বর্ষাকাল মানেই সারাদিন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, চারিদিকে জল, অন্ধকার আকাশ, মেঘের গর্জন। এমন দিনগুলোতে কি কাজ করতে ইচ্ছে করে ?অন্য কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করুক না করুক এইসময় ভালো ভালো খাবার খেতে কিন্তু বাঙালিরা কখনোই পিছু পা হয়না। টক, ঝাল, মিষ্টি, সব রকম খাবার এই মরশুমের আনন্দকে দ্বিগুন করে দেয়।
বর্ষাকালে খাবারের কথা উঠলেই সবার আগে মনে আসে খিচুড়ি। বর্ষাকালে খিঁচুড়ি খায় না এমন বঙ্গসন্তান প্রায় নেই বললেই চলে। তাই বর্ষা স্পেশাল খিচুড়ির রেসিপিটি চলুন দেখে নেওয়া যাক।
ঘি খিচুড়ি
উপকরণ
.আলু -৪ টি মাঝারি মাপের ডুমো করে কাটা। ১/২ চা চামচ শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ চিনি, ১/২ চা চমন হলুদ গুঁড়ো, ১১/৪ কাপ মুগের ডাল, ২৫০ গ্রাম ফুলকপি, ৬ কাপ জল, লবন স্বাদ মতো, ৫ থেকে ৬ টি কাঁচা লঙ্কা, ১১/৪ কাপ গোবিন্দ ভোগ চাল, ১/২ বাটি মটরশুঁটি ২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো, ৪ বড়ো চামচ ঘি, তেজ পাতা দুটি, শুকনো লঙ্কা তিনটি, এলাচ (সবুজ ) চারটি। লবঙ্গ ছয়টি, দুটি দারচিনি (১ ইঞ্চি )।
প্রণালী
প্রথমে একটি পাত্র গরম করে তাতে মুগ ডাল ভেজে নিতে হবে খুব সাবধানে যাতে তা পুড়ে না যায়।
এবার চাল ভালো করে ধুয়ে তার থেকে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। একটি ছোট পাত্রে হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, এবং জিরা গুঁড়ো অল্প জল মিশিয়ে পেস্ট মতো বানিয়ে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি ভাজতে হবে। অল্প ভাজা হলে তাতে, কাঁচা লংকা ও হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কাগুঁড়ো জিরাগুঁড়ো পেস্টটি ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এবার চাল ও মুগডাল পাত্রে ঢেলে অল্প আঁচে কিছুক্ষন ভেজে নিতে হবে।
সবজিগুলো ভাজা কালীন অন্য একটি বড়ো পাত্রে পরিমান মতো জল, নিতে হবে। এবার তাতে অল্প লবন, একটি তেজ পাতা, দুটি তিনটি এলাচ দু , তিনটি লবঙ্গ দিয়ে দিতে হবে। জল গরম হয়ে গেলে তাতে সবজি সমেত চাল ও ডাল ঢেলে দিতে হবে। এবার পরিমান মতো লবন ও চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এবার পাত্রটি ঢেকে দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে এক বার ভালো করে নেড়ে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে।
এবার অন্য একটি পাত্রে ঘি ঢেলে গরম করে তাতে শুকনো লঙ্কা, দারচিনি তেজপাতা, এলাচ ও লবঙ্গ ঢেলে দিতে হবে। তেল সমেত গরম মশলা খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেই খিচুড়ি তৈরী।
গরম গরম খিচুড়ির ওপর ঘি ছড়িয়ে,পরিবেশন করুন। সঙ্গে আলুভাজা, বেগুন ভাজা, বা ইলিশ মাছ ভাজা হলে তো কথাই নেই।
বর্ষাকাল মানেই যেমন খিচুড়ি, সেরকমই বর্ষাকাল মানেই ইলিশ মাছ। ইলিশ মাছ ছাড়া বর্ষাকালের আমেজ অসম্পূর্ণ। তাই বর্ষা কালে বাঙালির প্রিয় ইলিশ মাছের রেসিপি দেখে নেওয়া যাক।
সর্ষে বাটা ইলিশ
উপকরণ
ইলিশ মাছ ৪ থেকে ৬ টুকরো। পরিমান মতো সর্ষে বাটা, সর্ষের তেল, কাঁচা লঙ্কা ৪থেকে ৬টি, লবন স্বাদ মতো, হলুদ গুঁড়ো, কালোজিরে ১ চা চামচ (নাও দেওয়া যেতে পারে )।
প্রণালী
সর্ষে বাটা করার জন্য গোটা সর্ষে আগে থেকে হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এরপর মিক্সি বা শিলনোড়ায় দুটো কাঁচালঙ্কা সমেত মিহি করে বেটে নিতে হবে। এর সাথে ১ বড়ো চামচ লবন মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর মাছের টুকরো গুলোকে জল দিয়ে হালকা করে ধুয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে বেশি জল দিয়ে বা বেশিক্ষন জল দিয়ে ধুলে ইলিশ মাছের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাতে পারে। মাছ ধোয়া হয়ে গেলে তাতে ভালো করে লবন ও হলুদ মাখিয়ে রেখে দিতে হবে।
