উপরের শিরোনামের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার মনে যদি সন্দেহ বা কৌতুহল জেগে থাকে তবে আমরা বলবো এর উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ! মাত্র সাত দিনেই আপনি পেতে পারেন তাক লাগানো জমকালো স্কিন। তবে তার জন্য দরকার সচেতন প্রয়াস।
কিভাবে? ত্বকের পরিচর্যা, জীবনযাপনে উন্নতি এবং সঠিক মেকআপ এর নির্বাচন।ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেকটা পরিশ্রম ও সমর্পণ দরকার। এই সব কিছুর জন্য আমরা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সাহায্য করবো আজ যার ফলে আপনি প্রোডাক্ট বা মেকআপ তো ব্যবহার করবেনই কিন্তু তার এপ্রোচে আসবে বদল।
নিজের স্কিনটোন সম্পর্কে জানুন:
স্কিনের যত্নে নিজের স্কিন টোন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অত্যন্ত ফায়দা দেয়। এর ফলে স্কিন টোন অনুযায়ী নিজের বুঝতে পারবেন ও সেই মতো কেয়ার ও নিতে পারবেন।
শুস্ক ত্বক:
ম্যাড়মেড়ে ভাব, স্তরপূর্ণ এবং ট্যানড।
তেলতেলে ত্বক:
টি জোন অয়েলি এবং শাইনি।
কম্বিনেশন ত্বক:
টি জোন তেল জবজবে কিন্তু গাল ও চোয়াল অংশে শুস্ক।
নর্মাল ত্বক:
না বেশি অয়েলি না বেশি শুস্ক।
সেনসিটিভ ত্বক:
সহজে লাল হয়। প্রদাহ যুক্ত ও চুলকুনি প্রবন।
নিয়মিত সিটিএম রুটিন ফলো করুন :
সিটিএম বলতে বোঝায় ক্লিঞ্জিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং। ত্বকের সমস্যার মোকাবিলায় এই তিনটি ফর্মুলা কিন্তু মন্ত্রের মতো কাজ করে। তাই নিজের স্কিনের টাইপ বুঝে তার হাল ফেরাতে এই তিন ফর্মুলা উপযোগীতার নিরিখে ব্যবহার করুন। দিনে দুবার ব্যবহারই যথেষ্ট। তবে এই তিনটি প্রোডাক্ট কেনার সময় তাতে ত্বক এর ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিকারী উপাদান যেমন গ্রেপ বীজ এর নির্যাস, আজলেইক এসিড, কোজিক এসিড, হাইড্রোকুইনন ও মালবেরি নির্যাস ইত্যাদি বেশি বেশি পরিমাণে আছে কিনা দেখে নেওয়া বাঞ্চনীয়।
এক্সফোলিয়েটর এর খাস দেখভাল:
এটা স্কিনে না থাকলে তার উপর মৃতকোষ জমে মুখ দেখায় ডাল। কোনো স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর তাই কাজে লাগাতে পারেন। এক্সফোলিয়েটর যেন খুব বেশি রুক্ষ না হয় সেদিকে ধ্যান দিন। এতে গ্রাউন্ড পার্টিকেল বা বৃত্তাকার সূক্ষ কণা থাকে যা সহজেই মৃতকোষ অপসারণ করে। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এ আলফা ও বিটা হাইড্রক্সি এসিড রয়েছে কিনা যাচাই করে নেবেন। এগুলো পোরস সাফ করে ও স্কিনে মৃদুলতা আনে। এসব এসিড এর ক্ষেত্রে অবশ্য দেখে শুনে এগোনোই ভালো। ল্যাকটিক এসিড বা ম্যাডেলিক এসিড এর ব্যবহার বিগিনিয়ার দের জন্য আদর্শ।
খোসার মাস্ক মাস্ট:
খোসার মাস্ক স্কিন করে মসৃন ও স্কিন টোন ও টেক্সচার এর সাম্যতা আনে বেশি পরিমাণে ডেডস্কিন সেল সরিয়ে দিয়ে। এমন খোসার মাস্ক ইউজ করবেন যাতে প্রাকৃতিক ফল এর উৎসেচক বেশি পরিমাণে থাকবে। যেমন আনারস বা পেঁপে। গ্লাইক্লিক এসিড এর ভাগ যেন কম থাকে। তাই মাইল্ড ফল এর ব্যবহার শ্রেয়।
বহুমুখী লাভজনক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বাছুন:
