আমাদের জীবনে যতগুলি সুঅভ্যাস আছে বই পড়া তার মধ্যে অন্যতম। বই মানুষের পরম বন্ধু।মানুষ যদি তারা চিন্তাশীলতার বিকাশ ঘটাতে চায় তাহলে অবশ্যই বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বই পড়লে আমাদের চিন্তা শক্তি বাড়ে এই কথা অনস্বীকার্য। একটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় সে কি ধরণের বই পড়ে। এখন দেখতে হবে কি ধরণের বই আমরা পড়তে পারি। বই তো অনেক রকমেরই আছে কিন্তু বিভিন্ন বই আমাদের চারিত্রিক অধঃ পতনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই সতর্ক ভাবে বই নির্বাচন করাটা দরকার।
খুব ছোট থেকেই বই পড়ার অভ্যাস করা উচিত আমাদের। শিশু সাহিত্যের মধ্যে অগ্রগণ্য হল শুকতারা কিশোর ভারতী, চাঁদমামা,সন্দেশ ইত্যাদি। সাথে সাথে ছবিসহ শিশুদের মহাভারত, রামায়ণের মতো ধর্মগ্রন্থও পড়া যেতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ার অভ্যাস করা খুবই ভালো। আগে প্রায় প্রত্যেকটা পাড়াতেই লাইব্রেরী থাকতো যেখানে ফ্রী রিডিং রুম এবং বই বাড়িতে নিয়ে এসে পড়ার ও সুবিধা থাকত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন এই যে, সেইসব লাইব্রেরী আর এখন দেখাই যায়না। লাইব্রেরী থাকলেও বই পড়ার আগ্রহী লোকের সংখ্যা দিন কে দিন কমেই চলেছে। এর কারণ হতে পারে বর্তমানের ইন্টারনেট বা নানা রকম বৈদুতিন মাধ্যম। কিছু অজানা জিনিষ জানার হলেই আমরা সহজেই গুগল করে নিই কিন্তু তাও আমি বলবো যে হাতে বই নিয়ে পড়ার আনন্দটাই কিন্তু আলাদা।
বেশ কিছু বছর আগে বিয়ে,জন্মদিন,ইত্যাদি অনুষ্টানে বই উপহার দেওয়ার একটা চল ছিল। আজকাল এইসবের চল খুবই কম দেখা যায়। আবার সেই চল নিয়ে আসা জরুরী। বই শুধু নিজে পড়লেই হবে না অন্যকে বই উপহার দিয়েও তাকে বই পড়ানোর অভ্যাস করানো ও খুবই উপকারী। একাকীত্ব কাটাতে বই পড়ার কোনো জুড়ি নেই। সব উচ্চমানের বই পড়ার অভ্যাস আমাদের করা উচিত যেমন ধর্ম গ্রন্থ,ঐতিহাসিক গ্রন্থ,রাজনীতি বিষয়ের গ্রন্থ,অর্থনীতি বিষয়ের গ্রন্থ ইত্যাদি। যদিও মাতৃ ভাষায় বই পড়া সবচেয়ে আনন্দদায়ক কিন্তু তার সাথে সাথে অন্যান্য ভাষাতেও বই পড়ার অভ্যাস করলে নানা রকম ভাষার বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বাড়ে। বর্তমান কর্ম ব্যস্ততার যুগে বই পড়ার অভ্যাস আস্তে আস্তে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ।
কিন্তু সুখের বিষয় এই যে বিভিন্ন বই মেলার মাধ্যমে বই পড়ার অভ্যাসকে জাগ্রত করার চেষ্টা চলছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে কলকাতার পুস্তক মেলা,পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের পুস্তক মেলা ,লেক টাউন বই মেলা ইত্যাদি। বই পড়ার অনেক উপকারের মধ্যে একটি উপকার হলো যে বই আমাদের ভাবনাশক্তি বাড়ায়। আমরা নতুন ধরনের বাক্য জানতে পারি বই পড়লে। দেশ বিদেশের খবর জানতে পারি বই পড়লে।
তাহলে আমরা দেখলাম বই আমাদের কতটা জ্ঞান বাড়ায়। জ্ঞান বাড়ানোর সাথে সাথে কিন্তু বই অনেক সময় আমাদের পরম বন্ধু হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রায়শই দেখতে পারি যে ছেলে মেয়েরা বাইরে চাকরী করতে যাওয়াতে বাবা মায়েরা একাকিত্বতে ভোগেন। বই কিন্তু মানুষের একাকিত্ব কাটাতে খুবই উপকারী। চাকরী বা অন্য কিছুর কারণে আমাদের অনেক সময়ই একা থাকতে হয় ।আপনজনের থেকে দূরে থাকতে বই আমাদের সাহায্য করে। দূর শহরে যখন আমরা আমাদের প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়ে এবং দুঃখ পাই তখন কিন্তু বই আমাদের বন্ধু হয়ে ওঠে। আমাদের চিন্তা,উদ্বেগ,জীবনের চাপ এবং অনেক কিছুই কিন্তু বই খুব সহজেই দূর করে দেয়।
এখন নতুন ই লাইব্রেরীর যুগ শুরু হয়েছে যার সাহায্যে আমরা নেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে খুব কম টাকাতেই বইয়ের অর্ডার দিতে পারি। বিভিন্ন লাইব্রেরী আমাদের বাড়ি থেকে বই নিয়ে যায় এবং আবার আমাদের নির্দেশে পছন্দের বই দিয়েও যায়। শুধু মাসে মাসে খুবই কম টাকা দিতে হবে ব্যাস তাহলেই আমরা পেয়ে যেতে পারি এই সুযোগ। অনেক সময় আমরা একা থাকার ফলে আমাদের মনের ভিতরে নানা রকম দুশ্চিন্তা এবং ভাবনা আসে যা আমরা চাইলে ও ভুলতে পারিনা। বই পড়ার অভ্যাস সে সব চিন্তা দূর করে এবং আমাদের চিন্তা ভাবনার উন্নতি ঘটায়। তাই বইয়ের সম্বন্ধে এত কিছু জানার পর পরিশেষে বলা যায় যে বই আমাদের পরম নীরব বন্ধু।
রানী পদ্মাবতীর জহরব্রত কি কাল্পনিক গল্পকথা না কি ঐতিহাসিক ভাবে সত্য ঘটনা
মন্তব্য করুন