এবার একটি পাত্রে তেল দিয়ে তাতে কালো জিরা ও কাঁচা লঙ্কা ছেড়ে দিতে হবে। লঙ্কা রং বদলে গেলেই তাতে একে একে সর্ষে বাটা, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে পরিমান মতো জল দিয়ে দিতে হবে। এরপর খুব সাবধানে মাছের টুকরো ওই পাত্রে ছেড়ে দিতে হবে। এবার গ্যাস কম করে পাত্রটি ঢেকে দিতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে নিয়ে ১ বড়ো চামচ কাঁচা সর্ষের তেল পাত্রে ঢেলে হালকা করে নাড়িয়ে দিলেই ইলিশ মাছের সর্ষে বাটা তৈরী। গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন। বৃষ্টি ভেজা দুপুরে এর থেকে ভালো খাবার কিছুই হতে পারেনা।
কষা মাংস অতি উপাদেয় খাদ্য বিশেষ করে তা যদি মটন কষা হয়। তাহলেতো কোনো কথাই নেই। তাই খাদ্যরসিক বাঙালির বর্ষা ভোজে মটন কষা তালিকা ভুক্ত করে যেতে পারে।
মটন কষা
উপকরণ
ম্যারিনেট করার জন্য লাগবে পাঠার মাংস ৫০০ গ্রাম, টক দই ১/২ কাপ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ১/২ চামচ, আদা ও রসুন বাটা ২ বড় চামচ, গরম মশলা গুঁড়ো ১ বড় চামচ,
রান্না করার জন্য লাগবে, পেঁয়াজ স্লাইস করে কাটা ১ বড় কাপ, আদা রসুন বাটা চা চামচ, টমেটো পিউরি (১টি টমেটো), ১টি বড় টমেটো কুচি, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ, গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচা লঙ্কা ৩ থেকে ৪ টি চেরা, লেবুর রস ১ বা ২ চা চামচ, সর্ষের তেল, গোটা গরম মসলা (দারচিনি ,এলাচ ,লবঙ্গ ), তেজ পাতা ১টি, শুকনো লঙ্কা ৩টি।
প্রণালী
প্রথমে মাংস ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে দই ভালো করে ফেটিয়ে তার সাথে ম্যারিনেট করার প্রয়োজনীয় মশলা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
বড় একটি পাত্রে মাংস রেখে তার ওপর এই মিশ্রণটি দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে নিতে হবে। এবার পাত্রটিতে ১ চা চামচ তেল দিয়ে আবার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। পাত্রটি ঢেকে দিয়ে মাংসকে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ম্যারিনেট করে রাখতে হবে।এতে মাংস নরম হয়ে যাবে।
এবার একটি বড় পাত্রে তেল গরম করে তাতে আঁচ কমিয়ে তাতে প্রথমে একটু চিনি ও পরে তেজপাতা, শুকনোলঙ্কা ও গরম মশলা দিয়ে দিতে হবে। এবার পাত্রে পেঁয়াজ ও তার পরে একে একে আদাবাটা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়া চাড়া করতে হবে। পেঁয়াজের রঙ বাদামি হতে শুরু করলে তাতে টোমেটো পিউরি ও টমেটো কুচি দিয়ে নাড়তে হবে। এবার এতে শুকনো লংকা ধনে ও জিরা গুঁড়ো দিয়ে দিতে হবে।
মশলা ততক্ষন কষাতে হবে যতক্ষন না কাঁচা টমেটোর গন্ধ চলে যাচ্ছে। এরপর আগে থেকে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে মশলাটি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার পাত্রে অল্প গরম জল ঢেলে ক্রমাগত মাংসকে কষাতে হবে। এবার মাংস থেকে তেল আলাদা হওয়া শুরু হলে পরিমান মতো গরম জল দিয়ে নেড়ে দিয়ে পাত্রটিকে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে ঢাকনা সরিয়ে নাড়া চারা করতে হবে, যতক্ষন না মাংস সিদ্ধ হচ্ছে। রান্না হয়ে গেলে তাতে ১ চা চামচ লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। এবং গরম গরম ভাতের সাথে বা পোলাও এর সাথে বা রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করুন।
মন্তব্য করুন