একপ্রকারের সবজি হল শসা। শসার ইংরেজি নাম Cucumber ও বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Cucumis sativus। শসাতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। জলের পরিমাণ বেশি থাকে শসাতে। একশ্রেণীর গোর্ড পরিবার কিউকারবিটাসের অন্তর্গত একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। শসার বাইরের রঙ সবুজ। পাকলে হলুদ রঙের দেখতে হয় শসা। শসার ভিতরের অংশ সাদা। এই অংশে বীচ থাকে। গরমের সময় বেশি পাওয়া যায় শসা।
প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় পুষ্টিকর উপাদান সমূহ থাকে সঠিক মাত্রায়। পুষ্টিগত মান শর্করা ৩.৬৩ গ্রাম, চিনি ১.৬৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যে ফাইবার ০.৫ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.১১ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬৫ গ্রাম। এছাড়া থাকে থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), ন্যায়েসেন (বি৪), প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (বি৯), ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা।
শসার চাষ
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করার সময়। এই সময় বীজ বপন করলে ফলন ভালো হয়। উর্বর দো-আঁশ মাটি ও অম্লক্ষারত্ব মাটি শসা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভাল জন্মায়। শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়ে থাকে। হেক্টর প্রতি ১০-২০ টন শসা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
শসার জাত
দুধরনের শসা হয়ে থাকে। পালা শসা ও ভুঁয়ে শসা। এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন জাত রয়েছে। সিকিম, বালাম খিরা, গোল খিরা, পুনা খিরা ইত্যাদি বহু স্থানীয় জাত আছে শসার। তবে জাপানিজ লং গ্রিণ, পূষা সংযোগ, স্ট্রেট এইট, এই তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাতের শসা।
শসার গুনাগুণ
শশার ভিতরের জলীয় অংশ আছে। যা শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। নিয়মিত শশা খেলে কিডনীতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। শশা আমাদের দেহে জলের অভাব পূরণ করে অনায়াসে। কারন শশার খাদ্য উপাদানের মধ্যে ৯০ ভাগই হচ্ছে জল। দৈনিক চাহিদার সমপরিমাণ জল পান করতে না পারলে শশা খেয়ে জলের সেই অভাব পূরণ করা সম্ভব।
শশা আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাইরে রোদের কারণে সূর্যের তাপে শরীরের চামড়ায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকে শশা আমাদেরকে অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে। এজন্য শশা চাক চাক করে কেটে শরীরে রোদে পোড়া অংশে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। যে কোন দাগ থেকে মুক্তি পেতে শসার রস লাগালে সেই দাগ চলে যায়।
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন দরকার হয় তার অধিকাংশের অভাব পূরণ করে থাকে শশা। ভিটামিন এ, বি ও সি–যেগুলো শরীরে শক্তি উৎপাদন ও শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে। তার অধিকাংশই পূরণ করে থাকে শশা। শশায় রয়েছে স্টেরল নামের একধরণের উপাদান যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। স্টেরল মুটিয়ে যাওয়া রোধ করতেও সাহায্য করে। শশায় রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সলিকন। তাই শরীরে এসবের অভাবজনিত সমস্যার মূল সমাধান হলো শশা।
শশায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জল। অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে শসাতে। তাই যারা শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাদের জন্য শশা একটি খুবই উপকারি। শশা মুখের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংস করে মুখকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। এক টুকরো শশা মুখের ভিতর পুড়ে জিভ দিয়ে মুখের ভিতরের অংশে ঘষলে দাঁত মুখের ভিতরে থাকা জীবাণুরা মরে যায়। ফলে নিঃশ্বাস দুর্গন্ধ মুক্ত হয়। শশায় আছে সালফার ও সিলিকা নামের দুটি উপাদান। যা আমাদের মাথার চুল ও নখকে উজ্জল ও শক্ত করে তোলে। এগুলো চুলের বৃদ্ধিকেও তরান্বিত করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি শশা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্যও সমানভাবে উপকারি। লো ক্যালরি এবং ডায়েট্রি ফাইবারে সমৃদ্ধ এই সবজি। তাই রূপসচেতন নারীদের ডায়েট চার্টে শসা সবার প্রথমে থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শশা খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে থাকে শসা। এটি ত্বকের ওপেন পোর কন্ট্রোল করতে বেশ উপকারি। শশার ৯৫% উপাদানই হচ্ছে জল। এর ফলে শশা খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড থাকে। শশার বীচ বা দানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং পটাশিয়াম যা ফাইন লাইন্স, রিংকেল সহ বার্ধক্যের বিভিন্ন ছাপ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে। মুখের বলিরেখা দূর করে।
গাজর খাওয়ার আগে জেনে নিন কেন গাজর খাওয়া এত উপকারি শরীরের জন্য
মন্তব্য করুন