আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত মেয়ে সন্তান হলে তাদের খুব একটা ভালো ভাবে মেনে নেওয়া হয় না। হ্যাঁ, ভারত মানেই তো খালি কলকাতা, মুম্বই বা দিল্লির মতো মেট্রোপলিটন সিটি নয়। অনেক গ্রাম আছে, যেখানে আজও মেয়ে হলেই ভাবা হয় কীভাবে বিয়ে দেওয়া হবে তাদের। তাদের লেখাপড়া করানোটা ভাবা হয় বাতুলতা, কারণ শেষ পর্যন্ত তো সেই আগুনে রুটিই তৈরি করতে হবে।
কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই চিন্তার বদল ঘটানোরই চেষ্টা করা হয়েছে। মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য টাকা দেবে সরকার, অর্থাৎ বাবা বা মা আর ভাববে না মেয়ে তাঁদের কাছে বোঝা। সরকারি এই সাহায্যের নামই হল ইন্দিরা গান্ধী স্কলারশিপ। আসুন আজ জেনে নিই, কীভাবে এতে আবেদন করতে হয়।
কারা আবেদন করতে পারবেন
২০০৫ সাল নাগাদ সরকারের তরফে এই স্কিম আনা হয়। মূলত ইউ.জি.সি বা ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন এই স্কিম আমাদের সামনে আনে। যে সকল মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশনের পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য পড়ছে, তাঁরা এই স্কিমের সাহায্য পেটে পারেন। আসুন দেখে নিই আবেদনকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ক. আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল টাইম প্রথম বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রী হতে হবে।
খ. পরিবারের একমাত্র মেয়ে হতে হবে। সেই আবেদনকারীর কোনও ভাই থাকলে চলবে না। বরং বোন থাকলে আবেদন করতে পারে।
গ. আবেদন করার সময়ে আবেদনকারীর বয়স যেন ৩০ বছরের মধ্যে হয়।
ঘ. ডিসট্যান্স মোডে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য পড়লে এই স্কলারশিপের টাকা পাওয়া যায় না।
ঙ. তবে এই স্কিমে আবেদন করতে হলে কোনও পারিবারিক আয়ের বিধি বা সীমানা দেওয়া হয়নি।
কত টাকা পাওয়া যাবে
এই স্কিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে আবেদনকারী পেতে পারেন ৩১০০ টাকা করে। আগে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ২০০০ টাকা। তবে এখন পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। দু বছর আবেদনকারী এই টাকা পেতে পারেন। দু বছরের মধ্যে প্রতি বছর দশ মাস টাকা পাওয়া যাবে।
কীভাবে আবেদন করা যায়
এই আবেদন একদমই অনলাইনের মাধ্যমে করতে হয়।
ক. প্রথমে গুগুলে national scholarship portal বলে সার্চ করুন। দেখবেন একটি উইন্ডোজ খুলে গেছে।
খ. এবার সেখানে আপনার নাম নতুন আবেদনকারী হিসেবে রেজিস্টার করতে হবে।
গ. নাম রেজিস্টার করার জন্য যে দরকারী তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে সেগুলি পূরণ করুন আর ‘রেজিস্টার’ (register) অপশনে ক্লিক করুন। একটি ID Number আর Password আপনার মোবাইলে চলে আসবে।
ঘ. এবার আবেদনকারীকে Log In করতে হবে ওই ID আর Password দিয়ে। এবার মোবাইলে একটি OTP আসবে যার মাধ্যমে আপনাকে আপনার পছন্দ মতো Password দিতে হবে। এটি কিন্তু অবশ্য করণীয় একটি স্টেপ।
ঙ. Password পরিবর্তন করা হলে আবেদনকারীকে ‘Applicant’s Dashboard Page’ যেতে বলা হবে। সেখানে গিয়ে ‘Application Form’ নিয়ে আবেদন করার পদ্ধতি শুরু করতে হবে।
চ. যা যা তথ্য জানতে চাওয়া হবে, নাম, ঠিকানা, অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, সব সেখানে দিতে হবে।
ছ. সব পূরণ করার পর সম্পূর্ণ ‘Application Form’একটি ড্রাফট আকারে আসবে শেষ বারের মতো সব ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য।
জ. সব ঠিক থাকলে আবেদনকারীকে ‘Submit’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তাহলেই আবেদন জমা পড়ে যাবে।
কিছু তথ্য মনে রাখার-
এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন যারা করছেন, তাঁদের কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে অবশ্যই।
ক. যারা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের প্রথম বছরে ভর্তি হয়েছেন তারাই আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে নতুন করে আবেদন করা যাবে না। তখন ‘রিনিউ’ করতে হবে।
খ. এক বছর পর প্রোগ্রেস রিপোর্ট নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে, মূলত কানাড়া ব্যাঙ্ক, সেখানে গিয়ে একটি ফর্মের আকারে জমা দিতে হবে পরের টাকা পাওয়ার জন্য। ফর্মে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের প্রধানের বা প্রিন্সিপাল বা একজন মুখ্য আধিকারিকের সই লাগবে।
গ. আবেদনকারীকে মনে রাখতে হবে, যদি তিনি ইউ.জি.সি’কে আগে থেকে না জানিয়ে পড়া ছেড়ে দেন, তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে।
ঘ. এই অর্থের কোনও অন্য খরচ করলে বা প্রথম বছরে ৫৫% নম্বর না রাখলে টাকা আর পাওয়া যাবে না। শারীরিক ভাবে চ্যালেঞ্জড আবেদনকারীর ক্ষেত্রে নম্বর হবে ৫০%।
ঙ. এই আবেদনের জন্য টাকা পেলে আবেদনকারী অন্য স্কিমের জন্যও আবেদন করতে পারবেন।
এবার নিশ্চয়ই আর মেয়ে হলে তাদের লেখাপড়া করানোর জন্য বেশি ভাবতে হবে না? মেয়েরা আজকাল ওলা বাইক চালিয়েও সংসার চালান। তাঁরা কোন দিক থেকে কম বলুন তো? তাদের বড় হতে দিন, পড়তে দিন।
মন্তব্য করুন