কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যেই আঙুল ফাটাই আমরা। বেশ ভালোও লাগে অনেকের। আঙুল ফাটানোর সময় মটমট শব্দ হয়। কিন্তু কেন? এবং এই ঘনঘন আঙুল ফাটানো কি আদৌ ভালো? নাকি খারাপ চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আঙুল ফাটালে আওয়াজ হয় কেন?
কেন আঙুল ফাটানোর সময়ে আওয়াজ হয় এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন বার বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া এসেছে বিজ্ঞানীদের তরফে। উঠে এসেছে বিভিন্ন তত্ত্ব। কিন্তু আজ অবধি কোন তত্ত্বকেই চূড়ান্ত হিসাবে গ্রহণ করা যায়নি। কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। গবেষণা এখনো চলছে। অনেকেই ভাবেন জয়েন্টের হাড়ের ঘষা লাগে তাই আঙুল ফাটালে আওয়াজ হয়। কিন্তু এটা সত্যি নয় বলেই দাবী ওঠে।
আসলে আমাদের শরীরের অস্থিসন্ধি বা হাড়ের জয়েন্টে এক ধরণের ফ্লুয়িড বা তরল থাকে। যাকে বলে অস্থিমজ্জা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুয়িড। এই ফ্লুয়িডে থাকে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস।
আঙুল ফাটানোর সময় আমরা অতি জড়ে আঙুলে মোচড় দি। যতটা এমনিতে আঙুলের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে মোচড়ানো সম্ভব নয়। আমরা চাপ দিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে যাই। যখন আমরা চাপ দিয়ে আঙ্গুলকে এভাবে মোচড়াই বা টানি, তখন আঙুলের দুই হাড়ের মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। আর এই ফাঁকা জেয়গা দখল করে সেই তরল অস্থিমজ্জা। হঠাৎ করে ওই ফাঁকা অংশে অতি দ্রুত তরল ঢুকে যায় বলে একটা মট করে আওয়াজ হয়।
অন্য তত্ত্ব
আবার অন্য একটি গবেষণায় উঠে আসে অন্য তত্ত্ব। বলা হয় আমরা যখন আঙুল ফাটাই তখন দুই হাড়ের মাঝে যে ফাঁকা অংশ তৈরি হয়। ওই ফাঁকা অংশে ফ্লুয়িডে থাকা গ্যাসের বুদবুদ সৃষ্টি হয়। সেই জন্য আওয়াজ হয়। আবার বলা হয় যখন আমরা মোচড় দি দুই হাড়ের মাঝে, তখন এক নিম্নবর্তী চাপ তৈরি হয় ওই চাপে তৈরি হওয়া গ্যাসের বুদবুদ গুলি ফেটে যায় বা বেড়িয়ে যায় তাই এই আওয়াজ হয়। তাই সঙ্গে সঙ্গে আবার ফাটালে কোন আওয়াজ হয় না। কারণ গ্যাসগুলির নিজের জেয়গায় আসতে মিনিট ১৫ থেকে ২০ সময় লাগে।
আঙুল ফাটানো কি ভালো?
এবার আসা যাক আসল কথায় আঙুল ফাটানো ভালো কি? এই নিয়েও বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত। অনেক আগের গবেষণায় দাবী করা হত, আঙুল খুব বেশি ফাটানো ভালো নয়। খুব বেশি এটা করা হলে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর পর আরও যেসব গবেষণা তাতে উঠে আসে অন্য তত্ত্ব।
আঙুল ফাটানোর সঙ্গে জয়েন্টের দুর্বল হয়ে যাবার কোন সম্পর্ক নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার এক চিকিৎসক ডক্টর ডনাল্ড আনগার এর ওপর একটি গবেষণা করেন ৬০ বছর ধরে। ৬০ বছর ধরে তিনি তার এক হাতের আঙুল ফাটিয়ে যান প্রতিদিন। কিন্তু অন্য হাতের আঙুলে কিছু করেন না।
৬০ বছর পর দুই হাতের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য তার চোখে পড়ে না। আঙুলের মধ্যেও না। দেখা যায় তিনি যে হাতের আঙুল ফাটিয়ে ছিলেন সেই হাতের আঙুলের সাথে অন্য হাতের কোন পার্থক্য নেই। একই আছে। এই গবেষণার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কারও জয় করেন।
তবে মনে রাখতে হবে
এমনিতে তো বোঝাই যাচ্ছে আঙুল ফাটালে কোন ক্ষতি হয় না হাতের। তবে বেকায়দায় খুব জোড়ে এমনভাবে করবেন না যাতে বাথা হয় বা হাড়ে চোট লেগে যায়। সাধারণত আঙুল ফাটালে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। কিন্তু আঙুল ফাটাতে গেলে যদি লাগে বা ব্যাথা হয় তাহলে কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হতে পারে সেখানে কোন সমস্যা আছে। যদি ব্যাথা লাগে বা অস্বস্তি হয় তাহলে জোড় করে কষ্ট না দেওয়াই ভালো। কিন্তু এই ধরণের কোন সমস্যা না হলে তাহলে কোন ক্ষতির সম্ভবনা নেই। তাই মাঝে মধ্যে কাজের ফাঁকে দু একবার চলতেই পারে মটমট আঙুল ফাটানো।
মন্তব্য করুন