আজকাল মানুষ তাদের যান্ত্রিক জীবনে ভীষণ ব্যস্ত। তাই প্রকৃতির কোলে একটু শান্তির নিশ্বাস, সবারই একান্ত কাম্য। কিন্তু ব্যস্তজীবনে এত সময় কোথায় ? যে, আপনি একটা লম্বা ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন বহুদূরে, প্রকৃতির স্বাদ নিতে। আর কাছাকাছি বেশিরভাগ জানা জায়গায় আপনার হয়তো ঘোরা হয়ে গিয়েছে।
একই জায়গায় বারবার ঘুরতে কারই বা ভালো লাগে বলুন তো ? আজকে আপনার এই সমস্যা সমাধান করার একটু চেষ্টা করা যাক। আজ আপনাদের জানাই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে, শীতকালের ছুটিতে একটা দিন, ঘুরে আসার মত ৪ টি অফবিট প্লেসেস।
চন্দ্রকেতুগড়
এই নামটি এসেছে রাজা চন্দ্রকেতুর নাম থেকে। ছয় যুগ ধরে যিনি এখানে রাজত্ব করেছিলেন। রাজা চন্দ্রকেতুর দ্বারা নির্মিত দুর্গটি, অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসাবে বিবেচিত। খনা ও মিহির, দুই পৌরাণিক চরিত্র কে উৎসর্গ করে নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও পীর গোরাচাঁদ এর দ্বারা নির্মিত বিখ্যাত অসমাপ্ত মসজিদ, আপনাকে ভারতের ইতিহাসের অনেক আছে কাছে নিয়ে যাবে। সেই ভাবে থাকার জায়গার সুবিধা না থাকায়, এই জায়গাটি একদিনে ঘুরে আসতে পারেন।
কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত, যেখানে মোটামুটি দু’ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন।উল্টোডাঙা বা ধর্মতলা থেকে বরাচম্পার বাসে, আপনি সহজেই এখানে পৌঁছে যেতে পারবেন।
গড় পাচকোট
আসানসোল থেকে পাচকোট পাহাড়ে্র তলদেশ দিয়ে মাত্র ১ ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করলেই আপনি পৌঁছে যাবেন এই জায়গার একটি মূল আকর্ষণ, প্রাচীন দুর্গের কাছে। পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার এই জায়গাটি, বর্গীরা আক্রমন করেছিল। বহু ঔষধি গাছ, যেমন আমলকি, বহেড়া, কালমেঘ, সর্পগন্ধা, যষ্টিমধু, নিম প্রভৃতির সন্ধান পাবেন এখানে।
জায়গাটি কলকাতা থেকে ২২২ কিলোমিটার দূরে। তাই শীতের উইকেন্ডে এখানে ঘুরে আসাই যায়। “দা ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড” নির্মিত টুরিস্ট বাংলোতে থাকার ভালো সুবিধা পাবেন।
টাকি
যা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা জেলার বসিরহাট পৌর নিগমের অন্তর্গত। ইছামতি নদীর ধারে বাগানবাড়িতে, কিছুটা সময় কাটাতে মন্দ লাগবে না। বাংলাদেশী সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই জায়গায়, ইছামতি নদীতে কাঠের নৌকা করে অন্য দেশের কিছুটা দর্শন করার সময়, ভিনদেশী মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎও হয়ে যাবে আপনার।
বাংলাদেশি পর্যটকরাও একইভাবে এই নদীতে আমাদের সীমান্ত দেখতে আসে।বিভিন্ন জমিদার বাড়ির পরিশিষ্ট, জেনারেল শংকর রায় চৌধুরীর আদিবাড়ি, কিছু মন্দির যেমন রামকৃষ্ণ মিশন, কুলেশ্বরী কালী মন্দির, তিনশো বছরের পুরনো জোড়া শিবমন্দির ইত্যাদি এখানকার দর্শনীয় স্থান।
এছাড়া বোট ভাড়া করে আপনি মাছরাঙ্গা দ্বীপে যেতে পারেন। এছাড়া রিক্সা ভাড়া করে গোলপাতা জঙ্গলের মনোরম পরিবেশ উপলব্ধ করতেও যেতে পারেন।থাকার জায়গা হিসাবে বাগানবাড়ি খুবই ভালো। আর হ্যাঁ, এখানে গেলে, বিখ্যাত ছানার মালপোয়া ট্রাই করতে ভুলবেন না।
শিয়ালদা স্টেশন থেকে হাসনাবাদ লোকাল ট্রেনে দু’ঘণ্টা অথবা ধর্মতলা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে আপনি টাকি স্টেশনে পৌঁছে যাবেন।
জুনপুট
পূর্ব মেদিনীপুরের কন্টাই শহর থেকে মাত্র ন-কিলোমিটার দূরে জুনপুট অবস্থিত। যেখানে পেটুয়াঘাট নামক জায়গায়, দেশপ্রাণ নামক খারি অবস্থিত। মূলত এটি একটি মোহনা অঞ্চল। যেখানে রসুলপুর নদী বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশেছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত অন্যতম একটি খারি হল জুনপুট।
এখানকার আরো একটি আকর্ষণ হল ৯৬ ফুট উঁচু দরিয়াপুর লাইট হাউজ। এখানে পর্যটকদের ওপরে ওঠার অনুমতি দেয়া হয়। এর ওপর থেকে সমুদ্র এবং তার চঞ্চল ঢেউয়ের আনাগোনার দেখার অনুভূতি নিঃসন্দেহে অন্যরকম। এখানে একমাত্র থাকার জায়গা হল জুনপুট রিসোর্ট। ঘরের ভাড়া পড়বে মোটামুটি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। শীতের মৌসুমে একদিনের জন্য এখানে আপনি ঘুরে আসতে পারেন।
মন্তব্য করুন