জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। আর এই জাঁকিয়ে শীতে মন চাইছে দূরে পাড়ি দিতে? কিন্তু দূরে যাবার মত বেশী সময় ও বাজেট কোনটাই নেই? দু তিনদিনের বেশী অফিস থেকে ছুটি পাওয়াই মুশকিল! তাহলেও হতাশ হবার কোন কারন নেই। কারন এই দুদিনেই খুব ভালো ট্যুর হয়ে যাবে। তাও আবার একদম বাজেটের মধ্যেই।
কি ভাবছেন দুদিনে সেই একঘেয়ে পুরী কিংবা হয়তো দিঘা। আরে না না পুরী কিংবা দিঘা কোনটার কথাই বলছি না। বলছি এক অন্য জায়গার কথা। যদি সেটা হয় সুন্দর ছোট্ট কোন দ্বীপ? তাহলে কেমন হয়? অসাধারণ তো? হেনরি অ্যাইল্যান্ড হল এরমই একটা সুন্দর জায়গা। চারিদিকে সোনালী বালি, সেই সঙ্গে সুন্দর মনোরম পরিবেশ।
হেনরি অ্যাইল্যান্ড
হেনরি অ্যাইল্যান্ড হল বকখালির কাছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবস্থিত একটি মনোরম জায়গা। যেটা কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে। যেখানে সমুদ্র, একইসাথে জঙ্গল ও অসাধারণ ফ্রেশ খাবার যা বারবার মন টানবে আপনার। শীত হোক বা গ্রীষ্ম সারাবছরই এখানে আসা যায়। হেনরি অ্যাইল্যান্ড বীচে ঢোকার জন্য টিকিট কাটতে হয়। রাতে আবার দর্শকদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুদূরপ্রসারী ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, বাঁশের সাঁকো পথ ধরে জঙ্গলের ভেতর এগিয়ে যাওয়ার মজাই আলাদা। সাথে সোনালী বালি ও বালির ওপর লাল কাঁকড়া চোখ টানবে। সুন্দরী, গরান, হেতালের মত নানারকম গাছ, সবুজের সমাবেশ শান্ত করে দেবে মনকে।
কীভাবে যাবেন
দুইরকম ভাবে
রেলপথ
রেলে যেতে হলে চলে আসতে হবে শিয়ালদহ স্টেশনে। হেনরি অ্যাইল্যান্ডের সবচেয়ে কাছাকাছি স্টেশন হল নামখানা স্টেশন। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লক্ষিকান্তপুর বা নামখানা লোকাল ধরে নামতে হবে নামখানা স্টেশনে। এখান থেকে গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দেবে হেনরি অ্যাইল্যান্ড।
বাস পথে
ধর্মতলা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা ও ৮টায় বাস পাওয়া যায়। বকখালি যাবার। জেটিঘাট নেমে সেখান থেকে গাড়ি পাওয়া যায় হেনরি অ্যাইল্যান্ড যাবার। জেটিঘাট হল বকখালি থেকে ৪কিমি দূরে একটি জায়গা। জেটিঘাট থেকে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদি পেরিয়ে যেতে হয় বকখালি। এবার ওখান থেকে হেনরি অ্যাইল্যান্ড। ভ্যান গাড়ি পেয়ে যাবেন। বাস কন্ডাক্টরকে বলে রাখলেই তারা নামিয়ে দেবে জেটিঘাট।
কি কি দেখবেন
এখানকার মূল আকর্ষণ হল, এখানকার অসাধারণ সুন্দর সমুদ্রতীর। সমুদ্রতীরে চেয়ার ভাড়া নিয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাটাতে বেশ সুন্দর লাগে। যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত জাস্ট অসাধারণ লাগে দেখতে। এই সমুদ্র সৈকতের মজা নিতেই এখানে মূলত ভিড় হয়। কারন অন্যান্য সমুদ্র সৈকতে যতটা ভিড় হয়, এখানে একটু নিরিবিলিতে মজা নিতে পারবেন।
