কদিন বাদেই আসতে চলেছে গ্রীষ্মের দাবদাহ, সেই পরিবেশে গরমে ঘামে সবাই নাজেহাল তো হবেই সাথে রোদে পোড়া দাগ ছোপ ও চেপে বসবে আপনার ত্বকে। সেগুলো কাটিয়ে ত্বককে ঝলমলে উজ্জ্বল করে তুলতে বাজারের কসমেটিকস এর তুলনায় এমন এক প্রাকৃতিক উপাদান এর নাম বলবো যা আপনার রান্নাঘরে মজুত থাকেই থাকে।
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন! বেসনের কথাই বলছি। বেসন দিয়ে বানানো ফেসপ্যাক রেডিমেড ফেসপ্যাক গুলোর চেয়ে শতগুনে ভালো ও কার্যকরী ও সবধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। আর দেরি না করে তাই দেখে নিন বেসনের দশটি ফেসপ্যাক।
বেসন যে কারণে ফার্স্ট চয়েস হবে আপনার
- তেলের প্রকোপ কমায় ত্বক থেকে।
- শুষ্কতা দূর করে।
- মেচেতার দাগ সরাতে দারুন কাজে দেয়।
- স্কিনের লাবণ্য ও যৌবন ফিরিয়ে এনে এক প্রাণবন্ত লুক দেয়।
১) বেসন, হলুদ ও দই এর তৈরি ফেসপ্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ৩ টেবিলচামচ
- হলুদ ১ টেবিলচামচ
- দই লাগবে ৩ টেবিলচামচ মতো
পদ্ধতি:
- সব কটা উপাদান ভালো করে মেখে মুখে ও তার আসে পাশের অংশে লাগিয়ে নিন। যদি ট্যান এরিয়া থাকে সেই জায়গায় ও লাগান।
- ২০মিনিট মতো অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্নান এর আগে লাগালে ভালো হয়।
উপকারিতা:
সান ট্যানে ভালো কাজ দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে দই এর ল্যাকটিক এসিড।এছাড়াও ড্যামেজ ত্বক এর যত্নে ও ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে ভীষণই ফলদায়ী এই প্যাক।
২) বেসন ও কেশর প্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ২-৩ টেবিলচামচ
- কেশর ৩-৪টা
পদ্ধতি:
- বেসন ও কেশর সাথে নিয়ে ক্রাশ করে সামান্য জল মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন।
- এবার সেটা মুখে গায়ে বা হাতে লাগাতে পারেন। কিছুক্ষন পর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে দুবার লাগাতে পারেন।
উপকারিতা:
যেকোনো ত্বকের জন্যই লাগাতে পারেন। কোনো সমস্যা হবেনা। স্কিনকে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে ফলে আরো জেল্লাদার ও গ্লোয়ী হবে।
৩) বেসন ও দুধের সরের ফেসপ্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ২টেবিলচামচ
- ১ টেবিলচামচ দুধের সর
- ১ টেবিলচামচ হলুদ
পদ্ধতি:
সমস্ত উপকরণ দিয়ে মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট বানান ও স্কিনে এপ্লাই করুন।১০-১৫মিনিট মতো অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা:
শুস্ক ত্বকে আর্দ্রতার সঞ্চার করে। প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার এর কাজ করবে কথা দিলাম।ত্বকের নানা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
৪) বেসন ও কমলার ফেসপ্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ৩ টেবিলচামচ
- পরিমান মতো কমলালেবুর রস (৪-৫টেবিলচামচ)
পদ্ধতি:
- বেসনের সাথে কমলালেবুর রস অল্প অল্প করে যোগ করে মেশাতে থাকুন।বেশি শক্ত যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
- এবার মিশ্রণ স্কিনে দিন ও কাজ হয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফল পেতে নিয়মিত লাগান।
উপকারিতা:
ত্বকের গভীরে গিয়ে পুষ্টি যোগায় এই প্যাক। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী। তবে র্যাশ বেরোলে আর ব্যবহার করবেন না। রুক্ষ ত্বকে জৌলুস ফেরায় এবং কমলার এন্টি অক্সিডেন্ট ত্বক টানটান রাখে।
