ডেঙ্গুর জ্বালায় আমাদের সবারই মোটামুটি ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ গোছের অবস্থা হয়েছে। ডেঙ্গু হলে কিন্তু আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায়। জ্বর সারলেও শরীরে দুর্বলতা থেকেই যায়। আজ জেনে নিন ডেঙ্গু হলে কি কি খাবার খেলে আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন!
ডেঙ্গু কী?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশার কামড়ে এ রোগ মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এডিস মশা ডেঙ্গু রোগের জীবাণু বহন করে। ফলে এই মশার কামড়ে জীবাণু রক্তে মিশে গিয়ে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি করে। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু হলে তীব্র জ্বর হয় এবং সারা শরীরে ব্যথা অনুভব হয়। জ্বরের মাত্রা এতই বেশী হয় যে, দেহের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। মাথা ও চোখের পিছনে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। রোগের প্রচন্ডতা খুব বেশী হলে সারা দেহে লালচে দানা দেখা যায়। অনেক সময় রোগ আরও ভয়ানক হয়ে দেখা দিতে পারে। মলের সাথে রক্ত, রক্ত বমি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। নারীদের অসময় ঋতুস্রাব, রক্তস্রাব হয়ে থাকে এবং এটা অনেক দিন স্থায়ী হয়। চিকিৎসায় অবহেলা হলে যকৃত, কিডনী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
স্বাভাবিক মাত্রার রোগ হলে এই রোগ এমনিই ঠিক হয়ে যায়। তাই রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসার ধরণ নির্দিষ্ট করতে হবে। ডেঙ্গু হলে যেকোনো অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত ৫-৭ দিনের মাথায় রোগের লক্ষণ দেখা যায়। নিয়মিত বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিট্যামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
নিয়মিত খাদ্য তালিকা
১. ভিটামিনযুক্ত খাবার
প্রচুর প্ররিমাণে সবুজ শাক-সবজি খান। শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে, যা রোগের জীবাণুকে ধ্বংস করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. শাক-সবজি
পালং শাক
পালং শাক মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।
বাঁধাকপি
কপিতে পাওয়া যায় ভিটামিন এ, সি এবং ই যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পরিপূর্ণ খাদ্যগুণ বজায় রাখতে আধ সেদ্ধ করে রান্না করুন।
৩. ফলমূল
কমলালেবু
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলালেবুতে ৫০ মিলিগ্রামই ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
তরমুজ
এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে আছে ‘প্লুটাথায়োন’ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তা প্রতিহত করে।
৪. তরল খাবার
রোগীকে এমন খাবার খাওয়াতে হবে যেন তা সহজে গলাধঃকরণ করা যায়। অসুস্থতার দরুণ তার হজমশক্তি অনেকটা হ্রাস পায়। তাই তাঁকে তরল খাবার খেতে দিতে হবে যাতে তা সহজে হজম হতে পারে।
স্যুপ
মুরগির স্যুপে কারনোসিন নামক উপাদান ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এসকল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
জুস
বিভিন্ন ফলের জুস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৫. রোগপ্রতিরোধী খাদ্য
দই
দই তৈরির মূল উপাদান হলো দুধ। এটি ‘ল্যাকটিক অ্যাসিড’ শরীরের রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে।
রসুন
রসুনে অনেক রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান রয়েছে। রসুন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া উভয়ের সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। রসুনে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস রোগীকে সুস্থ হতে অনেকখানি সহায়তা করে। খেতে ইচ্ছে না হলে, খেতে কষ্ট হলেও তাকে খাওয়াতে হবে।বমি হলে আবার কিছুক্ষণ পরে কম করে আবার খেতে দিন। রোগের আক্রমণের কারণে তাঁর মুখের রুচি চলে যাবার কারণে এমনটি হয়।
রোগীর সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এতে তাঁর মানসিকতা বিপর্যস্ত হতে পারে। ফলে রোগের তৎপরতা বেড়ে যাবে। রোগীকে তাঁর দ্রুত সুস্থ হওয়ার কথা বলে খাওয়াতে হবে। এতে সে খাওয়ায় উৎসাহ পাবে আর দেখবেন ডেঙ্গুও খুব সহজে সেরে যাবে!
আপনার শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য তুলসী পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন? জেনে নিন আজকের লেখায়|
মন্তব্য করুন