বর্ষাকালে বেশিরভাগ সময় একটানা বৃষ্টি হয় আবার মাঝেমধ্যে প্রচন্ড রোদ ওঠে, এই কারণে বর্ষায় বাড়ির ছাদের টবগুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে গাছের যত্ন না নিলে নানান রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই চলুন বন্ধুরা জেনে নিই বর্ষায় টবের গাছ ভালো রাখার ২১ টি টিপস।
১. আগাছাঃ
বর্ষাকালে টবের মধ্যে প্রচন্ড পরিমানে আগাছা সৃষ্টি হয়, এইগুলি মাটির মধ্যে থাকা খাদ্যরস শুষে নিয়ে মূল গাছের ক্ষতি করে। তাই বর্ষাকালে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আগাছা পরিষ্কার করুন।
২. শ্যাওলাঃ
বর্ষাকালে বাড়ির টবের মধ্যে প্রচন্ড পরিমানে শ্যাওলা হয়, এইগুলিও মাটির মধ্যে থাকা খাদ্য রস শুষে নেয় যার ফলে মূল গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই শ্যাওলার হাত থেকে মুক্তি পেতে চারকোল গুঁড়ো করে টবের মাটির উপর দিয়ে দিন। তাহলে আর শ্যাওলা জমবে না।
৩. পোকামাকড়ঃ
বর্ষাকালে অতিরিক্ত পরিমাণে বর্ষণের জন্য পোকামাকড় বাগানের মধ্যে আশ্রয় নেয়। এই পোকা মাকড়ের হাত থেকে নিস্তার লাভ করতে চাইলে একটি টবের থেকে আরেকটি টবের মধ্যে অনেকটা দূরত্ব রাখুন, কারণ বেশি ঘন করে পাশাপাশি টব রাখলে পোকা মাকড় আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
৪. টবে জমে থাকা জলঃ
বারবার বৃষ্টি হওয়ার ফলে টবের মধ্যে জল জমা হতে থাকে, এর ফলে মশার জন্ম হয়। আবার অনেক গাছ আছে যেগুলো বেশি জল সহ্য করতে পারে না, তাই গাছের দিকে একটু বেশিমাত্রায় নজর রাখুন এইসময়। বৃষ্টি হলেই টবে জমে থাকা জলটি ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করুন। টবে অতিরিক্ত জল কখনোই জমতে দেবেন না।
৫. বেশি জল প্রয়োজন যে গাছেরঃ
এমন কতগুলি গাছ আছে যে গাছ গুলির অতিরিক্ত পরিমাণে জল প্রয়োজন হয়, সেই সকল গাছগুলিকে এমন জায়গায় রাখুন যাতে বৃষ্টির জলটা সেখানে গিয়েই জমা হয়।
৬. রোদঃ
বর্ষাকালে রোদ কম থাকে, তাই যখনই সামান্য রোদ দেখতে পাবেন তখন টবগুলো নিয়ে খোলা আকাশের নীচে গিয়ে রাখুন।
৭. মাটির উপর টব নয়ঃ
অনেক বাড়িতেই মাটির উপর টব রাখা হয়, এখন বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য এই সকল মাটিতে পিঁপড়ে বা পোকামাকড় আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীকালে টবে বা গাছের গোড়ায় স্থায়ী বাসা বানিয়ে গাছের ক্ষতি করে, তাই বৃষ্টির পরপরই এইগুলি যাতে নির্মূল হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. গাছে জল দেওয়ার নিয়মঃ
বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির জন্য গাছে জলের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তাই বর্ষার সময় গাছে জল না দেওয়াই উচিত। টবের মাটি ভিজে থাকলে কখনোই জল দেবেন না, কারণ জলের পরিমাণ বেশি হলেই গাছ মরে যায়। এখন কোনো গাছ যদি আপনার ঘরের মধ্যে থাকে এবং সেখানে যদি বৃষ্টির জল না পরে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই জল দিতে হবে।
৯. বৃষ্টির জল যাতে শুকিয়ে যায়ঃ
বর্ষাকালে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে টবের জল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। গরমের সময় যেমন টবের মাটি কয়েক ইঞ্চি নীচ পর্যন্ত ভরাট করতে হয় তেমনি বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টবের পুরোটাই মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া উচিত যাতে জল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
১০. টবের নীচে ট্রে সরিয়ে ফেলুনঃ
বাড়ির টবের নীচে অনেকেই ট্রে রেখে দেন, এখন বর্ষাকালে সেই ট্রে গুলোতে জল জমে গাছের শিকড় অবধি পচে যেতে পারে। তাই টবের নীচে ট্রে থাকলে তা এখনই সরিয়ে ফেলুন।
১১. মাটি নির্বাচনঃ
বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি হওয়ার কারণে টবে এঁটেল মাটি ব্যবহার করুন। কারণ এই মাটির জল শোষণ ক্ষমতা খুব দ্রুত হারে হয়। তাই বর্ষাকালে অবশ্যই এমন মাটি নির্বাচন করা উচিত যা খুব তাড়াতাড়ি টবের জমা জল শুষে নিতে পারে।