৫) বেসন ও মুলতানি মাটির প্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ১টেবিলচামচ মুলতানি মাটি
- ২ টেবিলচামচ দুধ
- ১টেবিলচামচ ও খানিকটা গোলাপজল
পদ্ধতি:
- সবগুলো উপাদান একটা পাত্রে নিয়ে আলগা ভাবে মেখে নিয়ে একটা ব্যাটার বানান। এবার সেটা ত্বকে লাগিয়ে আধঘন্টার মতো অপেক্ষা করুন।
- ত্বকের গভীরে চলে গেলে প্যাক ধুয়ে নিন ও তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন।
উপকারিতা:
তৈলাক্ত ত্বক যাদের তাদের জন্য খুবই কার্যকরী। স্কিনের এলার্জি প্রতিরোধ করে।ত্বকের ওপেন পোরস থাকলে সেটাও নির্মূল করে এক উজ্জ্বল ত্বক উপহার দেয়।
৬) টমেটো ও বেসনের প্যাক:
উপকরণ:
- একটি গোটা পাকা টমেটো
- বেসন ২ টেবিলচামচ
পদ্ধতি:
- টমেটো নিয়ে ছোট করে কেটে ফেলুন এবং ব্লেন্ডার এ ব্লেন্ড করে নিন।
- টমেটো পিউরি তৈরি হয়ে গেলে তার সাথে বেসন এড করে নিন।
- এবার পেস্টটা মুখের সর্বত্র লাগিয়ে নিন। পরে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা:
সপ্তাহে ২-৩ বার লাগান ফল পাবেন।সব ধরনের ত্বকে কাজ দেয় এটা।ত্বকে পিএইচ এর মাত্রা ধরে রাখে ও বলিরেখা কমিয়ে দেয়।
৭) অ্যালোভেরা ও বেসনের কামাল প্যাক:
উপকরণ:
- ২টেবিলচামচ বেসন
- ১ টেবিলচামচ অ্যালোভেরা নিষ্কাশিত জেল
পদ্ধতি:
- শীতকালে এই প্যাকটি খুবই কাজে দেয়। শুষ্ক ত্বকে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে।
- উপকরণ মিক্স করে ত্বকে লাগিয়ে দিন।
- ১০-১৫ ওয়েট করুন ও তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা:
অ্যালোভেরার ভেষজ গুন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।এতে থাকা ভিটামিন বি২ ,বি১২ ও ফলিক এসিড ত্বকের প্রদাহ রোধ করে।ফাইনলাইন্স এর দেখা আর মিলবেনা স্কিনে।এটি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও বটে।
৮) ডিম ও বেসনের প্যাক:
উপকরণ:
- ১টি গোটা ডিমের সাদা অংশ
- ১ টেবিলচামচ বেসন
- হাফ টেবিলচামচ মধু
পদ্ধতি:
- মধু ডিমের সাদা অংশের সাথে ভালো করে ফ্যাটান।
- তারপর তার সাথে দিন খানিকটা বেসন।
- মিশ্রণ তৈরি হলে সেটা মুখে সার্কুলার ভাবে লাগিয়ে নিন তবে বেশি ঘষবেন না।
- এবার শুকনো হয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুখ তরতাজা লাগবে।
উপকারিতা:
- ব্ল্যাক হেডস, ত্বকের কালচে ভাব ও দাগ ছোপ দূর করবে।
- ফুসকুড়ির মোকাবিলা করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
- মুখের অবাঞ্ছিত লোম ও দূর করবে এই প্যাক।
৯) বেসন ও এভোকাডোর প্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ২ টেবিলচামচ
- এভোকাডো ১ টা
পদ্ধতি:
- এভোকাডোর বীজ ভালো করে ছড়িয়ে ব্লেন্ড করে নিন। তাতে একে একে বেসন ও খানিকটা জল দিয়ে মাখিয়ে নিন।
- আপনার প্যাক তৈরি। এবার সেটা মুখে লাগিয়ে স্থির হয়ে থাকুন।
- আধঘন্টা পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
উপকারিতা:
ত্বকে খনিজের যোগান থাকে। টানা ব্যবহারে পেতে পারেন চমকপ্রদ ফল ও পরিবর্তন। ত্বকের মরা কোষ দূর করে ও রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
১০) বেসন ও পাকা পেঁপের প্যাক:
উপকরণ:
- বেসন ১ টেবিলচামচ
- পাকা পেঁপে কয়েক টুকরো
পদ্ধতি:
- পাকা পেঁপে মিক্সচার গ্রাইন্ডারে গ্রাইন্ড করে নিন।
- সেই পেস্ট এ বেসন দিয়ে দিন।
- এবার মিশ্রণটি ১০মিনিট চক্রাকারে মুখে মেসেজ করে নিন।
- সাথে কিছুটা মধু ও দিতে পারেন।
উপকারিতা:
ত্বকের মসৃণতা বাড়ায় ও সানবার্ন এর উপর পেঁপের প্যাপাইন উৎসেচক খুব ভালো কাজ করে। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূরীভূত হয়।
মন্তব্য করুন