শীতের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পর পা রাখবে বসন্ত। আর এই বসন্তের পরিবেশ আপাত অর্থে সুন্দর ও মনোরম মনে হলেও আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়েই কিন্তু শরীরে বাসা বাঁধে রোগ-বালাই। যার মধ্যে জল বসন্ত বা চিকেন পক্স উল্লেখযোগ্য।
আমাদের দেশে এই জলবসন্ত নিয়ে মানুষের মনে নানারকমের কুসংস্কার রয়েছে। অনেকে এই সময়ে রোগীকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন, যার ফলে রোগী আরও দুর্বল হয়ে যায়। তাই কুসংস্কারের বশবর্তী না হয়ে সঠিক উপায়ে এই রোগের মোকাবিলা করুন।
![hand full of chicken pox](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2019/12/hand-full-of-chicken-pox.jpg)
চিকেন পক্স হলে যা যা করনীয়:
- এইসময়ে রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত, তাহলে শরীরে একটু আরাম পাওয়া যায়। তাই স্নান করা বিশেষভাবে জরুরী। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা জলে কখনওই স্নান করাবেন না।
- খুব ভাল হয় যদি জলের মধ্যে নিম পাতা ফুটিয়ে সেই জলে স্নান করা যায়। নিমের অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে।
- এই সময়ে বার বার জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে, তাই এইসময়ে বড়রা প্যারাসিটামল খেতে পারেন, তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন।
- ব্যাথার হাত থেকে নিস্তার পেতে রোগীর শরীর ঠান্ডা জলে মুছিয়ে দিন, এতে ত্বকে খানিকটা হলেও আরাম মিলবে।
- সেই সঙ্গে প্রতিদিন দুবেলা করে জামা-কাপর বদলানো উচিত, তাহলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম হবে।
- এই সময়ে সুতি ছাড়া অন্য কাপরের পোশাক পরবেন না, তাতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
- পক্সের ওপর চরম চুলকানি অনুভব হয়, কিন্তু তার ওপর কখনওই নখ লাগাবেন না।
- এর ফলে ত্বকে স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে, আবার তা থেকে সংক্রমণও ছড়াতে পারে। তাই শিশুদের শরীরে পক্স হলে তাদের নখ ছোট করে কেটে দিন।
- চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগান, আরাম পাবেন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খান এবং পক্সের ওপর অ্যান্টিবায়োটিক মলমও লাগাতে পারেন।
চিকেন পক্স হলে কোন কোন খাবার একেবারেই খাবেন না
![say no to paneer butter chocolate during pox](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2019/12/say-no-to-paneer-butter-chocolate-during-pox.jpg)
- চর্বি ফ্যাট জাতীয় খাবার- মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকোল বা চকোলেট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত তেল-মশলা-যুক্ত খাবার- এমনিতেই শরীর সুস্থ রাখতে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খেতে বারন করেন।
- আর বসন্ত হলে এমনিতেই মুখের ভিতরে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাতে ঝাল লাগলেই প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে, তাই এই সমময়, তেল-ঝাল-মশলা একেবারেই বাদ।
- আরগিনিন-সমৃদ্ধ খাবার- আখরোট, চিনাবাদাম, কিসমিশের মতো খাবার অর্গিনিন নামে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশ বিস্তার করে। এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভাল হলেও বসন্তের সময় তা একেবারেই খাবেন না।
চিকেন পক্স হলে কী ধরণের খাবার খাবেন
![say yes to soup daal juice](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2019/12/say-yes-to-soup-daal-juice.jpg)
- জলবসন্ত হলে রোগীর সাদা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয়, অনেক সময়ে আবার মুখের ভেতরে ক্ষত থাকার জন্য চিবিয়ে কিছু খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই এমন কিছু খাবার খাওয়াতে হবে যা, সহজেই হজম হয়ে যায়।
- এইসময়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। তবে মুখে স্বাদ আনতে পাতলা স্যুপও খাওয়াতে পারেন রোগীকে।
- ইলিশ-চিংড়ি জাতীয় মাছ ছাড়া যেকোনও মাছের পাতলা ঝোল আর ভাতও খাওয়াতে পারেন, অবশ্যই তা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে।
- এই সময়ে ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডালের জলটি যদি চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যায়, তাহলে তাতে শরীর খুব ঠান্ডা থাকে।
- এই সময়ে রোগীকে ফলের রস খাওয়াতে পারেন, এটি শরীরে পুষ্টি যোগাবে। তবে লেবুর রস কখনওই খাওয়াবেন না, কারণ এতে থাকে উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরে ক্ষতস্থানে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
পক্সের দাগ দূর করার ঘরোয়া টোটকা
- জল বসন্ত সেরে গেলেও শরীরে এর দাগ থেকে যায়। তবে এই দাগ চিরতরে নির্মূল করতে খানিকটা তিল, কাঁচা হলুদ এববং ৮-১০টি নিমপাতা বেটে তা ক্ষতের ওপর প্রলেপ দিন। এরপর স্নান করে নিন। আরাম পাবেন।
- এটি কিন্তু পক্স সেরে যাওয়ার পর ব্যবহার করবেন। পক্স থাকাকালীন না।
- পাশাপাশি ক্ষতের ওপর তিলের তেল লাগালেও উপকার পাবেন।
আর এই রোগের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি মাথায় রাখবেন, তা হল এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে প্রকৃতির। কাশি-হাঁচির মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই বাড়িতে কারওর পক্স হলে তার ব্যবহার্য জিনিস আলাদা রাখুন।
মন্তব্য করুন