ডায়মন্ড পেলে যেমন প্রতিটি মেয়েরই মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তেমনই ডায়মন্ড ফেসিয়াল ত্বককেও ডায়মন্ডের মত উজ্জ্বল করে তোলে। তাই ডায়মন্ড এখন শুধুই মেয়েদের সাজগোজের জন্য নয়, ত্বককে সুন্দর করে তুলতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
রূপচর্চার জগতে ডায়মন্ড ফেসিয়ালকে এখন বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কি কি উপকার পেতে পারি আমরা এই ফেসিয়াল থেকে? চলুন দেখেনি কেন এতো উপকারী ডায়মন্ড ফেসিয়াল।
১. স্কিনকে দারুণ এক্সফলিয়েট করেঃ
স্কিনকে ডায়মন্ডের মত চকচকে করে তুলতে এক্সফলিয়েট করা খুব দরকার। ডায়মন্ড খুব ভালো এক্সফলিয়েটর হিসাবে কাজ করে। এটা ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষের জন্ম দিতে সাহায্য করে। অন্যান্য যেকোনো এক্সফলিয়েটরের থেকে এটি অনেক ভালো কাজ করে। যেটির প্রভাব ত্বকে অনেকক্ষণ থাকে।
২. খুব ভালো অ্যান্টি এজিংঃ
ডায়মন্ড ফেসিয়াল করলে ত্বকের বয়সকে অনেকটাই কমিয়ে রাখা যায়। কারণ এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এছাড়াও বয়স বাড়লে আমাদের চোখের চারপাশ কুঁচকে যায়, ফলে খুব সহজেই মুখে একটা বয়সের ছাপ পড়ে। কিন্তু ডায়মন্ড ফেসিয়াল এতে অনেকটাই সাহায্য করে।
৩. ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও রোধ করেঃ
শুষ্ক ত্বক থেকে শুরু করে ত্বকে হোয়াইট হেডস বা ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা। কিংবা ট্যান পড়ে গেছে? তাহলে ডায়মন্ড ফেসিয়াল আপনার জন্য। এটা শুধু ত্বকের এই সমস্যাগুলো মেটাবে না, স্কিন টোনও উজ্জ্বল করবে।
৪. স্কিনকে ডিটক্সিফাই করেঃ
আপনাকে যদি রোজ বেরতে হয় তাহলে এই ফেসিয়াল আপনার স্কিনের জন্য খুব দরকার। কারণ রোজ বাইরে যাবার জন্য, আপনার স্কিনে ধুলো, ময়লা জমে। যেটা একটা ফেসওয়াশ দিয়ে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়না। এবং বাইরের দূষণ আপনার স্কিনের ক্ষতি করে। যেটা এই ফেসিয়াল রোধ করে। স্কিনকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ত্বকে জমে থাকা সমস্ত ধুলো, ময়লা, অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে। যার ফলে ত্বক এমনই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
৫. স্কিনকে রাখে টাইটঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিন ঝুলে যাবার প্রবনতা বাড়ে। স্কিন আর আগের মত টাইট থাকে না। কুঁচকে যেতে শুরু করে। তাই স্কিনকে আগের মত রাখতে ডায়মন্ড ফেসিয়াল দরকার। কারণ এটা স্কিনের কোলাজেন বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে স্কিন থাকে টাইট এবং সুন্দর।
৬. এটা আপনার ত্বককে তৈরি করেঃ
আমরা ত্বকের যত্নে অনেক রকমই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। কিন্তু সবটা কি আমাদের স্কিন নিতে পারে। আদৌ কি সঠিক কাজে আসে এসব? ঠিক এই জন্যই স্কিনকে তৈরি করা দরকার। যাতে অন্যান্য প্রোডাক্ট আমাদের স্কিনে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। আর এখানেই কাজে আসে ডায়মন্ড ফেসিয়াল। যেটা আপনার স্কিনকে তৈরি করে দেয়। ত্বকের যত্নে যাই ব্যবহার করুণ সেটি যাতে সঠিক কাজে আসে।
৭. স্কিনকে হাইড্রেট করেঃ
ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে তাকে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখাটাও খুব জরুরী। কারণ স্কিন শুকিয়ে গেলে উজ্জ্বলতো লাগেইনা বরং বেশ নির্জীব লাগে। আর এই কাজটা খুব ভালোই করে ডায়মন্ড। আপনার স্কিনকে রাখে হাইড্রেটেড ও ময়েশ্চারাইজড। যার ফলে স্কিন থাকে সফট ও উজ্জ্বল।
৮. রিজুভিনেট করেঃ
আপনার স্কিন যদি ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত থাকে বা কোন সমস্যা থাকে, তাহলে কখনোই স্কিন সুন্দর হবেনা। তাই স্কিনকে আগে ঠিক করা দরকার। ডায়মন্ড ফেসিয়াল ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে সারিয়ে তোলে এবং রিজুভিনেট করে। যার ফলে স্কিন হয়ে ওঠে ভেতর থেকে সুন্দর।
৯. রোমকূপ পরিষ্কার রাখেঃ
ত্বক ঠিকমত পরিষ্কার না হলে রোমকূপে ময়লা জমে এবং রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুখে ব্রন, রাশের মত নানান সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলি সহজে ঠিক হয়না। ডায়মন্ড ফেসিয়াল রোমকূপকে পরিষ্কার রাখে। ব্রন, রাশের হাত থেকে এটি ত্বককে দূরে রাখে।
১০. ত্বককে চকচকে করেঃ
আগেই বলেছিলাম ডায়মন্ডের মত চকচকে স্কিনের জন্য করতেই হবে ডায়মন্ড ফেসিয়াল। ডায়মন্ড ফেসিয়াল স্কিন টোন লাইট করে। ক্ষতিগ্রস্ত স্কিনকে সারিয়ে স্কিনে একটা সুন্দর গ্লো আনে। স্কিনকে ব্রাইট করে তোলে। ফেসিয়াল করার পরই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
বাড়িতে কীভাবে করবেন ডায়মন্ড ফেসিয়ালঃ
১. ডায়মন্ড ক্লিঞ্জারঃ
- ফেসিয়ালের প্রথম ধাপ হল ক্লিঞ্জার। যেকোনো ডায়মন্ড ফেসিয়াল কিটেই ক্লিঞ্জার থাকে। সেটি দিয়ে করে প্রথমে স্কিন পরিষ্কার করে নিন। আপানার স্কিনে জমে থাকা ধুলো, ময়লা সব পরিষ্কার করে দেবে।
- হাতে অল্প ক্লিঞ্জার নিন। সেটা হালকা হাতে মুখে ঘষুন। একদম হালকা হাতে ম্যাসেজ করে করে স্কিন পরিষ্কার করুণ।
- জাস্ট হালকা হাতে একটু ঘষে মুখ ধুয়ে নিন।
২. ডায়মন্ড স্ক্রাবঃ
- মুখ পরিষ্কার করার পর এবার স্ক্রাব করার পালা। ডায়মন্ড স্ক্রাবে ডায়মন্ড ডাস্ট মেশানো থাকে। যেটা স্কিনকে এক্সফলিয়েট করে।
- হাতে অল্প স্ক্রাব নিয়ে হালকা হাতে মুখ ম্যাসেজ করুণ।
- সার্কুলার মোশনে ম্যাসেজ করে গাল থেকে হাত ওপরের দিকে মানে কপালের দিকে টানুন।
- চোখের চারপাশটা বাদ দিয়ে করুণ।
- এইভাবে ৩-৪ মিনিট ম্যাসেজ করুণ। তারপর ধুয়ে নিন।
৩. ডায়মন্ড ম্যাসেজ জেলঃ
- মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার ও স্ক্রাব করে নেবার পর, এবার ম্যাসেজ জেল।
- হাতে পরিমাণ মত ম্যাসেজ জেল নিন। হালকা হাতে ম্যাসেজ করুণ। ঠিক যেভাবে স্ক্রবিং করেছেন।
- এটা ১৫ -২০ মিনিট করুণ। তারপর মুখ পরিষ্কার করে নিন।
৪. ডায়মন্ড ম্যাসেজ ক্রিমঃ
- জেলের মতই ম্যাসেজ ক্রিম দিয়ে ভালো করে ম্যাসেজ করুণ। আবারও হালকা হাতে। মনে রাখবেন মুখ ম্যাসেজ করার সময়ে কখনোই চাপ দিয়ে ঘষবেন না।
- এই ক্রিম ১৫ থেকে ২০ মিনিট ম্যাসেজ করার পর ধুয়ে ফেলুন। এটা ব্লাড সার্কুলেশনকে উন্নত করে।
৫. ডায়মন্ড ফেসপ্যাকঃ
- লাস্ট স্টেপ হল ফেসপ্যাক। ফেসপ্যাক ভালোভাবে ব্লেণ্ড করে নিন। তারপর মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে নিন।
তাহলে দেখলেন তো ডায়মন্ড ফেসিয়ালের ম্যাজিক? এটা আপনার স্কিনের জন্য কতটা ভালো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আর দেরি না করে একবার করে ফেলতেই পারেন ডায়মন্ড ফেসিয়াল। তারপর আপনার স্কিনও হবে ডায়মন্ডের মত চকচকে।
মন্তব্য করুন