তরুণীদের মধ্যে আজকাল শরীরের লোম দূর করার হিড়িক লক্ষ্য করা যায়। ছোট্ট একটা চালের দানার সমান মৃত কোষ নিয়ে আমাদের কতই না চিন্তা। লোম থাকলে হাত পা দেখতে অসুন্দর লাগে, লোমবিহীন মেয়েদের পাশে নিজেকে বেমানান লাগে – আরও কত কি। এত চিন্তা করতে থাকলে নিজের আত্মবিশ্বাস ঝট করে কমতে সময় লাগেনা এক সেকেন্ডও।
এশীয় নারীদের শরীরে লোমের আধিক্য অন্য অঞ্চলের মেয়েদের চাইতে তুলনামূলকভাবে বেশি। তাছাড়াও জন্মগত সমস্যা, হরমোনের সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে অস্বাভাবিক লোম বৃদ্ধি হতে পারে।
লোম যদি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে তাহলে অন্য কথা, কিন্তু স্বাভাবিক লোমবৃদ্ধিকে প্রতিহত করার জন্য বাজারে প্রচুর চটকদার পণ্য হাজির। কিন্তু এই ধরণের দ্বিধা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আজকের লেখায় আমি নিয়ে এসেছি শরীরের লোম দূর করার জন্য কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি৷
আপনি জানতে পারবেন কিভাবে কম খরচে অনায়াসেই ঘরে বসে শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে পারবেন। তো দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।প্রশ্ন হল – সেসব পণ্য কি আদৌ কার্যকরী?
যান্ত্রিক উপায়ে লোম অপসারণের অপকারিতা
যান্ত্রিক উপায়ে শরীরের লোম দূর করার উপায় হচ্ছে ওয়াক্সিং স্ট্রিপ, শেভিং রেজর, লেজার হেয়ার রিমুভাল, হেয়ার রিমুভাল ক্রিম ইত্যাদি। শেভিং রেজর দিয়ে লোম নিরসন সম্পূর্ণ ব্যথাহীন, কিন্তু সঠিক উপায়ে না করলে ঝক্কি একেবারে কম না। তাছাড়া রেজর ব্যবহার করার পরে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার না করলে ত্বকে লালচে ভাবসহ জ্বালাপোড়া বা চুলকানি অনুভূত হতে পারে। বাজারের ওয়াক্সিং স্ট্রিপের ব্যবহার নিয়েও মহিলারা অনেক সময় অসন্তুষ্ট থাকেন।
বিউটি পার্লারে এক ধরণের বিশেষ সুতো দিয়ে ঠোঁটের উপরের লোম নিরসনের কাজ করা হয়, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। আর লেজার হেয়ার রিমুভাল মানেই বিশাল ব্যাপার। খুব দক্ষ ডাক্তার ছাড়া হবেনা, আর এই জাতীয় চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল হয়।
কাজেই শারীরিক যন্ত্রণা আর খরচের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে পারে একমাত্র ঘরোয়া পদ্ধতিই। ঘরোয়া পদ্ধতিতে লোম নিরসনে সময় হয়তো একটু বেশি লাগবে, একটু ব্যথাও অনুভব করতে পারেন, কিন্তু এটা যথেষ্ট কার্যকরী এবং কম যন্ত্রণাদায়ক।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওয়াক্সিং
বাজারের চটকদার ওয়াক্সিং স্ট্রিপের চাইতে ঘরে তৈরি ওয়াক্সিং আপনাকে দিবে তুলনামূলক ভালো ফলাফল। ঘরে বানানো ওয়াক্সিংকে এক কথায় ‘সুগারিং’ বলা হয়, কারণ চিনি দিয়ে জিনিসটি তৈরি করা হয়। আর ওয়াক্সিং স্ট্রিপ হিসেবে কাজ করার জন্য পরিষ্কার সুতি কাপড়ের একটি টুকরাই যথেষ্ট। বাজারের ওয়াক্সিং স্ট্রিপ যেভাবে ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবেই সুতি কাপড়কে ব্যবহার করতে পারবেন।
চিনির ওয়াক্সিং তৈরি করতে যা যা লাগবে-
- চিনি – আধা কাপ
- লেবুর রস – দুই টেবিল চামচ
- পানি – পরিমাণমত (খুব বেশি না আবার কমও না)
একটি সসপ্যানে সবগুলো উপাদান একসাথে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর সসপ্যানটি চুলায় দিয়ে অল্প আঁচে গরম করতে থাকুন। এই অল্প আঁচের পরিমাণ কোনভাবেই যেন ২৫০ ফারেনহাইটের বেশি না হয়। যখন ফুটে উঠতে শুরু করবে তখনই মিশ্রণটি নাড়তে থাকুন আস্তে আস্তে।
