মিন্ট বা পুদিনা ফ্লেভারের চুইংগাম আমাদের সকলেরই প্রিয়। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে, মুখকে ফ্রেশ রাখতে যে পুদিনার জুড়ি নেই তা আমরা সকলেই জানি। গরমকালে ঘেমে-নেয়ে বাড়ি আসার পর যদি কেউ পুদিনার শরবত করে দেয়, তাহলে তো কথাই নেই! পুদিনা আমাদের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে।
পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, অ্যালজাইমারসের মতো ভয়ংকর রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। এছাড়া পুদিনা পাতায় যে এসেনশিয়াল অয়েল থাকে তাও নানাভাবে আমাদের উপকারে লাগে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক পুদিনা খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা।
হজমশক্তি বাড়াতে
খাবার পর আপনার কি বদহজমের সমস্যা লেগেই থাকে? ওষুধ খেয়েও কোনো উপকার পান না? পুদিনা পাতায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস থাকে যা আমাদের খিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। পুদিনার সুন্দর গন্ধ মুখের মধ্যে থাকা লালাগ্রন্থি থেকে লালা ও পুদিনার মধ্যে থাকা মেন্থল আমাদের খাদ্য পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক বা এনজাইমগুলির নিঃসরণের কাজে সাহায্য করে।
এছাড়া পুদিনা খাদ্যনালীর পেশীর সংকোচন ও প্রসারনের ক্ষমতা বাড়ায় ও বদহজমের সমস্যা দূর করে। একারণে পুদিনা পাতাকে রান্নায় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। খাবার পর আপনি যদি এক কাপ করে মিন্টটি খান, তাহলে খুব শীঘ্রই হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বকের যত্নে
পুদিনার রস আমাদের ত্বককে পরিষ্কার রাখে ও চুলকানি, নানারকম ইনফেকশনের হাত থেকে ত্বককে মুক্তি দেয়। পুদিনার রস অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, এতে থাকা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড পিম্পল বা ব্রণর হাত থেকে ত্বককে মুক্তি দেয়, ব্ল্যাকহেড দূর করে।
পুদিনায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে ও ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করে। পুদিনা ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে ও আরাম দেয়, সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে তাই পুদিনা যুক্ত ক্লিনসার, টোনার, লিপবাম ও ক্রিম ব্যবহার করুন।
সর্দিকাশি থেকে বাঁচতে
আপনার যদি সর্দিকাশির ধাত থাকে তাহলে সর্দির সময় গরম জলে এক ফোঁটা মিন্ট এক্সট্রাক্ট ফেলে তাতে ভাপ নিন। দেখবেন চটজলদি উপকার পাচ্ছেন। পুদিনার গন্ধ সর্দির সময় নাক, গলা ও ফুসফুসে জমে থাকা কফ ও শ্লেষ্মা দূর করে।
পুদিনার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ কাশির সময় শ্বাসনালীর জ্বালা কমিয়ে আরাম দেয়। এছাড়া হাঁপানির ওষুধ হিসেবেও পুদিনাকে ইনহেলারের মধ্যে ব্যবহার করা হয়।
বমিভাব ও মাথাধরা দূর করতে
আপনার যদি গাড়িতে উঠলেই বমি পায়, তাহলে সাথে সবসময় মেন্থল অয়েল রাখুন বা মিন্ট ফ্লেভারের কিছু জিনিস মুখের মধ্যে ফেলে রাখুন। পুদিনার রিফ্রেশিং গন্ধ খুব তাড়াতাড়ি বমিভাব কাটাতে সাহায্য করে। এছাড়া আপনার যদি মাথাধরা বা মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে তাহলে পুদিনা যুক্ত ক্রিম বা বাম মাথাধরার সময় কপালে লাগিয়ে রাখলে আরাম পাবেন।
মুখের যত্নে
পুদিনা মুখের মধ্যে থাকা জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। পুদিনার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, দাঁত ও জিভ পরিষ্কার রাখে এবং মাড়িকে সুস্থ রাখে। দাঁতের সমস্যা দূর করার জন্য রোজ কয়েকটা পুদিনা পাতা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া টুথপেস্ট কেনার সময় তাতে পুদিনা আছে কিনা দেখে কিনুন।
স্তনের যত্নে ও প্রেগন্যান্সিতে
শিশুকে স্তন্যপান করাতে গিয়ে কি আপনার স্তনবৃন্ত খসখসে হয়ে গেছে বা ব্যথা হয়ে গেছে? তাহলে পুদিনার তেল ব্যবহার করুন। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে পুদিনার তেল এসময় স্তনের যত্নে সাহায্য করে। প্রেগন্যান্সির সময় বমিভাব দূর করতে, মর্নিং সিকনেস কাটাতে ও খাবার হজম করাতেও পুদিনা সহায়তা করে।
মাসিকের ব্যথায়
পুদিনা পাতা আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে ও পেশীকে আরাম দেয়। ফলে মাসিকের সময় পেট ব্যথা যদি আপনার প্রতিমাসের সঙ্গী হয়, তাহলে দিনে বেশ কয়েক কাপ পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খান। সহজে উপকার পাবেন।
ডিপ্রেশন ও অবসাদ দূর করতে
পুদিনার গন্ধ অসাধারণ প্রাকৃতিক উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি রোজকার জীবনে টেনশন, চাপ সহ্য করতে করতে ডিপ্রেসড ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে পুদিনার তেলের সামান্য গন্ধই আপনাকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। পুদিনার তেলের গন্ধ আমাদের মস্তিস্ক থেকে অল্প পরিমানে সেরোটোনিনের নিঃসরণ ঘটায়, যার ফলে ডিপ্রেশন খানিক হলেও দূর হয়। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে কয়েক ফোঁটা মিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল বা মেন্থল অয়েল আপনার বালিশে দিয়ে ঘুমোতে যান। সকালে উঠে দেখবেন আপনি সব কাজে আবার আগের মতো এনার্জি পাচ্ছেন, শরীর ও মন সতেজ হয়ে গেছে।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে পুদিনা পাতা আমাদের সচেতনতা, স্মৃতিশক্তির ধারণক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যেসমস্ত মানুষ নিয়মিত পুদিনা যুক্ত চুইংগাম খান, তাঁদের স্মৃতিশক্তি, সচেতনতা সাধারণ মানুষদের থেকে বেশ খানিকটা বেশী হয়।
ক্যান্সার দূর করতে
সম্প্রতি পুদিনা পাতায় থাকা ফাইটো-কেমিক্যাল বিভিন্নরকম ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে কিনা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিকরা নানা গবেষণা করছেন। বিভিন্ন পশুর ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে পুদিনায় থাকা পেরিলিল অ্যালকোহল নামক ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট ত্বকের ক্যান্সার, কোলনের ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে। তবে মানবদেহে ক্যান্সার ঠেকাতেও পুদিনা সমান ভূমিকা নেবে কিনা, তা নিয়ে এখনও বিস্তৃত গবেষণার অবকাশ আছে।
এসব ছাড়াও পুদিনা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পুদিনায় থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ডি, ই ও অল্প পরিমানে থাকা ভিটামিন বি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে অতিরিক্ত পরিমানে পুদিনা পাতার ব্যবহার মেয়েদের সন্তানধারণ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
তাহলে পুদিনা আমাদের কি কি উপকারে লাগে সে সম্পর্কে জেনে নিলেন। আসুন, এবার পুদিনাকে আপনার খাবারের তালিকায় যুক্ত করুন ও সুস্থ্য থাকুন।
মন্তব্য করুন