পেয়াঁজ বিহীনে সুস্বাদু মুখরোচক পদের কল্পনা করা কোনো ভাবেই বাঙালি বাড়িতে সম্ভব হয়না। পেঁয়াজকলির স্থান ও তরিতরকারিতে প্রায় সমপর্যায়ের বিশেষ করে চাইনিজ রান্নায় ও স্যালাডে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পেঁয়াজকলির ঊর্ধ্বমুখী দামের ঝাঁঝে বাঙালির চোখে জল এসে যাবার জোগাড়!
এহেন অবস্থায় এসব চিন্তা না করে বাড়ির এক চিলতে জায়গায়, হোক সে বারান্দা বা টেরেস, চাষ করুন পেয়াঁজকলি। কিন্তু কিভাবে? দেখে নিন নিচের সহজ কয়েকটা স্টেপস।
পূর্ব প্রস্তুতিঃ
বাজার থেকে শিকড়যুক্ত পেয়াঁজ বাছাই করে কিনে আনুন। এবার পেয়াঁজের ওপর এর অংশ ও নিচের অংশ গোল করার কেটে নিন। কাটা শেষ হলে সেগুলো একটা পাত্রে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন ১২ ঘন্টা মতো, এটি বীজ শোধনের সাথে গাছ গজানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
টব নির্বাচনঃ
বাড়িতে থাকা প্লাস্টিকের পাত্র, কাঠের কন্টেনার অথবা মাটির টব সব দিয়েই কাজ চলতে পারে। শুধু খেয়াল রাখবেন যেন চওড়া মুখ বিশিষ্ট হয় পাত্রটি। এরকম মাঝারি সাইজের একটি টব বা পাত্র নিয়ে নীচের অংশে ফুটো করে নেবেন যাতে জল বেরিয়ে যেতে পারে এবং ফুটো করার পর কয়েকটা পাথরের টুকরো ছড়িয়ে দেবেন যাতে মাটি ধোয়া জল বেরিয়ে না যায়।
মাটি তৈরিঃ
মাটির ধারণ ক্ষমতা ও উর্বরতার উপর পেয়াঁজকলির প্রকৃতি নির্ভর করে। বেলে-দো-আঁশ মাটি এই সব্জি চাষের জন্য একদম উপযুক্ত। নার্সারি থেকে এই মাটি অত্যন্ত সহজে পেয়ে যাবেন তাই চিন্তা করবেন না। কিন্তু মনে রাখবেন এঁটেল মাটি দিয়ে চাষ মোটেই হবে না।
যদি আরো উন্নত উপায়ে মাটি প্রস্তুত করতে চান তবে গোবর ও ছাই ৮০:২০ এই অনুপাতে মিশিয়ে নিয়ে রোদে শুকনো করে রাখতে পারেন তবে সেটা ১০-১৫দিন মতো লাগতে পারে। আর সাথে ইউরিয়া ও টিএসপি যোগ করতে পারেন। কিন্তু উপরোক্ত উপায়েও একিরকমভাবে মাটি বানাতে পারেন।
বপনের কৌশলঃ
বপনের স্টেপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই দেখেশুনে করবেন। টব মাটি দিয়ে পুরোটা ভর্তি করবেন না। ওপরের দিকে ৩-৪ ইঞ্চি জায়গা স্পেস রাখবেন আন্দাজমত। এবার পেয়াঁজ এর টুকরো গুলো হাতের অল্প চাপে মাটির ভেতরে প্রবেশ করান। বেশি গভীরে রাখবেন না কারণ পচে যেতে পারে। তাই খানিক নীচে রেখে তারওপর ঝুরঝুরে মাটির আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দিন এমনভাবে যাতে দেখা না যায়।
এবার বোতল থেকে জল নিয়ে হাতে করে ছিটিয়ে ছিটিয়ে মাটির ওপর দিন যাতে পুরোটা ভিজে যায়। এখন আলো-বাতাস খেলে এমন জায়গায় রেখে আসুন টব টা।
রোপণের সময়ঃ
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর বা আশ্বিন থেকে পৌষ এর সময় খুবই উপযুক্ত পেয়াঁজকলির চাষ এর ক্ষেত্রে। হালকা শীত ও মিঠে রোদে এটির বৃদ্ধি ও ফলন খুবই ভালো হয়ে থাকে।
জলসেচঃ
একদিন ছাড়া হাতে করে ছিটিয়ে ছিটিয়ে জলসেচ দিতে হবে। জল মাটিতে আবদ্ধ যাতে না থাকে সেদিকে নজর দিন নইলে পেঁয়াজ এর কন্দ পচে যেতে পারে বা ফাঙ্গাস লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে। জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অনুকূল রাখুন ও মাটি যাতে দলা না পাকায় সেদিকেও সাবধানী দৃষ্টি দিতে হবে।
পরিচর্যাঃ
পেয়াঁজকলির গাছে পার্পল ব্লচ ও গোড়ায় পচন ধরার রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেতে পারে। সেই জন্য রিদসীন বা ডায়াথেন জাতীয় ওষুধ জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
এছাড়াও পেঁয়াজগাছে জাব পোকার উৎপাত হামেশাই দেখা যায়। সেই আক্রমণ ঠেকাতে ম্যালথেওন ওষুধ দিলে ওরা আর কাছে ঘেঁষবে না।
এইভাবে ৬ -৭ দিন যাবার পর টব এর মাটি চিরে সবুজ কাণ্ডের পেয়াঁজকলি উঁকি মারতে দেখতে পাবেন। দ্রুতই তুলে নিয়ে রান্নায় ব্যবহার করবেন কারণ এগুলো কয়েকদিন পরই হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
মন্তব্য করুন