কিছুক্ষণ পর দেখবেন মিশ্রণটি বাদামি রং ধারণ করতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে বাদামী থেকে সোনালী রং হওয়া মাত্রই চুলার আঁচ নিভিয়ে সসপ্যানটি নামিয়ে মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। দেখতে অনেকটা মধুর মত হলেও এই মিশ্রণ মধুর চেয়েও আঠালো এবং ঘন হবে।
এবার মিশ্রণটি ব্যবহারের পালা। অবশ্যই এটি হালকা গরম থাকা অবস্থায় ব্যবহার করতে হবে। হাত স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে একটু ভিজিয়ে নিয়ে প্রথমে পরিমাণমতো মিশ্রণ নিয়ে লোমের জায়গায় লাগান। এখানে একটি ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, লোম যেদিক দিয়ে বের হয়েছে তার ঠিক উল্টো দিকে মিশ্রণটি বিছিয়ে দিবেন। আপনি চাইলে হাতের বদলে আইসক্রিমের কাঠিও ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি লাগানোর পরে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
এবারে আসি সুতি কাপড়ের ওয়াক্সিং স্ট্রিপের ব্যাপারে। এই কাপড়ের স্ট্রিপ হতে হবে এক ইঞ্চি পরিমাণ চওড়া। মিশ্রণ চামড়া থেকে তোলার জন্য কাপড়ের ফালিটি প্রথমে মিশ্রণের উপর ভালভাবে বিছিয়ে নিবেন। তারপর লোম যেদিক দিয়ে উঠে ঠিক সেইদিক দিয়ে কাপড়টি টেনে তুলবেন৷ সব লোম তোলা হয়ে গেলে জায়গাটি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
সুগারিং কতটা কার্যকরী?
এভাবে ওয়াক্সিং করলে প্রচলিত ওয়াক্সিংয়ের চাইতে হাজারগুণে মসৃণ অনুভূতি পাবেন৷ এই ‘সুগারিং’ আপনার লোমের উপর কোন প্রভাব তো ফেলবেই না বরং এই পদ্ধতি লোমের বৃদ্ধি কমাবে প্রচলিত ওয়াক্সিংয়ের মতই। চিনির এই ওয়াক্সিং ব্যবহারের সময়ে লোম ছিঁড়ে যাবারও কোন সম্ভাবনা নেই। সুগারিং আপনাকে হালকা ব্যথার অনুভূতি দিবে, তবে শেভিং রেজরের মত পুরোপুরি ব্যথাহীন কখনোই হবেনা।
চিনির ওয়াক্সিং ব্যবহারের মাত্রা
খুশির খবর হচ্ছে, এটা আপনি ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারবেন, কারণ এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি৷ এই সম্পূর্ণ কাজটি করতে খুব বেশি হলে ১০ মিনিটের মত সময় লাগবে। বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য মাত্র ১০ মিনিট খরচ করুন, আর হয়ে যান ‘পার্টি ক্র্যাশার’।
এই ‘সুগারিং’ ব্যবহার করতে পারবে নারী-পুরুষ উভয়েই। নারীরা হাত-পায়ের লোম, ঠোঁটের উপরের ও মুখের অবাঞ্ছিত লোম, এমনকি বগলের লোমও তুলতে পারবেন এই পদ্ধতিতে৷ পুরুষেরা এটা দিয়ে হাত-পায়ের লোম তুলতে পারলেও দাঁড়ি-গোঁফ নির্মূল করার জন্য ভুলেও এটা ব্যবহার করবেন না। কারণ দাঁড়ি-গোঁফ শরীরের অন্যান্য লোমের তুলনায় অনেক মোটা এবং শক্ত। সুগারিং এখানে কাজ করতে ব্যর্থ, ব্যবহার করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
শেষ কথা
নারীর সৌন্দর্য রক্ষা মোটেই ছোটখাট কোন বিষয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞান নারীদের রূপচর্চার জন্য যতই উন্নত হোক না কেন, নারী ঝুঁকবে সেই আরামদায়ক ঘরোয়া পদ্ধতির দিকেই। এতে খরচ কম, ঝুঁকি কম, ঝামেলাও কম, আরাম বেশি। শরীরের লোম দূর করাটাও এখন নারীর নিত্য রূপচর্চার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন একটি কাজের জন্য চিনি আর লেবুর ব্যবহার শুধু দারুণই না, বেশ সাশ্রয়ীও বটে।
তো এই ছিল আজকের আয়োজন। আজকের আয়োজন নিয়ে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে নির্দ্বিধায় জানান কমেন্টবক্সে। আর শরীরের লোম অপসারণের জন্য এর চাইতেও সহজ আর সাশ্রয়ী কোন উপায় আপনার জানা থাকলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন!
মন্তব্য করুন