অনিয়মিত পিরিয়ড? চাপ নেবেন না। অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা এখন শুধু আর আপনার নয়। এই সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। আর পিরিয়ড মিস করা মানেই তো টেনশন আর তড়িঘড়ি ডাক্তারের কাছে ছোটা। কিন্তু ডাক্তারের কাছে ছুটেও কিন্তু আদতে সের’ম কোনো লাভই হয় না। কারণ ডাক্তাররা বেশীরভাগ সময়েই আপনাকে পিরিয়ডকে নিয়মিত করার জন্য কিছু হরমোনাল ওষুধ দেবেন, সেগুলো খেলে চটজলদি উপকার হয়তো পাবেন, কিন্তু সেই ওষুধ আবার বেশী খাওয়াও ভালো নয়। আর কেনই বা আপনি ডাক্তারের কাছে কষ্ট করে ছুটবেন যখন সহজ সমাধান আপনার ঘরেই, হাতের মুঠোয়? নাহ। ঘরোয়া টোটকায় যেসমস্ত জিনিস খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হয়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করে ফেলেছি। আজ এসেছি আপনার অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করার অন্য কিছু সহজ টোটকা নিয়ে।
অনিয়মিত পিরিয়ড কেন?
আজকের অনিয়মিত লাইফস্টাইল, ভুলভাল ফুড হ্যাবিট, অতিরিক্ত বাইরের খাবার খাওয়া, স্ট্রেস, রাতে কম ঘুম, অতিরিক্ত পরিশ্রম, চিন্তা, চাপ, হরমোনের ইমব্যালান্স ইত্যাদি নানাকারণে হয়তো এক-দু’মাস পিরিয়ড মিস হতেই পারে। ঘাবড়ে যাবেন না। বরং জেনে নিন, সমাধানের উপায়।
ডায়েট ঠিক আছে তো?
অনিয়মিত পিরিয়ড? সমাধানের সবথেকে সহজ উপায় হল খাওয়া-দাওয়াকে ঠিক করা। আপনার যদি অতিরিক্ত চা, কফি, চিনি, ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যেস থেকে থাকে, তাহলে সাবধান হন। এইসমস্ত খাবার কিন্তু আপনার শরীরের হরমোনের অসামঞ্জস্য ঘটায়, আর তার ফল? পিরিয়ড প্রতিমাসে নিয়ম করে না হওয়া, অস্বস্তি, চাপ। এর থেকে বেটার ডায়েট কন্ট্রোল করুন। ওজন বেড়ে যায় এমন খাবার খাবেন না। বেশী করে লীন মিট, দানা জাতীয় খাদ্যশস্য, ফল, সবুজ শাক-সবজি, দুগ্ধজাত জিনিসপত্র খাওয়া অভ্যেস করুন। আর বাইরের ফাস্ট ফুড? আজ থেকেই টাটা বলুন।
তাপ দিন
পিরিয়ডের সময় তলপেটে ব্যথা, ক্র্যাম্পের সমাধানে হট ওয়াটার ব্যাগ নিশ্চয়ই ব্যবহার করেই থাকেন? আসলে ওই হট ওয়াটার ব্যাগ আপনার তলপেটের পেশীকে রিল্যাক্স করে, ফলে কোনো কারণে যদি পিরিয়ড না হয়, অথচ পেট ব্যথা ব্যথা করে, শরীরে অস্বস্তি হয়, তাহলে হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে সেঁক দিন। আরামও পাবেন, আর কে বলতে পারে, হয়তো পিরিয়ডও হয়ে গেল!
ব্যায়াম করুন
ব্যায়ামের যে কোনো বিকল্প নেই এতো আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি। তাই বেকার বাড়িতে বসে আলসেমি করে কি করবেন? এর থেকে ফাঁকা সময়কে কাজে লাগান। বিছানা ছেড়ে উঠুন, আর লেগে পড়ুন ব্যায়ামে। আসলে ব্যায়াম আমাদের শরীরে বিভিন্ন পেশীকে রিল্যাক্স করে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা কমাতে ব্যায়াম করা তো কাজেরই। আর আপনার যদি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা থাকে? আর দেরী না করে আজ থেকেই শুরু করুন তাহলে সকাল বিকেল নিয়ম করে ব্যায়াম। প্রতিদিন ব্যায়াম করার থেকে ভালো আর কিছু হতেই পারে না! দেখবেন শরীরও ফিট আর মনও হিট! আর পিরিয়ড? সেটাও একদম পারফেক্ট রুটিনে!
য়োগা করুন
কি, ঠিক ধরেছি। আপনিও আসলে আমারই মতো। অনেকবার য়োগা করার রেজোলিউশন নিয়েও শেষমেশ আর করে উঠতে পারেন নি। ওই আলসেমিরই কারণে। আলসেমি ছাড়ুন। ওটা অনেক হয়েছে। স্ট্রেস কমাতে য়োগার সুফলের কথা তো অনেক শুনেছেন। এবার পিরিয়ডের সমস্যায় য়োগাকে ব্যবহার করে দেখুন। সক্কাল সক্কাল উঠে এবার থেকে বেড-টি টি খেয়ে য়োগা করা শুরু করুন। ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, প্রাণায়াম, হলাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি সবই আপনার মুশকিল আসান হয়ে উঠতে পারে। শুধু একদিন কষ্ট করে স্টার্ট করুন, বাকি দিনগুলো দেখবেন কি সোজাই না হয়ে গেছে!
ওষুধ নয়, হারবাল জিনিস দেখুন
অ্যালোপ্যাথি অনেক হয়েছে, ওগুলো কিন্তু তলে তলে আপনার শরীরেরই ক্ষতি করে। তাই এবার ঘরেই ভেষজ জিনিসপত্র ট্রাই করুন। দারচিনি, আদা, হলুদ, মৌরি ইত্যাদি সহজ ঘরোয়া জিনিসে যে অনিয়মিত পিরিয়ডের মুশকিল আসান হতে পারে তা আগেই ‘দাশবাসে’র আরটিকলে জেনেছেন। সেগুলোই নিয়ম করে ট্রাই করে যান। এই সমস্ত কিছুরই ‘ন্যাচারাল হরমোন ইমিটেটিং প্রপার্টি’ আছে, ফলে ওগুলো আপনার শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। ফলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রাও ঠিক হয়, ও পিরিয়ডের রেগুলারিটিও বাড়ে।
তাহলে এবার টেনশনকে বলুন টাটা। নিজের লাইফস্টাইল ঠিক করুন আর সহজ টোটকা ফলো করুন। দেখবেন শরীরের সব অস্বস্তি ভ্যানিশ। পিরিয়ডও আবার আগের মতোই নর্মাল, নিয়মিত, আর আপনিও টেনশন ফ্রি, ফুরফুরে, খুশ দিল!
মন্তব্য করুন