হিজাব সব বয়সী নারীদের রুচিশীল, শালীন পোশাক। এটি সবদেশে যে কোনো আবহাওয়ায় পরার উপযোগী একটি পোশাক। হিজাব রমণীদের শালীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে রমণীরা হিজাব পরিধান করেন।
সূরা আরাফের ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
يَا بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ( সূরা আরাফ, আয়াতঃ ২৬)
“হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং বেশভূষার মাধ্যম। (এ ছাড়াও) আত্মসংযম বা পরহেযগারীর পোশাকও রয়েছে, (আর সব পোশাকের মধ্যে) তা সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।” (৭:২৬)
এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখতে হবে:
এক. শয়তান মানুষের মধ্যে নগ্নতার প্রসার ঘটাতে চায়। অন্যদিকে আল্লাহ মানুষের জন্য নানা ধরনের পোশাকের উপকরণের ব্যবস্থা করেছেন।
দুই. পোশাকের সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা আল্লাহর পছন্দনীয় এবং কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এ ধরনের সাজ-সজ্জার ব্যবহার যতক্ষণ না হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়ের সীমানা স্পর্শ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ।
তিন. মানুষের পোশাক তৈরি করা হয় তুলা, পশম বা চামড়া দিয়ে। এসবই হল আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ও আল্লাহরই সৃষ্টি। তাই এসবের প্রতি লক্ষ্য করলে বা এসব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং উদাসীনতা দূর হবে।
যুগ যুগ ধরে নারীরা হিজাব ব্যবহার করে আসছে ।বর্তমানে আধুনিক তরুণীরাও বেশ রুচিশীল । নিজেদের শালীনতা বজায় রাখতে সব বয়সের নারীরা হিজাব পরে ।
হিজাব পরিধানের ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। সব পোশাকের সাথেই হিজাব বেশ মানান সই। নানান রঙ, ছাপা, নকশা নিজেদের পছন্দই প্রাধান্য পায়। ছোটরা বিশেষ করে ছাপা ও ফুলের হিজাবগুলো বেশি পছন্দ করে। স্কুল-কলেজ, অফিস কিংবা নানান সামাজিক অনুষ্ঠানের সাথে হিজাব অত্যন্ত মানানসই পোশাক।
হিজাব কেমন পোশাক?
হিজাব একটি বিশেষ ধরনের রুচিশীল পোশাক-যাতে মাথা থেকে বুক পর্যন্ত ঢেকে সেফটিপিনের সাহায্যে আটকে রাখা হয়। এটি নারীদের একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। এটি মূলত একটি সম্মানজনক পোশাক যা নারীদের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপত্তা দেয়। তাই হিজাব পরার মাধ্যমে নারীরা সমাজে বিশেষ সম্মানপ্রাপ্ত হন।
হিজাব একটি মৌসুমী পোশাকও বটে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত সব মৌসুমেই হিজাব পরা সহজ। বিভিন্ন সময় অনুযায়ী কটন, জর্জেট, সাটিন নান ধরনের কাপড়ের হিজাব পাওয়া যায়।
কিভাবে পরতে হয়?
হিজাব পরিধানের (মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ঢাকার জন্য) জন্য সাধারণত ১০০-১৫০ সেন্টিমিটার লম্বায় এবং প্রস্থে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার কাপড় প্রয়োজন।
হিজাব পরিধানের নিয়মঃ
- প্রথমে কাপড়টি মাথার উপরে বসিয়ে সেফটিপিন দিয়ে চিবুকের নিচে আটকাতে হবে। কাপড়টির ডান প্রান্ত ছোট এবং বাম প্রান্ত বড় রেখে দুই পাশের কোণা ঘাড়ের পিছনের অংশে নিয়ে ভালোভাবে সেফটিপিন দিয়ে আটকাতে হবে।
- এরপর পিছন থেকে ডান পাশের অংশটি সামনের ডান পাশ থেকে বাম পাশে এনে কানের উপরে নিয়ে আটকিয়ে নিন। এরপর বাম পাশের অংশটি নিচ থেকে ঘুরিয়ে ডান পাশে ঘুরিয়ে ডান পাশে মাথা উপর আনুন। কাপড়টির বাকি অংশ মাথার খোঁপায় পেঁচিয়ে নিন।
দরকারি কিছু বিষয় জেনে নিইঃ
হিজাব পরার আগে অবশ্যই চুল বেঁধে নিন। চাইলে একটু টাইট খোঁপা করে নিতে পারেন। এতে বাতাস চলাচলের সুযোগ পাবে। যারা নতুন হিজাব পরিধান করছেন, প্রথমেই পরিপাটি করে হিজাব পরতে না পারলে বাড়িতে বার বার চেষ্টা করুন । বাইরে যাওয়ার সময় ঝটপট হিজাব পরতে হাতের কাছে বিভিন্ন সাইজের সেফটিপিন রাখুন । পছন্দমত সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে বর্তমানে সেরাইযুক্ত হিজাবও পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
ভিন্ন কিছু বিষয়
হিজাবের বাড়তি উপকারিতাঃ
হিজাব ব্যবহারে আপনার ত্বক ও চুল কড়া রোদ ও বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পায়।
হিজাব নারীর অধিকার
হিজাব নারীদের উপর জোরজবরদস্তি নয়; বরং এটি নারীদের ভূষণ বা অলংকার। বর্রব অন্ধকার যুগে নারীদের শালীনতা রক্ষার সুযোগ ছিলো না। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রভাবশালী পুরুষ সমাজের কাছে তাদের শালীনতার কোনো মূল্য ছিলো না। নারীরা নানা অত্যাচারের নিপীড়নের শিকার হতো। বর্তমানেও অধিকাংশ নারী সেই বর্বর যুগের শিকার।
আধুনিক অসাধু পুরুষ সমাজ নারীদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে। তার মধ্যে একটি উদাহরণ হলো ব্যবসাসিক বিজ্ঞাপনে নারীদের অশালীনভাবে উপস্থাপন করা। এমনকি শিশুদের ভিডিও গেইমগুলো কিংবা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে যা যে কোনো সভ্য নারীর জন্য বিরক্তিকর। অধিকাংশ নারীরাই এ বিষয়টি নিয়ে ভাবেন না।
হিজাব ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি
বর্তমান বিশ্বে হিজাব পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাথা ব্যথার বিষয়। তারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করে হিজাবের প্রসারকে বাধাগ্রস্থ করতে নানা কৌশল ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকস শিরাক ও নিকোলা সারোকাজি, সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জ্যাক স্ট্র, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টসহ বহু রাজনৈতিক ও শিক্ষাবিদসহ নান গুরুত্বপূর্ণ পেশার লোক।
২০০২ সালে উত্তর লন্ডনের ডেনবিগ হাইস্কুল থেকে এক স্কুল ছাত্রী বহিস্কৃত হন ; জার্মানিতে স্কুল শিক্ষিকা ফিরিশতা লুদিন চাকুরি হারান হিজাবের স্বপক্ষে কথা বলার কারণে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স হিজাব নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীদের হিজাব পরিধান করার কারণে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, তাই অনেক দেশেই নারীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। তবে সচেতন নারীরা নিজেদের শালীনতা বজায় রাখতে হিজাব পরিধান করে।
স্বাস্থ্য ভারী? চিন্তা নেই। আপনিও আজকালকার ফ্যাশনে ইন! কি কি পরতে পারেন স্মার্ট লুক আনার জন্য!
মন্তব্য করুন