তৈলাক্ত ত্বকের চাইতে শুষ্ক ত্বক হ্যান্ডেল করাটা বেশ কঠিন। এমনিতেই এই ত্বক আর্দ্রতাহীনতায় ভোগে। তার উপর রোদ ও দূষণ ত্বকের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার ভেঙে ফেলে এবং ময়েশ্চার গায়েব করে ফেলে। প্রতিদিন সঠিক পরিচর্যা ও বিউটি প্রোডাক্ট পারে শুষ্ক ত্বকের সব সমস্যার সমাধান করতে। আজকের আয়োজনে থাকছে শুষ্ক ত্বকের সারাদিনের যত্ন স্টেপ বাই স্টেপ।
শুষ্ক ত্বকের ডে কেয়ার রুটিন
- দিনের শুরুটা হোক স্পেশাল ক্লিনজার দিয়ে। শুষ্ক ত্বকের ক্লিনজার হতে হবে খুবই জেন্টেল, নন-ফোমিং, সুগন্ধবিহীন, এবং নন-ইরিটেটিং। ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
- মুখ ধোয়ার জন্য অবশ্যই স্বাভাবিক মাত্রার ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। গরম পানি ব্যবহারে ড্রাই স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল উবে যাবে। এমনকি গোসলের সময়ও গরম পানি ব্যবহার করবেন না।
- ক্লিনজিংয়ের পরে আসে টোনিংয়ের পালা। কিন্তু টোনিং শুধু অয়েলি স্কিনের জন্য জরুরি, ড্রাই স্কিনের জন্য না।
- এরপরে ব্যবহার করুন ভালো ব্র্যান্ডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেরাম। এই সেরামে প্রচুর পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট থাকে। রোদ, অতিবেগুনি রশ্মী, দূষণ ইত্যাদির কারণে শুষ্ক ত্বকে ইনফ্লেমেশন হয়। সেরাম এই ইনফ্লেমেশন কমিয়ে আনে। ত্বকে হালকা করে সেরাম লাগিয়ে নিন।
- সেরামের পরে আন্ডার আই ক্রিম লাগিয়ে নিন। এই ক্রিমে চোখের অংশটা নমনীয় থাকবে, কোলাজেনের মাত্রা অটুট রাখবে।
- যদি আপনার মুখে ব্রণ থাকে তাহলে আন্ডার আই ক্রিমের পরে ব্যবহার করুন স্পট ট্রিটমেন্ট। সাধারণত স্পট ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্টগুলো ব্রণের প্রকোপ কমানোর জন্য ত্বকের বাড়তি তেল শুষে নেয়। তাই ড্রাই স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল হারিয়ে যাবে না এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন। বেনজোইল পারঅক্সাইড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ স্পট ট্রিটমেন্ট দেখে কিনুন। এগুলো শুষ্ক ত্বকের ব্যাকটেরিয়া, ইনফ্লেমেশন, ইনফেকশন কমায়।
- ময়েশ্চারাইজার, ড্রাই স্কিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোডাক্ট। গ্রীষ্ম, বর্ষা, বা শীত, ত্বককে সারাদিন হাইড্রেটেড রাখুন ময়েশ্চারাইজার দিয়ে। গোসলের পরে গা পুরোপুরি মুছে ফেলবেন না। হালকা ভেজা থাকতে সারা মুখে ও শরীরে উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- সবশেষে সানব্লক ব্যবহারের পালা, ত্বককে রোদ থেকে বাঁচাতে। যদি ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ সানব্লক ব্যবহার করেন তাহলে গোসলের পর আলাদা করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে না। সরাসরি সানব্লক অ্যাপ্লাই করবেন শরীরে ও মুখে।
শুষ্ক ত্বকের নাইট কেয়ার রুটিন
সবার আগে মাইসেলার ওয়াটার। এই স্পেশালাইজড ওয়াটার ত্বক থেকে বাড়তি সেবাম, ময়লা, ক্ষতিকারক কণা, মেকআপ তুলে দেয়।• এরপরে আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করুন। চোখের অংশ মুখের অন্য অংশের চাইতে পাতলা হয় এবং বলিরেখা, ডালনেস সবার আগে চোখেই ধরা পড়ে। তাই চোখের জন্য প্রথমে ভালো ক্রিম লাগিয়ে নিন।
আন্ডার আই ক্রিমের পরে ব্যবহার করতে হবে আন্ডার আই সেরাম।• এরপরে চাই ট্রিটমেন্ট সেরাম। ট্রিটমেন্ট সেরামের কাজ হচ্ছে মূলত সেবাম ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে আনা, স্কিন অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো, ময়েশ্চারাইজিং, এবং ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে আটকানো। এগুলো বিশেষ করে রাতে ব্যবহারের উপযোগী।
রেটিনল নাইট সেরাম, আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড সেরাম, ময়েশ্চারাইজিং সেরাম ইত্যাদি ড্রাই স্কিনের জন্য ভালো।• সবশেষে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পালা। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক হলে রাতে ঘুমানোর আগে বেশি করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন। এটি ত্বকে অ্যাবজর্ব হতে সময় নিলেও সারাদিনের ধকল থেকে ত্বককে হিলিং ইফেক্ট এনে দিবে।
শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া প্রতিকার
প্রতিদিনের রুটিনড কেয়ারের পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে তৈরি ফেস প্যাক, স্ক্রাব বা টোটকা দূর করবে শুষ্ক ত্বকের সব সমস্যা।
ওটমিলের স্ক্রাব
- ওটমিল – ৩ টেবিল চামচ
- মধু – ১ চা চামচ
- দুধ – ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ
দুধটা প্রথমে গরম করে তারপরে ওটমিল মেশান। ঠান্ডা হলে মধু মিশিয়ে নিন। পুরো মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। ১০ মিনিট পরে আঙুলের ডগা দিয়ে সার্কুলার মোশনে মাসাজ এবং স্ক্রাবিং করুন। ৫-৭ মিনিট স্ক্রাবিং করার পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই বা তিনবার এই স্ক্রাব ব্যবহারে শুষ্ক ত্বকের লালচে ভাব, চুলকানি, ফাটা ইত্যাদি সমস্যা দূর হবে।
মেথির ফেসপ্যাক
- মেথির বীজ – ২ টেবিল চামচ
- নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল – ৫-৬ ফোঁটা
- পানি – প্রয়োজনমতো
মেথিব বীজ প্রথমে গুঁড়া করে তারপর তাতে তেল আর পানি মেশান। মিশ্রণটা মসৃণ হতে হবে, এবং বেশি ঘন না আবার বেশি পাতলাও না৷ এবারে মিশ্রণটা পুরো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন এবং ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহারে ড্রাই স্কিন থাকবে আর্দ্র, মসৃণ, উজ্জ্বল, এবং দীপ্তিময়।
তেলের টোটকা
- অলিভ অয়েল – ২ চা চামচ
- ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল – ১-২ ফোঁটা (এর বেশি কখনোই না)
দুটি তেলই সূর্যরশ্মি থেকে হওয়া বার্ন, টিস্যু ড্যামেজ, এবং ক্ষত থেকে ড্রাই স্কিনকে বাঁচায়। সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে হালকা করে মাসাজ করুন মুখে, গলায়, ঘাড়ে। ৫ মিনিট ধরে মাসাজ করার পর বাড়তি তেলটুকু মুছে ফেলুন কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে। প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে তেল মাসাজ করবেন।
মন্তব্য করুন