ইরাবতীর চুপকথা ধারাবাহিকের আকাশ চ্যাটার্জী থেকে খেলাঘরের শান্টু চরিত্র করে যিনি সিনে অনুরাগীদের মন জয় করেছেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেতা সৈয়দ আরেফিন।
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে যিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন,আর আজ জীবনের বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি সফল অভিনেতা, সন্ধ্যা ছয়টার স্লট লিডার ধারাবাহিক খেলাঘরের তিনিই হিরো। ঘরোয়া আড্ডায় সেই জনপ্রিয় অভিনেতা আরেফিন সঙ্গীতা চৌধুরীর সাথে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন।
১. বোম্বেতে চার বছর থাকাকালীন কী করেছেন?
আরেফিনঃ বোম্বেতে আমি কাজ খুঁজেছি, করেছি। প্রচুর অডিশন দিয়েছি, থিয়েটার করেছি। ওখানে কিছু ন্যাশানাল এড শ্যুট করেছি আর কিছু শর্ট ফিল্ম করেছি তবে শর্টফিল্মগুলো রিলিজ হয়নি (একটু থেমে)হরলিক্স, ব্রিটানিয়া পারলের এড করেছিলাম আর ও কিছু এড করেছিলাম তবে এইমুহুর্তে মনে আসছে না। এছাড়া আমি বোম্বেতে জিম ট্রেনিং করাতাম। সেই সময় ফাইট, ড্যান্স যা যা হিরো হওয়ার জন্য দরকার সব শিখেছিলাম। আমি মনে করি প্রতিটা অভিনেতার একবার বোম্বে যাওয়া উচিত, ওখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায় যা আমি শিখেছি।
২. ইরাবতী করবেন এটা কখন ঠিক করলেন?
আরেফিনঃ বোম্বে থাকাকালীন আমার কাছে ফোন এসেছিলো, তখন মনে হয়েছিলো যে চরিত্রটা আমার জন্য ভালো তাই আমি ফিরে আসি, তারপর লুক সেট হয় আর তারপর ইরাবতীর চুপকথা করি।
৩. ইরাবতী আর খেলাঘর-এর মধ্যে কোন কাজটা করে আপনার সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে?
আরেফিনঃ খেলাঘর আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। খেলাঘরের শান্টু আমার খুব কাছের। একটা ছবিতে যেরকম ম্যাটেরিয়াল থাকে, সব গুলোই খেলাঘরে আছে। ছবিতে এরকম চরিত্র হয়ে থাকে, তবে সিরিয়ালে এরকম চরিত্র খুব একটা হয়না। তাই সব হিরোদের কাছেই স্বপ্ন এরকম একটা চরিত্র করা।
স্নেহাশীষ দা ফার্স্ট টাইম এরকম একটা চরিত্র করলেন। আর ইরাবতীর চুপকথা আমার প্রথম কাজ, তাই ওটার প্রতি একটা সফট কর্ণার আছে। প্রথম প্রেম, প্রথম সন্তান প্রথম সবকিছুই ভালোলাগার হয়। ইরাবতীর চুপকথা না করলে হয়ত কেউ আমাকে চিনতেও পারতোনা। তাই দুটোর মধ্যে এইভাবে একটাকে বেছে নেওয়া সম্ভব নয়।
৪. কিছু কিছু দর্শক মনে করেন যে, খেলাঘরে আপনাকে সম্পূর্ণভাবে দেখানো হচ্ছে…
আরেফিনঃ দর্শক যদি এটা মনে করেন তবে তাই।
৫. আপনার মনে হয় না?
আরেফিনঃ আমারও মনে হয় দেখুন আমি ছবি করার জন্য কলকাতায় এসেছিলাম, ছবি তো এখনো করিনি সেই অর্থে স্নেহাশীষ দা যেভাবে আমাকে লঞ্চ করেছে, সেটা স্বপ্ন থাকে মানুষের। আমি স্নেহাশীষ দাকে ধন্যবাদ জানাই এই কারণে যে উনি আমাকে এই সুযোগটা করে দিয়েছেন।
৬. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
আরেফিনঃ উনি ভীষণ ভালো। ওনার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সব সময় স্পেশাল। কোনো চরিত্র করার আগে সেই চরিত্র নিয়ে ভাবনা, দীর্ঘ চর্চা করার বিষয়গুলো ওনার থেকে শিখেছি। এটা আমার লাইফের একটা অ্যাসেট যে আমি কাজ করেছি ওনার সাথে।
৭. স্টার জলসা মঞ্চে যখন সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ করা শিল্পীদের ডাকা হলো তখন উঠে গেলেন না কেন?
আরেফিনঃ হ্যাঁ আসলে আমার জাহির করতে ভালো লাগেনা।
৮. লকডাউনে শ্যুটিংকে কতটা মিস করেছেন?
আরেফিনঃ প্রথম দু একদিন করিনি পরের দিন গুলোয় করেছি।
৯. কীভাবে লকডাউনে সময় কাটালেন?
আরেফিনঃ আমি ছবি দেখতে ভীষণ ভালোবাসি, লকডাউনে প্রচুর ছবি দেখেছি।
১০. শান্টু চরিত্র করতে গিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন?
