বাড়িতে সকলের খাওয়া হলে তারপর খেতে বসা, খেতে বসে তরকারি বা ভাত কম পড়লে আগের দিনের বাসি খাবার খেয়ে ফেলা, বা সারাদিনের কাজের ফাঁকে কম জল খাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে একজন গৃহবধূর শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিনারেলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
আপাতভাবে আপনার মনে হতে পারে আপনার বাড়ির গৃহবধূটি তো সারাক্ষণ বাড়িতেই থাকে, তার আর আলাদা করে ডায়েট প্ল্যানের আর দরকার নেই। কিন্তু গৃহবধূদের একটি ডায়েট প্ল্যানের মধ্যে থাকা ভীষণ জরুরী।
কেন এই ডায়েট প্ল্যান জরুরী?
আমাদের শরীরটি বাইরে থেকে যতটুকু দেখা যায় সেটাই সব নয়। আদতে আমাদের শরীর আমাদের সুস্বাস্থ্যের পরিচয় দেয়। আর এর জন্য সঠিক পুষ্টি এবং ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা সঠিক ডায়েট প্ল্যানের মধ্যে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কী এই ডায়েট প্ল্যান?
এটি এমন এক খাবার তালিকা যা আপনাকে সুসংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় কোনও পুষ্টি উপাদান যাতে মিস না হয় তার জন্যই প্রয়োজন একটা পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে যাওয়া। সময় ও পরিমান মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও কিছু নিয়ম মেনে চলা।
কীভাবে করবেন এই ডায়েট প্ল্যান?
সুস্থ থাকতে এমন কোনও ফল বা সবজী বেছে নেবেন না, যা আপনার অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রোকোলি বা অ্যাভোকাডো আপানাকে খেতেই হবে এমন কোনও মানে নেই, প্রয়োজনে বেছে নিন তার বিকল্প কোনও খাবার, যা সহজেই আপনি আপনার নিকটবর্তী বাজারে পাবেন। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক একজন গৃহবধূর ডায়েট প্ল্যান কী হতে পারে। এখানে রইল একজন গৃহবধূর এক সপ্তাহের ৬দিনের ডায়েট প্ল্যান। সপ্তম দিনটি আপনার পরিবারের জন্য রাখুন, সেদিন যা মন চায় খান।
১) প্রাতঃরাশ
প্রাতঃরাশের আদর্শ সময় সকাল ৮-৮.৩০। কিন্তু একজন গৃহবধূর সকালের খাবার খেতে ১১টা বেজে যায়। কিন্তু সকালের খাবারে এমন কিছু খান যা বানাতে খুব কম সময় লাগে, যেমন- দুধ-কর্নফ্লেক্স, জলে ভেজানো শুকনো ফল, ওটস বা ডিমসেদ্ধ। এরপর দেখবেন কাজের ফাঁকে ঠিক ১১টা নাগাদ আপনার বেশ খিদে পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের এক একদিন এক একরকম খাবার খেতে পারেন যেমন ধরুন-
- পরোটা (কোনও সবজী বা ছাতুর পরোটা), সঙ্গে দই
- অমলেট ও পাউরুটি
- পোহা বা উপমা এবং চাটনি
- স্যান্ডউইচ এবং চা বা গ্রিন টি
- পরোটায় মোড়া ভেজিটেবিল রোল (আপনার পছন্দের সবজী দিয়ে বানাতে পারেন)
- সঙ্গে খান জুস বা ডাবের জল
বিশেষ টিপস- প্রাতঃরাশ এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার মাঝে অন্তত একটি মরশুমি ফল খান। যেমন শীতের দিনে একটি করে কমলালেবু খান।
২) দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবার খেতে হবে ১-১.৩০এর মধ্যে। আর দুপুরের খাবারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান-
- রুটি বা ভাত, সবজী এবং দই
- বিনস, ভাত অথবা রুটি, দই, আচার
- ভাত বা রুটি, ছোলার ডাল, দই
- ভাত বা রুটি এবং মুরগী অথবা খাসির মাংস
- ভাত বা রুটি বা পাউরুটি, সোয়বিন, দই
বিশেষ টিপস- আপনি যদি ভাত খেতে ভালবাসেন কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে, সেক্ষেত্রে ব্রাউন রাইস খেয়ে দেখুন, প্রথম প্রথম ভাল না লাগলেও ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে।
৩) বিকেলের টিফিন
বিকেলের টিফিনের আদর্শ সময় হল ৪-৫.৩০। বিকেলের টিফিনে আপনি নিজের পছন্দ অনুসারে যা মন চায় তাই খেতে পারেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এগুলো খান।
- চা সাথে বিস্কুট
- চা সাথে মুড়ি
- ঘরে তৈরি ডায়েট মিক্সার
- ভাজা ছোলা এবং গুড়
- ফলের রস এবং বাদাম
৪) রাতের খাবার
চেষ্টা করুন সন্ধে সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতে। প্রথমে হয়তো একটু অসুবিধা হবে কিন্তু কয়েকদিন অভ্যেস করে দেখুন, কোনও অসুবিধাই হবে না। রাতের ডায়েটে থাকুক-
- রুটি এবং সবুজ শাকসবজী (আলু, বাধাকপি, কড়াইশুঁটি, গাজর, বীট)
- সিদ্ধ করা বা রোস্ট করা মুরগীর মাংস এবং সালাদ
- এক বাটি মুসুর ডাল এবং সালাদ
- রুটি ও ডিমের তরকারি বা সেদ্ধ ডিমও সালাদ দিয়ে খেতে পারেন
- কোনও একদিন রাতে খান শুধুই মরশুমি ফল এবং সবজী সেদ্ধ
- তবে যাই খান না কেন রাতের খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যেন কম থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
এ তো গেল খাওয়াদাওয়া। এর পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতে করুন জিম বা যোগ ব্যয়াম প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা করে। তবে কোনও সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
মন্তব্য করুন