মা হওয়ার থেকে ভালো মুহূর্ত যে আপনার জীবনে আর নেই, তা এক্কেবারে হক কথা।কিন্তু ভাবুন তো, প্রেগন্যান্সির পরে আপনার বুকে,তলপেটে যে বিচ্ছিরি স্ট্রেচ মার্কসগুলো থেকে যায়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেগুলোর দিকে তাকিয়েই মনটা খুঁতখুঁত করে, তাই তো?
হাজারো ক্রিম,মলম ব্যবহার করেও সেগুলো আর কিছুতেই যেতে চায় না! দুঃখ করবেন না। মা হওয়ার পরে আপনার আনন্দকে আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়ে এবার আমরা ‘দাশবাসে’র পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছি গর্ভাবস্থার পরে দাগ দূর করার ঘরোয়া ৬টি উপায়।
দাগ কেন হয়?
আসলে গর্ভাবস্থার সময় শরীর তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে গিয়ে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। আর তখন স্বাভাবিক ভাবেই মোটা হয়ে যাওয়ার একটা টেন্ডেন্সি থাকে। শরীরে বাড়তি মেদ জমা হয়।
প্রেগন্যান্সির পরে সেই বাড়তি মেদ ঝরে যায় হঠাৎ করে। আর তার ফলেই পেটে, বুকে ইত্যাদি যে যে জায়গায় মেদ জমেছিল, সেখানে দাগ হয়ে যায়। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির সাহায্যে আপনি এই দাগ দূর করতে পারবেন।
১. ন্যাচারাল অয়েল ট্রিটমেন্ট
আপনার ওই দাগের এলাকায় তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক স্মুদ হবে,আর খানিক দাগ দূর করতেও এই নাচারাল অয়েলের ম্যাসাজ কাজ দেয়।
উপকরণঃ
বাদাম তেল বা নারকেল তেল পরিমাণ মতো, গ্রেপ সিড অয়েল / ল্যাভেন্ডার অয়েল ইত্যাদি যে কোনো এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা।
পদ্ধতিঃ
বাদাম তেল বা নারকেল তেলের সাথে যে কোনো একটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর আপনার দাগের এলাকায় মিনিট ৫-১০ ম্যাসাজ করুন। রোজ নিয়ম করে করুন। দেখবেন দাগ আস্তে আস্তে হালকা হচ্ছে।
২. অ্যালোভেরা
যে কোনো দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা বেস্ট অপশন। আপনার গর্ভাবস্থার পরের দাগকে দূর করতেও অ্যালোভেরা দারুণ কাজ দেয়। অ্যালোভেরা জেল ক্ষত তাড়াতাড়ি সারাতে সাহায্য করে ও ত্বককে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে। তবে শুধুমাত্র আর্লি স্টেজের স্ট্রেচ মার্কস দূর করতেই কিন্তু অ্যালোভেরা কাজে লাগে।
উপকরণঃ
ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল পরিমাণ মতো।
পদ্ধতিঃ
ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল আপনার দাগের জায়গায় ভালো করে লাগান যতক্ষণ না পর্যন্ত তা ত্বকের সাথে মিলিয়ে যায়।দিনে অন্তত দু’বার করে নিয়ম করে করুন।ফল পাবেন।
৩. পেট্রোলিয়াম জেলি
পেট্রোলিয়াম জেলি হল এক্সক্লুসিভ এজেন্ট,যা আপনার ত্বকের ময়েশ্চার লক করতে সাহায্য করে।ড্রাই আর স্ট্রেচ মার্কসকে দূর করতে তাই এটা আরামসে ব্যবহার করতে পারেন।
উপকরণঃ
পেট্রোলিয়াম জেলি পরিমাণ মতো।
পদ্ধতিঃ
পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট ভালো করে ম্যাসাজ করুন।প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এটা করে যান,দেখবেন দাগ হালকা হচ্ছে।