মাল্টিপল সুবিধে দেখে নেওয়া অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ। উদাহরণ হিসেবে এমন ময়েশ্চারাইজার বাছবেন যাতে এন্টি এজিং ও স্কিনের উজ্জ্বলতা বর্ধক প্রপাটিজ দুইই থাকবে বা এমন ক্রিম নেবেন যা ব্লেমিশ ও স্কিন টোন পাতলা করার দুটোর কাজই করবে। রেটিনল বা ভিটামিন এ হলো ত্বকের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ক্লিনিক্যাল একটি সমীক্ষা বলছে ভিটামিন এ ফাইন লাইন ও বলিরেখা কমায় কোলাজেন সংশ্লেষ ও ত্বকের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে। তাই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এ ভিটামিন এ লাগবেই লাগবে। লাগানোর আগে প্যাচ টেস্ট করে নেবেন।
স্টিম থেরাপি:
- স্টিম থেরাপি বা গরম জলের বাষ্প মুখে সরাসরি নেওয়া কিন্তু কার্যকরী একটি পন্থা। সপ্তাহে ২-৩বার এর ব্যবহার এ আশাতীত ফল ও মিলেছে।
- ত্বকের পোরস খুলে দেয় ও ইম্পিউরিটি দূর করে।
সানস্ক্রিন কে বানান ধর্ম:
- ইউভি রে থেকে ত্বককে বাঁচানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাইরে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন মেখে তবেই বাড়ির বাইরে পা দেবেন।
- সানস্ক্রিন কেনার সময় এসপিফ ৩০ ও পিএ+++ মিনিমাম থাকা দরকার। কারণ এই দুটো উপাদান ইউভি এ এবং বি দুটো থেকেই সুরক্ষা দেয়।
স্কিনকেয়ার টিপসই যথেষ্ট নয় কেবল তার সাথে জরুরি প্রতিদিনের লাইফস্টাইল ও অভ্যাসকে মনিটর করা ও সঠিক পথে পরিচালিত করা। নাহলে ভেতর থেকে ত্বক উজ্জীবিত হয়ে উঠবে কিভাবে?
লাইফস্টাইল হ্যাকস:
দৈনিক কত পরিমান জল খাচ্ছেন সেটা হিসেবে রাখুন। কমপক্ষে ২ লিটার পরিমান জলের কম ইনটেক হলে চলবেনা। ত্বকের গ্লো ও সামগ্রিক স্বাস্থ উন্নতির জন্য উপযোগী। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্ট্রেচিং ও জগিং সংবহনতন্ত্র ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরে অক্সিজেনের ফ্লো বৃদ্ধি করে। স্বচ্ছ স্কিন তো পাবেনই সাথে ওজন ও কমবে তরতরিয়ে। চিনি ও প্রসেসড ফুড একদম গুডবাই বলে দিন। কারণ এগুলো ত্যাগের উপরেই ত্বকের স্বাস্থ্য ও একনে ও এজিং এর বিষয় গুলি নির্ভর করে। এগুলো কোলাজেন ফাইবার ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বাড়িয়ে ত্বকের ইনফ্লেমেশন বাড়িয়ে তোলে । ত্বকের টানটান ভাব ও উবে যায়। ত্বক থেকে ফ্রি রেডিক্যাল বেরোনো,পি এইচ লেভেলে ভারসাম্য, এইলাস্টিন ও সিবাম গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ এর দিকগুলো ভীষণ উপকারী। এগুলো বজায় রাখতে জোর দিন ভিটামিন ও মিনারেল এর উপরে কারণ ওগুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ।
মেকআপ টিপস:
- ত্বকের ইনস্ট্যান্ট গ্লো এর জন্য কিন্তু সঠিক মেকআপ টেকনিক ও প্রোডাক্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম।
- নিজের মেকআপ এ ফাউন্ডেশন তো লাগানো আপনার অভ্যেস জানি। কিন্তু এবার থেকে সেটা সলিড না হয়ে হোক লিকুইড। কারণ এটা স্পট ও মার্ক্স দ্রুত লুকিয়ে ফেলে।
- ত্বক বেশি ময়েশ্চার পায় বলে বেশি লাইট প্রতিফলিত হয়ে ত্বক দেখায় অনেক বেশি চকচকে।
- হাইলাইটার বা স্ট্রোক ক্রিম মাস্ট লাগাবেন। পারলে ফাউন্ডেশন এর সাথে মিশিয়ে লাগাবেন।বেটার ফল পাবেন। গাল ও ভ্রূ এর কাছে লাগাতে পারেন।
- মেকআপ কিটে এবার থেকে যোগ করুন ফেস অয়েল। কমসময়ে বেশি নিখার এর জন্যে।
- ইলিউমিনেটিং প্রাইমার ও ব্রোঞ্জার পাউডার ব্যবহার করতে পারেন স্কিন টোন অনুযায়ী। এতে স্কিনে আসবে পর্যাপ্ত শেড ও ভেতর থেকে সজীবতা।
মন্তব্য করুন