আরেফিনঃ হ্যাঁ স্নেহাশীষ দা সকলকেই ছাড় দিয়ে থাকেন। আমি যদি কখনো বলেছি যে দাদা এইভাবে করতে চাই, তো দাদা বলেছেন তুমি করো। যদি ভালো লাগে তো আমি দেখে নিচ্ছি। চরিত্রটা যে আমি করছি তা তো শুধু নয়, চরিত্রটা দাদার চোখে ছিল, কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমার কিছু কথা দাদা মেনেছেন আবার অনেক সময় বলেছেন যে, না এইভাবে কাজটা করলে ঠিক হবে। সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে হয়েছে। তবে এই চরিত্রটা করার পেছনে দাদার অবদান সবথেকে বেশি, আমার খুবই সামান্য।দাদা যেটা লিখেছেন আমি সেটা করছি।
১১. আকাশ চ্যাটার্জীর থেকে শান্টুর চরিত্র,দুটোই তো সম্পূর্ণ ডিফারেন্ট?
আরেফিনঃ না কিছু মিল আছে। ইরাবতীতে আমি সৎ ছিলাম এখানেও কিন্তু তাই। তবে ওখানে একটা আভিজাত্যময় চরিত্র ছিল, এখানে একটা বস্তির গুন্ডা চরিত্র, তবে শান্টু ও সৎ। এক দিক থেকে দেখতে গেলে চরিত্র দুটোর মধ্যে কিছুটা মিল আছে আবার অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে পুরোটাই আলাদা।
১২. এত আস্তে কথা বলেন, অথচ শান্টুর চরিত্রটা ভীষণ লাউড, কীভাবে সম্ভব হলো ফুটিয়ে তোলা?
আরেফিনঃ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে, এরকম লাউড এক্টিং আমি করতে পারবো। আমি কী করে করেছি আমি নিজেও জানিনা কারণ আমি এত আস্তে কথা বলি যে আমি কখনো ভাবতেই পারিনি, যে, আমি এটা করতে পারবো।
দাদা হয়তো কিছু দেখেছিলেন আমার মধ্যে, ওনার মনে হয়েছিল আমি পারবো। তারপর করতে করতে হয়ে গেছে। কী করে বলবো কী করে করেছি?করছি ব্যস।দর্শকদের ভালো লাগছে। তবে আমি সারাজীবন স্নেহাশীষ দার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো এই জন্য।
১৩. রঞ্জিত মল্লিকের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
আরেফিনঃ আমি এখনো অবধি এরকম অভিনেতা খুব কম দেখেছি। উনি সবথেকে বড় স্টার ছিলেন। কিন্তু সেটা কখনো ফিল করাননি। আমি তখন নতুন ছিলাম আমার সবাইকে ভয় লাগত কিন্তু কখনও রঞ্জিত মল্লিককে ভয় লাগেনি। রঞ্জিত মল্লিক যখন আসতেন ফ্লোরে তখন মনে হতো আমার একজন গার্জেন এলো।
১৪. অভিনেতা না হলে কী হতেন?
আরেফিনঃ ক্রিকেটার।
১৫. ইন্ড্রাস্টিতে আপনার বন্ধু?
আরেফিনঃ রাজীব(বোস)। রাজীব ইরাবতী থেকেই আমার খুব ভালো বন্ধু, এখনো বন্ধুত্ব আছে।
১৬. সম্রাট মুখার্জীর সাথে ইরাবতীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
আরেফিনঃ সম্রাটদা আমার গুরু তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাই সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকটা ভয় কাজ করে থাকে আবার অনেক পুরোনো স্মৃতিও মনে পড়ে যায়। সবমিলিয়ে দারুন।
১৭. স্টার জলসার প্রিয় বরের অ্যাওয়ার্ডটা পাবেন ভেবেছিলেন?
আরেফিনঃ আমি সবসময় আশা করি। আশা না রাখলে এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম না। আমি ন্যাশানাল অ্যাওয়ার্ড পাবো এই আশা রাখি আর দর্শকদের প্রতি আমার একটা বিশ্বাস ছিলো।
১৮. ইন্ড্রাস্ট্রিতে যারা নতুন আসছে তাদের প্রতি কী বলবেন?
আরেফিনঃ আমিও আগে হয়ত খারাপ করেছি, তার থেকে নিজেকে ঠিক করেছি। বড় বড় স্টাররা অনেকেই প্রথম কাজটা সেভাবে ভালো করতে পারেনি পরবর্তীকালে তারা কাজ করে করে নিজেদেরকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। প্রথম যারা কাজ করছে তাদের হয়তো কিছু ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে, তবে তারা যদি চেষ্টা করে তবে তারাও একদিন বড় জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে। আজ যারা খুব একটা ভালো অভিনয় করতে পারছেন না, একদিন তারাও ভালো অভিনয় করবেন।
১৯. চিত্তরঞ্জনকে কতোটা মিস করেন?
আরেফিনঃ খুবই মিস করি। ওখানেই বড় হয়ে উঠেছি তাই আজ ও মিস করি।
মন্তব্য করুন