বাড়িতে ফ্রিজও আছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনও আছে। রাতের ডিনারের আর চিন্তা কি? বরং সক্কাল সক্কাল রেঁধে নিয়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে খাবার আগে রাতে জাস্ট টুক করে গরম করে নিলেই হল! পাতে গরম গরম খাবারও রেডি, অথচ আপনাকে আর দু’বেলা কষ্ট করে রান্নার ঝক্কিও পোয়াতে হল না! উঁহু। এবার থেকে এই অভ্যেসে জল ঢালুন। খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খাওয়া এমনিতেই ভেরি ব্যাড হ্যাবিট। বিশেষ করে আপনি যদি এই ৫ টি খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খান, তাহলে তো বিষক্রিয়া প্রায় অনিবার্য। ভয় পাচ্ছেন? আসুন, ভয় পাবার আগে বরং জেনেই নিন যে কোন কোন খাবার দ্বিতীয়বার গরম করে খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
ভাত
আজ্ঞে হ্যাঁ। ভাত। বাসি ভাত সক্কালে উঠে গরম করে খেয়ে নিলেন। খুব খারাপ কিন্তু। জানেন কি খাদ্য বিশারদরা বলেন ভাত রান্না করার পর তাকে নাকি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেও বেশিক্ষণ ফেলে রাখা উচিত নয়। আর রান্না করা ভাত আবার ফ্রিজে রাখা? সে তো নৈব নৈব চ। রান্না না করা চালে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ার বীজগুটি বা স্পোর থাকে যা ফুড পয়েজনিং-এর কারণ হতে পারে। ভাত রান্না করলেও ওই ব্যাকটেরিয়াগুলি বেঁচে থাকে। এরপর আপনি যদি ভাতকে ঘরের তাপমাত্রায় বা ফ্রিজে রাখেন ওই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওই ভাত খেলে বমি বা ডায়েরিয়া হতে পারে। আর ভাত যদি দ্বিতীয়বার গরম করেন, তাহলেও ওই বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া যায় না। তাই ভাত গরম করে না খাওয়াই ভালো।
ডিম
ডিম আপনার শরীরের জন্য দারুণ একটা প্রোটিনের উৎস হতে পারে। মানছি। কিন্তু আপনি যদি ডিম আবার গরম করে খান, তাহলে? তখন কিন্তু ডিমের প্রোটিনের স্ট্রাকচার আপনার পরিপাকতন্ত্রের গোলমাল ঘটাতে পারে। ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ জানায় যে ডিমের কোনো রান্নাকে আপনি যদি ঘণ্টাখানেক ফ্রিজের বাইরে রাখেন, তাহলে নানারকম ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ফর্ম করে তা আপনার শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই ডিম গরম করা বন্ধ করুন।
মাশরুম
মাশরুম রান্না করে খেলেই অনেকসময় নানারকম বিষক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু মাশরুম যদি আবার গরম করে খান? ‘ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল’ পরামর্শ দেয়, মাশরুম রান্না করার সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হয়। মাশরুমকে যদি আপনি রান্না করা অবস্থায় বেশিক্ষণ ফেলে রাখেন, বা ফ্রিজে রাখেন, এবং আবার গরম করে খান তাহলে মাশরুমের প্রোটিন খুব তাড়াতাড়ি ডিটোরিয়েট করে। তা আপনার হজমের নানারকম সমস্যা করতে পারে। পেটের নানা গোলমালও করতে পারে।
আলু
আলু তো সব রান্নায় কম বেশী দেওয়া হয়। সেইসব রান্না ফ্রিজ থেকে বের করেও হরদম খান আপনি। কিন্তু জানেন কি, আলুকে দ্বিতীয়বার গরম করে খেলে তা শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করে। আলুতে থাকা ব্যাকটেরিয়া গরম করে খেলে মরে তো নাই, বরং তা আরও বেড়ে যায়। আলু রান্না করার পর তাড়াতাড়ি ফ্রিজে না ঢোকালে তা ক্লস্ট্রাডিয়াম বটালিনাম ব্যাকটেরিয়ার খাস জন্মস্থল হয়ে যায়, তা নানারকম ক্ষতি করতে পারে আপনার শরীরের ও পেটেরও। আর ফুড পয়েজনিংও হতে পারে। তাই আলু দ্বিতীয়বার গরম করা থেকে সাবধান!
পালংশাক
ফ্রিজ থেকে বাড় করে এক বাটি পালংশাক গরম করে খেয়ে নিলেন? সাবধান। এটা কিন্তু আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। পালং শাকে প্রচুর নাইট্রেট থাকে যা আপনার শরীরে পুষ্টি যোগায়। পালং শাক কাঁচা খেলে তা নাইট্রেট নাইট্রাইটে পরিণত হয়, যা আপনার শরীরে ম্যাজিক করে দিতে পারে। নাইট্রাইট শরীরের পক্ষে খুবই ভালো, কিন্তু যদি নাইট্রাইটকে গরম করে খান? তাহলে তা ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরে টক্সিনও তৈরি করে।
তাহলে কি বুঝলেন? এই খাবারগুলো নিশ্চয়ই আর আপনি দ্বিতীয়বার গরম করে খাবেন না? সে আপনার বাড়িতে যতই ফ্রিজ থাকুক আর যতই মাইক্রোওয়েভ থাকুক। খাবার টাটকা রান্না করুন, আর টাটকা খান। হাজার হোক, সুখে থাকতে কেনই বা আর ভূতে কিলোবেন?
Indrani ghose 29.9.2017 4p.m
মন্তব্য করুন