শহরের ভিড় থেকে অনেকটা দূরে, একটুকরো সবুজের মাঝে বাড়তি অক্সিজেন পাবেন। এই সমুদ্র সৈকত যুক্ত সুন্দরবনের সাথে। দর্শকদের জন্য এখানে আছে, ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা। এখানে উঠে আপনি পুরো হেনরি অ্যাইল্যান্ডের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া হেনরি অ্যাই ল্যান্ডের কাছাকাছি আকর্ষণ হল, বকখালি, জাম্বুদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ। বকখালিও খুব সুন্দর জায়গা। এখান থেকে যেতেই পারেন বকখালি দেখতে। তাছাড়া যারা পাখি খুব ভালোবাসেন, তারা এখানে দেখতে পাবেন অসংখ্য নানান প্রজাতির পাখি। শীতের মরশুমে নানা বিদেশী পাখি দেখার সুযোগ থাকে। তাই ক্যামেরা না নিয়ে গেলে কিন্তু অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। ভাবুন তো সুন্দর সমুদ্রতীরে, সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একঝাঁক পাখির কলরব। মন ভরিয়ে দেবে আপনার। এছাড়াও সূর্যোদয়ের সময় জেলেদের মাছ ধরা। আপনিও সামিল হতে পারেন তাদের মাছধরা দেখতে, গভীর সমুদ্রে।
সাথে উপরি পাওনা সামুদ্রিক মাছ। মাছের নানারকম, জিভে জল আনা পদ খেতেই পারেন এখানে।
কোথায় থাকবেন
এখানে অনেক টুরিস্ট লজ আছে। অনেক হোটেল আছে। যেখানে খাবারসহ থাকার ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন দামের হোটেল আছে। এছাড়াও বিকাশভবনের থাকার জায়গা আছে( সল্টলেক) থেকে বুক করতে পারেন, এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দফতরের রিসোর্ট।পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের রিসোর্ট বুক করতে চাইলে, যেতে হবে ডালহৌসির অফিসে। এখানে রয়েছে দুটি রিসোর্ট ম্যানগ্রোভ রিসোর্ট ও সুন্দরী রিসোর্ট।
খরচ কেমন
বাসে ও ট্রেনে দুই ভাবেই খরচ একদম আপনার বাজেটের মধ্যে। যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে শিয়ালদহ থেকে নামখানা স্টেশন ২৫ টাকা পার হেড। শিয়ালদহ থেকে রোজই ট্রেন যায়। প্রথম ট্রেন ছাড়ে ভোর ৪টে। তারপর ৪.৪০, ৭.১৫, ও ৯,০৮ মিনিটে ট্রেন পাবেন। এবং সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা।
আর বাসে যেতে চাইলে, ধর্মতলা থেকে তো ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস পেয়েই যাবেন আগেই বলেছি। বাসে খরচ পড়বে ৮৭ টাকা পার হেড। সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। আর একই বাস বকখালি থেকেও পেয়ে যাবেন। খরচ পড়বে ৭০ টাকা পার হেড।
হোটেল বিভিন্ন দামের বিভিন্ন মানের পেয়ে যাবেন। ৬২৫ থেকে শুরু করে ৩০০০ পর্যন্ত বিভিন্ন দামে হোটেল পেয়ে যাবেন খাওয়াসহ। অন্যান্য খাওয়াদাওয়ার খরচও খুব বেশী নয়। তাই হেনরি অ্যাইল্যান্ড সহ গোটা বকখালি ঘোরার জন্য ৪০০০ থেকে ৫০০০ ৩ জনের দুদিনের খরচ।মাথা পিছু খরচ ১৫০০।
কি তাহলে কম খরচে অসাধারণ ট্যুরের সন্ধান দিয়ে দিলাম তো। এবার তাহলে শুরু করে দিন যাবার প্রস্তুতি। শহরের সেই একঘেয়ে জীবন থেকে দূরে কয়েকটা দিন, হেনরি অ্যাইল্যান্ড নামক এই একটুকরো সবুজ হোক আপনার গন্তব্য।
মন্তব্য করুন