৪. ড্রাই ব্রাশিং
শুনে অবাক হচ্ছেন তো?আজ্ঞে শুধুমাত্র ড্রাই ব্রাশিংও কিন্তু গর্ভাবস্থার দাগকে হালকা করতে সাহায্য করে।কারণ ড্রাই ব্রাশিং আপনার রক্ত আর লসিকার সঞ্চালনকে বাড়িয়ে তোলে,ফলে আপনার দাগের জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নিউট্রিয়েন্টস পৌঁছতে সাহায্য করে।এছাড়া ওখান থেকে টক্সিন দূর করতেও ড্রাই ব্রাশিং দারুণ কাজ দেয়।তৈল আর ঘর্মগ্রন্থির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তা মরা কোষকে এক্সফোলিয়েট করতেও সাহায্য করে।তাই স্মুদ,নরম আর ব্লেমিশ ফ্রি ত্বক পেতে চাইলে এটা আপনাকে ট্রাই করতেই হবে।
উপকরণঃ
নরম বডি ব্রাশ।
পদ্ধতিঃ
আপনার দাগের জায়গায় সার্কুলার মোশনে ব্রাশ করুন আস্তে করে।৫-৬ মিনিট ধরে করে স্নান করে ভালো দেখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।প্রত্যেকদিন নিয়ম করে স্নান করার আগে এই ড্রাই ব্রাশিং করে যান।কয়েকদিনের মধ্যেই রেজাল্ট বুঝতে পারবেন।
৫. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ক্ষতের জায়গায় কোলাজেনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।তাছাড়া ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাকে বাড়িয়ে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দাগ দূর করতে পারে।
উপকরণঃ
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ক্রিম,যে কোনো ওষুধের দোকানেই পেয়ে যাবেন।
পদ্ধতিঃ
বাক্সের গায়ে লেখা ইন্সট্রাকশন ফলো করে এই ক্রিম আপনার স্ট্রেচ মার্কের জায়গায় দিনে একবার বা দু’বার ব্যবহার করুন।দেখবেন উপকার পাচ্ছেন।তবে এটা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো হয়।
৬. ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ কিন্তু গর্ভাবস্থার স্ট্রেচ মার্কস দূর করতে দারুণ কাজে দেয়।কারণ ডিমে থাকা এনজাইম আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে দাগকে হালকা করতে থাকে।
উপকরণঃ
১-২ ডিমের সাদা অংশ,২-৩ ফোঁটা নারকেল তেল বা বাদাম তেল,ব্রাশ লাগানোর জন্য।
পদ্ধতিঃ
একটা বাটিতে ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ওতে নারকেল তেল বা বাদাম তেল মিশিয়ে নিন।এবার ব্রাশে করে আপনার দাগের জায়গায় ব্রাশ করুন।শুকোতে দিন।শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।এভাবে সপ্তাহ খানেক করুন,দেখবেন লাভ হচ্ছে।
গর্ভাবস্থার দাগ দূর করার জন্য বেস্ট দুটি ক্রিমের খবর
১. পামার’স কোকো ফারমিং বাটার ক্রিম, ২৫০ মি.লি.
গর্ভাবস্থার দাগ দূর করার জন্য এটা বেস্ট ক্রিম।এতে আছে শিয়া বাটার,কোলাজেন,ইলাস্টিন আর ভিটামিন ই যা সহজে দাগ দূর করে।যে কোনো ত্বকের জন্য উপকারী।
২. দ্য মম’স কো ন্যাচারাল স্ট্রেচ অয়েল, ১০০ মি.লি.
এটা কেমিক্যাল ফ্রি। তাছাড়া সাতটা শক্তিশালী তেল আর ভিটামিন সি আর ভিটামিন ই যোগ করে ন্যাচারাল ফর্মুলাতে তৈরি এই তেল কিন্তু আপনার গর্ভাবস্থার দাগকে খুব তাড়াতাড়ি দূর করে।
তাহলে এবার নিশ্চিন্তে মা হওয়ার আনন্দকে উপভোগ করুন। ‘দাশবাসে’র জমানায় কোনো দাগের সাধ্য নেই আপনার আনন্দকে কেড়ে নেওয়ার!
মন্তব্য করুন