সারা দেশে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। সেইসঙ্গে বাড়ছে মানুষের উদ্বেগ। সকলেই ভাবছেন এই বিপদের পরিস্থিতিতে আমাদের কী কী করা উচিত। এই মারণ রোগ থেকে বাঁচতে কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষভাবে কার্যকরী।
এখন প্রশ্ন হল এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন কীভাবে? গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, পুষ্টি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা খুবই জরুরী।
একটা শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম একজন ব্যক্তির শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আর এই ইমিউন সিস্টেম কিন্তু বিভিন্ন অর্গান, কোষ, প্রোটিং ও টিস্যু নিয়ে তৈরি। তারা একসঙ্গে মিলেই কিন্তু বাইরের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই প্রতিবেদনে আপনাদের বলব এমন কিছু পুষ্টিকর খাদ্যের কথা যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
যা যা খাবেন
ফল এবং সবজি
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব ফল এবং সবজি বিশেষত নীল, লাল, কমলা, হলুদ এবং পার্পেল রঙের হয় সেগুলি আমাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন (যেমন বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই) সরবরাহ করে। এইসব উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
ভিটামিন সি পাবেন যেসব ফল এবং সবজিতে
![নানা রকমের ফল ও সবজির ছবি আঁকা](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2020/04/eat-vitamin-c-rich-foods-1024x683.jpg)
- লেবু
- কমলালেবু
- মৌসম্বি
- আঙুর
- কিউই
- স্ট্রবেরি
- সবুজ এবং লাল লঙ্কা
- ব্রকলি
- পালং শাক
- পাকা বাঁধাকপি এবং ফুলকপি
বিটা ক্যারোটিন পাবেন যেসব ফল এবং সবজিতে
বিটা ক্যারোটিন থাকে নিম্নলিখিত ফল এবং সবজিগুলিতে। যা ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়ে যায়, যা রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
- মিষ্টি আলু
- গাজর
- পালং শাক
- ব্রকলি
- আম
- অ্যাপ্রিকট
প্রোটিন পাবেন যেসব খাবারে
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শ্বেত রক্তকণিকা আকারে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এই কোষগুলি অ্যান্টিবডিতৈরি করে যা শরীরে আক্রমণকারী ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ধ্বংস করে। এই অ্যান্টিবডি হল প্রোটিন। সুতরাং ডায়েটে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যোগ করুন, যাতে শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে।
- দুধ
- দই
- সয়াবিন
- ডিম
- কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তা জাতীয় বাদাম
- বিভিন্ন বীজ যেমন তরমুজ, খরমুজ, সূর্যমুখী ইত্যাদি
- সবরকমের বিনস
প্রোবায়োটিকস
প্রোবায়োটিক এক ধরণের অপাচ্য খাবার যা আমাদের পাকস্থলীতে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, হজমে সহায়তা করে এবং ভালো ভিটামিনের পরিমাণ বাড়ায়। এইসব খাবারগুলি প্রোবায়োটিকের উৎস।
- দই
- কটেজ চিজ
- গোটা দানাশস্য
- কলা
- পেঁয়াজ
- রসুন
- কলাই বা শুঁটি জাতীয়
জিঙ্ক
আমাদের ইমিউনিটা বাড়াতে জিঙ্ক একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এটি কোনও রোগের সংক্রমণ রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যে খাবারে জিঙ্ক রয়েছে।
- সবরকমের শুঁটি (বিনস)
- কাবলি চানা
- ছোলা
- টোফু
- কাজু বাদাম, আখরোট এবং পেস্তা ইত্যাদি
- বিভিন্ন বীজ তরমুজ, ফ্ল্যাকসিড, সূর্যমুখী ইত্যাদি
- দই
ভিটামিন-ডি
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এই ভিটামিন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করে। তাই বিশেষত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে শরীরে ভিটামিন ডি একান্ত প্রয়োজনীয়। যে যে খাবারে ভিটামিন ডি থাকে।
- ডিম
- ফোর্টিফায়েড দুধ
- সয়াবিনের মিল্ক এবং এর থেকে তৈরি টোফু, দই এবং কটেজ চিজ
- ফলের রস
- মাশরুম
সেলেনিয়াম
এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তি যোগায়। আমরা যে যে খাবার থেকে এগুলি পেতে পারি।
- কটেজ চিজ
- ডিম
- ব্রাউন রাইস
- সূর্যমূখীর বীজ
- মাশরুম
- ওটমিল
- পালং
- দুধ এবং দই
- ডাল
- কাজু
- কলা
পর্যাপ্ত হাইড্রেশন
![জল, ফলমূল, স্যুপ, তরমুজ, বাটার মিল্ক, ডাবের জল ছবি আঁকা](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2020/04/coronavirus-hydrate-yourself-1024x683.jpg)
শরীর হাইড্রেটেড থাকলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়ে। শরীর হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, ফলমূল, স্যুপ, তরমুজ, বাটার মিল্ক, ডাবের জল, লেমোনেড (লেবুর জল) ইত্যাদি বেশি করে খান।
মশলা
কিছু মশলা রয়েছে যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ভাইরাস, সংক্রমণ এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনারা খাদ্যতালিকায় এইসব মশলা রাখুন।
- হলুদ- আপনি কাঁচা হলুদ বা শুকনো গুঁড়ো হলুদ রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন আধ ইঞ্চি কাঁচা হলুদ খাওয়া অভ্যেস করুন। এছাড়াও
- আদা
- লাল লঙ্কা
- রসুন
- দারুচিনি
- গোলমরিচ
- সেলেরি
- লবঙ্গ নিয়মিত খান। এছাড়াও
- মাশরুম
- ডাব
- কেশর
যে যে খাবারগুলি খাবেন না
গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে এমনকিছু খাবার আছে, যেগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এইসময় এইসব খাবার কখনোই খাবেন না।
- সোডা
- প্রসেসড ফুড যেমন গ্র্যানোলা বার, মাইক্রোওয়েভড পপ কর্ন, টমেটো সস, ফ্রোজেন ফুড, কুকিজ, কর্নফ্লেক্স, চিপস।
- চিনি রয়েছে এমন পানীয়।
- রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট যেমন চিনি, ময়দা, সাদা পাউরুটি, সাদা চাল, পাস্তা, ব্রেকফাস্ট সেরেলস।
- বিভিন্নরকমের ফাস্ট ফুড যেমন পিৎজা, বার্গার, নুডলস, স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
- পাশাপাসি ক্যাফেন রয়েছে এমন খাবার, যেমন, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক, সোডা, ব্ল্যাক টি, ডার্ক চকোলেট, ডায়েট সোডা, চকোলেট রয়েছে এমন খাবার যেমন, কুকিজ, পেস্ট্রি ইত্যাদি।
- বিভিন্ন রিফাইন্ড অয়েল।
মন্তব্য করুন