১২. জল নিকাশীঃ
টবে যাতে জল দাঁড়াতে না পারে তার জন্য জল নিকাশি তৈরি করুন। এর জন্য ভাঙা টবের টুকরো নিয়ে টবের নীচের ছিদ্র গুলি আটকে দিন। তার উপর কিছু ছোট ছোট ইট পাথরের টুকরো দিয়ে দিন, এরপর ঘরবাড়ি তৈরি করার মোটা দানার হলুদ বালি ও তার ওপর মাটি দিয়ে গাছ বসান তাহলে অতিরিক্ত জল দাঁড়াতে পারবেনা। এখন পুরোনো গাছের ক্ষেত্রে জল নিকাশের ওই ছিদ্রটির মুখে অনেক সময় মাটি, শিকড় ইত্যাদি এসে জল বেরোনোর পথ আটকে দেয়, তখন আর জল বের হতেই পারে না, এ সকল ক্ষেত্রে টবটি তুলে নীচ থেকে একটা কাঠি বা কিছু নিয়ে ছিদ্র জায়গাটি খুঁচিয়ে দিন। তাহলে ওই জায়গাটি পরিষ্কার থাকবে ফলে সুন্দর জল-নিকাশী হবে।
১৩. জৈব সারঃ
বর্ষার বৃষ্টির জলের মধ্যে নাইট্রোজেন ও অন্যান্য উপাদান থাকে যা গাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে,তাই অনেকেরই ধারণা যে বর্ষাকালে গাছে সার দিতে নেই। এমনটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়, বর্ষাকালে গাছে যদি একেবারেই সার জাতীয় জিনিস না দেওয়া হয় তাহলে গাছের বৃদ্ধি মোটেই ভালো হবেনা। শুধু সার দেওয়ার সময় দেখবেন টবের মাটি যেন খুব বেশি ভিজে না থাকে, একটানা দু তিন দিন বৃষ্টি হলে বৃষ্টি থামার চার থেকে পাঁচদিন পর সার দেবেন। এইসময় গাছে হাড়ের গুঁড়ো, নিম খোল, তরল সার বা জৈব সার যা অন্যান্য সময় দিয়ে থাকেন তা নিশ্চিন্তেই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু রাসায়নিক সার দেবেন না। বর্ষাকালে গাছে সরষের খোল পচা না দেওয়াই ভালো।
১৪. জৈব কীটনাশকঃ
বর্ষাকালে কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, তবে পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৫ মিলি লিটার নিমের তেল ও ১০ ফোঁটা সাবান জল ও অল্প পরিমাণে জল মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করে দিন।
১৫. ছত্রাকনাশকের ব্যবহারঃ
বৃষ্টির জলের সাথে অনেক ধরনের ছত্রাক টবের মাটিতে বাসা বাঁধে, এই ছত্রাক গাছের শিকড় সহ সমগ্র গাছটিকে একসময় মেরে ফেলে তাই গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়ে ওঠা এই ছত্রাককে নষ্ট করবার জন্য ছত্রাকনাশকের ব্যবহার করতে হবে। ১ লিটার জলে যে কোন ছত্রাকনাশক ১ চামচ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি তিনসপ্তাহ অন্তর সব টবে ১০০ থেকে ২০০ মিলি অবধি দিয়ে দিন, এরফলে টবের মাটিতে আর ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারবে না। তবে ক্যাকটাস জাতীয় গাছের ক্ষেত্রে ১ লিটার জলে ২ চামচ ছত্রাকনাশক দিতে হবে।
১৬. খুঁটি দেওয়াঃ
বর্ষাকালে প্রচন্ড পরিমাণে বৃষ্টির কারণে চারা কাজগুলি একদিকে হেলে পড়ে যায়, তাই গাছের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য চারাগাছগুলিকে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিন।
১৭. মরা ডালপালা কেটে ফেলুনঃ
টবের মধ্যে থাকা মরা ডাল – পাতা, মরা ফুল- ফল ইত্যাদি কেটে ফেলবেন। এর ফলে গাছ যেমন দেখতে খারাপ লাগে, তেমনি গাছের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জল চলাচলের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটে। গাছের মরা ডালপালাগুলো কেটে তার মধ্যে ছত্রাকনাশক লাগিয়ে দিন।
১৮. রিপটিংঃ
অনেক আগে টবে বসানো পুরোনো বড় গাছ এই সময় করে ফেলুন রিপটিং। অর্থাৎ সম্পূর্ণ গাছটিকে টব থেকে তুলে শিকড় ছাঁটাই সহ বিভিন্ন পরিচর্যা করে আবার নতুনভাবে টবের মাটি তৈরি করে গাছটিকে বসাতে হবে।
বর্ষাকালে স্থায়ী বহুবর্ষজীবী গাছগুলির রিপটিং করতে হবে।
১৯. প্লাস্টিকঃ
অনেকে এই সময় টবকে প্লাস্টিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দিয়ে থাকেন।
২০. ডিমের খোসাঃ
টবের মাটির ওপর ডিমের খোসা ছড়িয়ে দিলে শামুক,কেন্নো ইত্যাদি টবের মাটির ওপর বাসা বাঁধবে না।
২১. পাতাঃ
টবের যে পাতাগুলি দেখবেন টবের মাটির সঙ্গে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে সেগুলো কেটে ফেলুন।
মন্তব্য করুন