সোনার বিকিকিনি যুগযুগ ধরেই সামাজিক কাজকর্মে একটা আলাদা ছাপ রেখে এসেছে। বনেদিয়ানা হোক বা আভিজাত্য, সে বিপদের পুঁজি হোক বা ধার্মিক কারণ সোনার এহেন কৌলিন্য সোনার গহনাকে এক আলাদা বৈচিত্র্য প্রদান করে। কিন্তু সেই সাথে সোনার শুদ্ধতা নিয়েও সমানে চলেছে বাগবিতণ্ডা।
অবশেষে সোনার গয়নায় হলমার্কিং বাধ্যতামূলক করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় উপভোক্তা মন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা জারি করে আগামী ১৫ই ডিসেম্বর থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোনার শুদ্ধতার মানদণ্ড
- বর্তমান অবস্থায় সোনার হলমার্কিং ব্যবস্থা জনসাধারণের চোখে তেমন ভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
- অনুমোদনহীন নানা সংস্থা থেকে হলমার্ক বানিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে অহরহ। পাশাপাশি গ্রাহকদের মধ্যেও হলমার্ক নিয়ে এক বিভ্রান্তি কাজ করে যে তারা বিশুদ্ধ সোনা কিনলো কিনা।
- এইসব আশঙ্কা থেকে সকলকে মুক্ত করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকারি সংস্থা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড(BIS) যারা সোনার শুদ্ধতার মানদণ্ড এবার নির্ধারণ করবে ডিজিটাল হলমার্কিং এর মাধ্যমে।
- এই প্রযুক্তিতে কোড নাম্বার প্রদান করা হবে প্রত্যেক গয়নায়।
- ফলে অনলাইনেই সোনার শুদ্ধতা করা যাবে যাচাই।
- যদি কোনো গলদ ধরা পড়ে বিক্রেতাকে গুনতে হবে দ্বিগুন মূল্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে।
হলমার্কিং করার কারন
- সঠিক মূল্যদরে সঠিক জিনিস পাবেন গ্রাহক। ঠকার সম্ভাবনা নির্মূল হবে।
- বিক্রেতারা সোনার গুণমান অক্ষুন্ন রাখবে।
- হলমার্ক সার্টিফিকেট ও পেমেন্ট বিল থাকলে প্রয়োজনের তাগিদে নির্ঝঞ্ঝাটে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে সেই সোনা বিক্রি করা যাবে।
- এই ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড এর ডিরেক্টর জেনারেল সুরিনা রাজন জানিয়েছেন যে এই হলমার্ক বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনকেও জানাতে হবে। তাদের অনুমোদন পেলে তবেই এই শর্ত লাগু করা হবে।
- ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানও জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রক এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে।
- হলমার্কিং ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আরো কৌশল এর সাহায্য নেয়া হচ্ছে।
- ডিজিটাল হলমার্কিং এর নকশা প্রস্তুত করবে বোম্বে আইআইটি।
- ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অব হলমার্কিং সেন্টারের প্রাক্তনী হর্ষদ আড়মেড়া জানাচ্ছেন যে অনেকটা কোর ব্যাংকিং এর কায়দায় এই কাজ করা হবে। অর্থাৎ গয়না লেনদেন এর সময় কেন্দ্রীয় ভাবেই গোটা বিষয়টির উপর নজরদারি চালানো হবে।
- গ্রাহকরা মোবাইলেও সব তথ্য পেয়ে যাবেন। বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত হলমার্কিং সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ৮৫০টি। রাজ্যে যার সংখ্যা ৯০। কিন্তু এর বাইরেও যথেচ্ছভাবে কারচুপি চালিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
- সাধারণত এক ক্যারেটের পার্থক্য হলে সোনার দামের হেরফের হয় প্রায় ৪% মতো।
- এখন কথা হলো হলমার্ক গয়না যেটা দেয়া হবে সেটা আসল কিনা জানবেন কিকরে?
- সেটা বোঝার সবচেয়ে আদর্শ পথ হলো গয়নার উপর লেখা থাকা খুব ছোট আইডি নাম্বার যেটা নির্দেশ করবে এই গয়নায় ব্যবহৃত সোনার ক্যারেট। যেমন – ২২k,১৮k,১৪k ইত্যাদি।
- যার অর্থ হচ্ছে ওই গয়নার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হয়েছে সরকারি ল্যাবরেটরিতে।
নীচে সোনার ক্যারেট সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো
- ২৪ ক্যারেট: সোনার পরিমান ৯৯.৯%
- ২২ ক্যারেট: সোনার পরিমান ৯১.৭%
- ১৮ ক্যারেট: সোনার পরিমান ৭৫%
- ১৪ ক্যারেট: সোনার পরিমান ৫৮.৩০%
মন্তব্য করুন