতে অব্যর্থ কাজ দেয় লেবুর রস আর মধু। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ব্রণ শুকাতে আর মধুতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ইনফেকশন হতে দেয় না।
উপকরণ
পরিমাণমতো লেবুর রস, ২ চামচ মধু।
পদ্ধতি
লেবুর রস আর মধু ভালো ভাবে মিশিয়ে ব্রণ যে যে অংশে হয়েছে তাতে লাগান। খানিকক্ষণ রাখুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি কমে আসছে।
তেলতেলে ভাব কমাতে
মুখ যদি তেলতেলে হয়, তাহলে বাইরের ধুলো, ময়লা বেশি জমে। তার ফলে বেশি করে মুখ অনুজ্জ্বল হয়ে যায়। তাই তেলতেলে ভাব কমাতে ব্যবহার করুন লেবুর রস।
উপকরণ
পরিমাণমতো লেবুর রস, মুলতানি মাটি।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে একটা স্মুদ পেস্ট বানান। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট মতো। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটি তেলতেলে ভাব কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন করুন।
কনুইয়ের কালো দাগ কমাতে
আমাদের কনুইতে অনেক সময় কালো দাগ হয়ে যায়। কিছুতেইএই দাগ যায় না। কিন্তু এবার চলে যাবে, পাতিলেবু ব্যবহার করলে।
উপকরণ
১ চামচ নুন, সামান্য অলিভ অয়েল, লেবুর রস।
পদ্ধতি
তিনটি উপকরণ মিশিয়ে কনুইতে লাগান। এবার একটা লেবুর অর্ধেকটা নিয়ে ঘষতে থাকুন। মিনিট পাঁচ ঘষে তুলে ফেলুন। কয়েক সপ্তাহে দাগ কমতে শুরু করবে।
চুলের যত্নে পাতিলেবু
ত্বকের মতো চুলের যত্নেও বেশ উপকারি পাতিলেবু। তবে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
খুশকি দূর করতে
মাথায় খুশকি থাকলে খুবই সমস্যা তাই না! আর শীতকালে এই সমস্যা বাড়ে বই কমে না। কিন্তু পাতিলেবু ব্যবহার করে আপনি খুশকি অনায়াসেই দূর করতে পারেন।
উপকরণ
পরিমাণমতো অলিভ অয়েল, লেবুর রস।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে আর পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ২৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। দেখবেন খুশকি আস্তে আস্তে কমে যাবে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য
পাতলা সরু চুল আমাদের কারোরই ভালো লাগে না। একরাশ ঘন কালো চুলের স্বপ্ন তো সবারই থাকে। তাই চুল যাতে না উঠে যায়, চুলের যাতে বৃদ্ধি ভালো হয়, তার জন্য লেবুর রস ব্যবহার করুন।
উপকরণ
পরিমাণমতো নারকেল তেল, লেবুর রস।
পদ্ধতি
রাতে শোবার আগে দুটি উপাদান মিশিয়ে চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগান। রাতে না হলে স্নানের অন্তত তিন ঘন্টা আগে লাগান। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। দেখবেন আপনার চুল কি সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে। ভালো ফল পেতে এটা এক দিন অন্তর ব্যবহার করুন।
চুলের আগা ফাটা বন্ধ করতে
অনেকেরই কমন সমস্যা হল চুলের আগা ফাটা। এটা চুল পড়ার থেকেও আরও বাজে। একে তাই আগা থেকেই বন্ধ করুন, লেবুর রসের সাহায্যে।
উপকরণ
পরিমাণমতো লেবুর রস, জলপাই তেল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ মিশিয়ে চুলের আগায় লাগাতে হবে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে। সপ্তাহে একদিন করলেই হবে।
তাহলে আজ আপনারা দেখে নিলেন তো পাতিলেবু কিভাবে আমাদের চুল আর ত্বকের সার্বিক যত্নে আমরা ব্যবহার করতে পারি। এবার থেকে তাহলে পাতিলেবু আপনার দৈনন্দিন রূপচর্চার তালিকায় যোগ করেই নিন। আর কেমন আছেন তা কিন্তু আমাদের জানাতে ভুলবেন না।
মন্তব্য করুন