দাদ আসলে একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে হয়ে থাকে। দাদ হলে কিন্তু উচিত যে সেইটা খুবই তাড়াতাড়ি সারিয়ে ফেলার। কারণ খুব জলদি দাদ ছোট জায়গা থেকে শরীরের আরো অনেক বড় জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই যত সম্ভব তাড়াতাড়ি দাদ সারিয়ে ফেলা উচিত।
দাদ একটি ছোঁয়াচে রোগও। তাই দাদের চিকিৎসা না করলে সেইটা আমাদের বাড়ির লোকজনদেরও হতে পারে। এত কিছু জেনে নিলাম দাদের সম্বন্ধে, এইবার আমরা ভাবতে পারি যে কোন কোন ঘরোয়া চিকিৎসার ফলে আমরা দাদের সমস্যা দূর করতে পারি। তাহলে জেনে নিই কয়েকটা পদ্ধতি যার ফলে দাদ দূর হতে বাধ্য।
নারকেল তেল
নারকেল তেল যদি দাদের জায়গাতে লাগানো হয় তাহলে তা দাদকে সারিয়ে ফেলতে অনেকটাই সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরণের ত্বকের অ্যালার্জিকে সারিয়ে তুলতে নারকেল তেল খুবই প্রয়োজনী।
হলুদ
দাদ সেরে উঠতে পারে আরেকটি সহজ উপায়ে। টাটকা হলুদের পেস্ট বানিয়ে সেইটা দাদের উপরে লাগালে সেইটা দাদকে সারিয়ে তোলে খুবই জলদি। আমাদের সবার বাড়িতেই রান্নার জন্য হলুদ থাকে। সেই হলুদের পেস্ট যদি দাদে লাগানো হয় তাহলে দাদ সারিয়ে তুলতে সেটা অত্যন্ত কার্যকরী।
কর্পূর
দাদ দূর করার জন্য দাদের সংক্রামিত শরীরের অংশতে কর্পূর লাগিয়ে রাখতে হবে। বেশ কয়েকদিন ধরে দাদে কর্পূর লাগানোর পর আর দাদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়না। কিছুদিনের মধ্যে দাদের দাগটি ও মিলিয়ে যায় গায়ের রঙের সাথে।
পুদিনা ও লেবুর রস
পুদিনা পাতা বেটে তার একটি পেস্ট বানিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে দাদ সংক্রামিত জায়গাগুলিতে ভালো করে লাগাতে হবে। এইরকম ভাবে কয়েকদিন মনে করে লাগালেই দাদ খুব তাড়াতাড়ি উধাও হয়ে যাবে।
রসুন
রসুনের মধ্যে আ্যান্টি ফাঙ্গাল গুন আছে। তার ফলে রসুন দাদকেও সারিয়ে তোলে। রসুনের খুব সরু করে কেটে সেটা আমাদের ত্বকের উপরে কদিন নিয়ম করে লাগালেই আমরা দাদের থেকে মুক্তি পেতে পারি অতি সহজেই। তাই দাদ হলেই , বাড়িতে রসুন বেটে বা সরু করে রসুন দাদের উপর লাগালেই আমাদের দাদ দূর হতে পারে।
উচ্ছে
উচ্ছের পাতা বেটে ,তারপর তার রস বানিয়ে দাদের অংশে লাগাতে হবে। এই পদ্ধতিটি কদিন নিয়ম করে মেনে চললেই খুব জলদি আমরা দাদের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারি।
ঘৃতকুমারী
প্রথমে ঘৃতকুমারীর জেল বের করতে হবে। তারপর সেই ঘৃতকুমারীর রস আমাদের দাদের অংশে লাগাতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা ফলস্বরূপ দেখতে পাই যে দাদ একেবারে সেরে উঠেছে।
এইসব গেল যে আমাদের শরীরে দাদ দেখা দিলে কি কি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু আরো ভালো হতো যদি আমাদের শরীরে দাদই না হতো। আমাদের শরীরে ঘাম এবং ময়েশ্চার বেশী হলে তা আমাদের শরীরের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
বিশেষ খেয়াল
- যত বেশী টাইট জমা কাপড় পড়া হয় ততই বেশী ঘাম হয়ে। আমরা ভারতের মতো গরম দেশে থাকি। আমাদের উচিত গরম কালে সুতির এবং ঢিলা জামা কাপড় পড়া যা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং ঘাম হতে দেয় না।
- গরম কালে দাদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে ওঠে। তাই দাদের ইনফেক্শনের থেকে রক্ষা পেতে আমাদের উচিত অন্যদের তোয়ালে,জামা কাপড়,চুলের সামগ্রী বা বাকি ব্যক্তিগত জিনিস না ব্যাবহার করা ।
- পোষ্য জন্তুদেরও কিন্তু এমন ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত যতদিন না তাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর হচ্ছে ততদিন পোষ্যদেরকে যেন না ছোঁয়া হয়। ছুঁলেও যেন গ্লাভস পরে নেওয়া হয় হাতে। পোষ্যদের হাত দিয়ে ধরলে আমাদের তারপর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অতি আবশ্যক। তারপর আমাদের পোষ্যকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেটেরিনারিয়ান দেখানো উচিত।
তাহলে আজ আমরা দাদের সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানতে পারলাম যে দাদ আসলে কি এবং কিভাবে আমাদের শরীরে দাদের সংক্রমণ হয়। দাদ বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকা দিয়ে সারানো যায় যেমন উচ্ছে,হলুদ,ঘৃতকুমারী,ইত্যাদি ।
খুব বেশিদিন ধরে দাদ আমাদের শরীরে রয়ে গেলে এবং কোনো ভাবেই দাদকে দূর না করতে পারলে আমাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারকে দেখানো। কারণ না হলে দাদটি শরীরে আরো অন্য জায়গাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আমাদের বাড়ির লোকেদেরও দাদের সংক্রমণ হতে পারে।
মন্তব্য করুন