ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য হল মসুর ডাল। ইংরেজি নাম Red lentil। মসুর ডালকে জলে সেদ্ধ করে তেল-মশলা সহযোগে রান্না করা হয়ে থাকে। রান্না করা ডাল রুটি বা ভাতের সাথে খাওয়া হয়। মানব দেহে আমিষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বলা হয়ে থাকে মসুর ডাল গরিবের জন্য মাংস। মানে খুবই পুষ্টিকর। মসুর ডাল দেখতে হালকা লাল রঙের। দানাগুলো খেসাড়ী, কলাই বা বুটের দানার থেকে ছোট। মসুর ডাল উচ্চ আমিষ। ফলে মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য খুবই উপকারি।
মসুর ডালের পুষ্টিগুণ
মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যেমন, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি। মসুর ডালে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। পুষ্টিমাণ প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে থাকে জলীয় অংশঃ ১২.৪, গ্রাম খনিজ পদার্থঃ ২.১ গ্রাম, আঁশঃ ০.৭ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩৪৩ কিলো ক্যালরি, আমিষঃ ২৫.১ গ্রাম, চর্বিঃ ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, লৌহঃ ৪.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ৪৯ মিলিগ্রাম, শর্করাঃ ৫৯.০ গ্রাম।
মসুর ডাল চাষ
অল্প পরিচর্যা ও বৃষ্টিনির্ভর ফসল হিসাবে অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ডাল চাষ করা হয়ে থাকে। সব ধরণের মাটিতেই মসুরের চাষ করা যেতে পারে। তবে সুনিষ্কাশিত বেলে, দো-আঁশ মাটিতে মসুর ডাল ভালো জন্মায়। কার্তিক মাসেই মসুর বপন করা হয়। তবে মাঘের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বপন করতে পারলে ফলন বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। মসুর দাকের বীজ খরা সহ্য করতে পারে। তাই চাষের জন্য বেশি জলের প্রয়োজন হয় না। তবে মাটিতে বীজ বপনের সময় যদি জলের পরিমাণ কম থাকে তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগম নিশ্চিত করার জন্য বীজ বপনের আগে জল সেচ করা চাষের জন্য ভালো। অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে জল জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে গাছে পচন ধরবে। অতিরিক্ত খরা ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
মসুর ডালের জাত বা প্রজাতি
মসুর ডাল ৪ টি উন্নত জাতের সাধারনত হয়ে থাকে যথা- বারি মসুর -১, বারি মসুর -২, বারি মসুর -৩, বারি মসুর -৪।
মসুর ডালের উপকারিতা
মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে। ফলে এটি হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য মসুর ডাল একটি আদর্শ খাবার। হজম স্বাভাবিক থাকায় শরীর সুস্থ্য ও সবল থাকে।
মসুর ডালে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা রক্তের কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটা শরীরের কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ধমনীকে পরিষ্কার রাখে ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। মসুর ডালের মতো উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে হার্টের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া মসুর ডালে ফলেট এবং ম্যাগনেসিয়াম আছে যা হার্টকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের সর্বত্র রক্ত, অক্সিজেন এবং পুষ্টি প্রবাহ করতে সাহায্য করে।
মসুর ডালের ফাইবারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। মসুর ডাল শরীরে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, তাছাড়া এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাঁরা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তাঁরা ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে নিয়মিত ডাল খেতে পারেন। ওজন কমানোর সহজ ও স্বাস্থ্যকর উপায়। এছাড়াও মসুর ডাল খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ।
যারা সন্তান সম্ভাবা তাদের জন্য মসুর ডাল খুবই উপকারি। ডালে একসঙ্গে আয়রন ও ফলেট দুটিই থাকে। যা গর্ভবতী মায়েদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। সেই সঙ্গে আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
মসুর ডাল সৌন্দর্য্যচর্চায় জন্য সবচেয়ে ঘরোয়া ও কার্যকরী উপায়। মসুর ডালের প্যাক লাগিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। হয়ে ওঠা যায় কোমল ও সুন্দর ত্বকের অধিকারী। দীর্ঘদিন যদি নিয়ম মেনে মুখে মসুরের ডালের প্যাক লাগান তাহলে সহজেই আপনার মুখের কালো ছাপটা দূর হয়ে যাবে।
আপনি কি প্রয়োজনের অতিরিক্ত রোগা? মোটা হওয়ার সহজ উপায় আপনাদের জন্য
মন্তব্য করুন