সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, শুধু কম বয়সের মানুষদেরই চোখের সমস্যা এখন হয় না। আমরা আগে ভাবতাম, চোখে ছানি পড়া বা গ্লুকোমার মতো সমস্যা বেশি বয়সে হয়। কিন্তু এখন এই সমস্যা কম বয়সেও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে জন্মের সময়েও ছানি হচ্ছে। গ্লুকোমার জন্য ৩০ নাগাদ থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে থাকতে হয়। চোখের যত্ন ঠিক সময়ে না নিলে কম বয়সেই অন্ধত্ব আসতে পারে। তাই চোখের যত্ন নিন সময় থাকতেই।
১. ঠিক খাবার খান
চোখ ভাল রাখতে ঠিকঠাক খাবার খাওয়া খুব দরকার। এমন কিছু খাবার আছে যা সরাসরি চোখের জন্য খুব উপকারী। ভিটামিন সি আর ই চোখের জন্য খুব ভাল। এর পাশাপাশি ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, লুটেইন, জিঙ্ক খুব ভাল। এই সবই বয়সজনিত চোখে কম দেখা, ছানি, চোখের জল শুকিয়ে যাওয়া এই সব থেকে চোখ ভাল রাখে। তাই এই সব উপাদান আছে এমন খাবার খান। সবার আগেই পাতে নিন সবুজ শাক-সবজি, পালং, লেটুস। যে কোনও ফ্যাটি মাছ অবশ্যই খান। সঙ্গে রাখুন ডিম, বিনস আর যে কোনও বাদাম। লেবু বা সাইট্রাস জাতীয় ফলও চোখের জন্য খুব ভাল। রোজের ডায়েটে এই সব রাখুন।
২. ধূমপান বন্ধ
ধূমপান কিন্তু অনেক কম বয়সে ছানি পড়া আর অন্ধত্ব, দুইই আনতে পারে। আজকের দিনে কম বয়সে ছানি পড়ার এটি কিন্তু বড় কারণ। শুধু ছানিই নয়, অপটিক নার্ভ অনেক সময়ে নষ্ট করে দেয় সিগারেটে থাকা বিষাক্ত উপাদান। ই-সিগারেট খাইয়াও কিন্তু সমান খারাপ। তাই ধূমপান একদম ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. সানগ্লাস ব্যবহার করুন
আমাদের চোখ সূর্যের রোদের মাধ্যমে অতি বেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে সবসময়ে আসে। খুব বেশি কড়া রোদ বা চড়া আলো চোখ খারাপ হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। তাই সানগ্লাস ব্যবহার করুন। রোদে গেলেই সানগ্লাস ছাড়া যাবেন না। এতে চোখ অনেকটা ভাল থাকবে।
৪. কম্পিউটার বুঝে ব্যবহার
ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে চোখের। নয় থেকে দশ ঘণ্টা চোখের ওপর ল্যাপটপের আলো আসছে। এতে অনেক তাড়াতাড়ি চোখের জল শুকিয়ে যাওয়া, নার্ভ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অফিসে থাকলেও অবশ্য এতক্ষণই তাকাতে হয়। তাই কিছু কাজ করুন। ব্লু রে থেকে রক্ষা করবে এরকম চশমা পরুন। ল্যাপটপের স্ক্রিনের লাইট কম রাখুন। পারলে একটা স্ক্রিন গার্ড দিয়ে দিন। একটানা না তাকিয়ে মাঝে মাঝে জায়গা থেকে উঠুন। খানিক চোখ বন্ধ করে রাখুন। এগুলি চোখে আরাম দেবে, চোখের ওপর চাপ দেবে না।
৫. আই ড্রপ ব্যবহার
সারাদিন কাজের পর চোখের নার্ভকে আরাম দেওয়ার জন্য কিছু আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই আই ড্রপ চোখ ভিতর থেকে রিল্যাক্স করে। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই আই ড্রপ ব্যবহার করুন। এতে চোখের প্রেশার ঠিক থাকবে, লুব্রিকেটিং ভাব বজায় থাকবে।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিনের চাপ কিন্তু চোখ নেয়। আমাদের হাত-পা অন্য সব অঙ্গ কোনও না কোনও সময়ে বিশ্রাম পেলেও একটানা কাজ করে যায় চোখ। তাই চোখের বিশ্রাম দরকার আমাদের ঘুমের মাধ্যমে। অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুম চোখ ভাল রাখতে খুব দরকার। আট ঘণ্টা ঘুমোতে পারলে খুব ভাল। এই ঘুম কম হলে কিন্তু শরীরের অন্য রোগের পাশাপাশি চোখের সমস্যাও অনেক তাড়াতাড়ি বাড়বে।
৭. সকালে এটি করুন
চেষ্টা করুন একটু সকালে ওঠার। সকাল ছ’টার মধ্যে উঠতে পারলে ভাল হয়। আমরা তো এখন সকলেই বাইরে যাই হাঁটতে বা জগিং করতে। তখন কোনও মাঠের মধ্যে গিয়ে কোনও একটা গাছের দিকে সোজা তাকান। যতক্ষণ চোখের ওপর চাপ না দিয়ে তাকাতে পারবেন তাকান। তারপর চোখ কয়েক সেকেন্ড বন্ধ রাখুন। আবার তাকান গাছের দিকে। এটা খুব ভাল এবং কার্যকরী ব্যায়াম চোখ ভাল রাখতে।
এই কতগুলি নিয়ম মেনে চললে চোখ খুব ভাল থাকবে। এছাড়া নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চোখের ডাক্তার দেখানো খুব দরকার। তবেই পরিপূর্ণ ভাবে চোখ সুন্দর থাকবে।
মন্তব্য করুন