ঋতুচক্রের স্বাভাবিক নিয়মে মেনেই একসময় হাজির হয় শীত। অনেকের কাছে শীত দারুন মধুমাস হলেও অনেকের কাছেই তা হয় দুর্বিষহ।কারণ, ঠাণ্ডালাগা যে চলতেই থাকে তার সাথে হ্যাচ্ছো হ্যাচ্ছো! আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণের জন্য মাশুল দিতে হতে পারে আপনাকে। তাই এবার শীতে ঠান্ডাকে কড়া হাতে দমন করতে আপনার খাবার তালিকায় থাকুক চ্যবনপ্রাশ।
চ্যবনপ্রাশ মূলত একটি পুষ্টিকর আয়ুর্বেদিক জ্যাম যা আপনাকে করে তোলে জীবনীশক্তিতে ভরপুর ও রোগপ্রতিরোধ এ অনন্য। চ্যবনপ্রাশ এর ফর্মুলা হাজার বছর প্রাচীন। চ্যবনপ্রাশ এই নামটি চ্যবন নামের এক ঋষির কাছ থেকে এসেছে যিনি প্রথম এটি তৈরি করেন গাছগাছড়া ও জড়িবুটির সমন্বয়ে। আর ‘প্রাশ’ শব্দের অর্থ হলো প্রস্তুত করা খাবার। আশ্চর্য করা বিষয় হলো চ্যবনপ্রাশ এর উল্লেখ খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে চরক সংহিতাতেও রয়েছে।
চ্যবনপ্রাশ এর ফর্মুলা
চ্যবনপ্রাশ তৈরি করতে অশ্বগন্ধা, কেশর, নিম, আমলকি, পিপুল, তুলসী, ব্রাহ্মী, এলাচ, সাদা চন্দন, অর্জুন, ঘি, মধু ইত্যাদি উপাদান ব্যবহৃত হয়। চিনিকে এখানে প্রিজারভেটিভ রূপে ব্যবহার করা হয়। এই সমস্ত উপকরণের মিশ্রনে চ্যবনপ্রাশ জ্যাম এর মতোই গাঢ়ত্ব লাভ করে।
আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষই নিশ্চিন্তে এই চ্যবনপ্রাশ খেতে পারে। তবে খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকালবেলা হওয়াই শ্রেয়। ১ চামচ খাওয়াই যথেষ্ট। এমনি খেতে পারেন বা গরম দুধ বা জলের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
চ্যবনপ্রাশ উপকারিতা
- শীতের শুরুতে শুকনো আবহাওয়া ও সেই সাথে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত শিশু থেকে বয়স্ক সকলকেই কাবু করে ফেলে। সর্দিকাশি, ঠাণ্ডালাগা একপ্রকার লেগেই থাকে। তাই ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে মোক্ষম দাওয়াই চ্যবনপ্রাশ।
- চ্যবনপ্রাশ পাকস্থলীর অ্যাসিডগুলির যথাযথ জারণ ঘটায় এবং খাদ্য থেকে সংগ্রহ করা পুষ্টির রক্তে শোষণ ত্বরান্বিত করে। আমলকি হজম ক্ষমতা বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য এর হাত থেকে পরিত্রাণ দেয়।
- ক্রনিক শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা – হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির প্রকোপ শীত পড়লেই বেড়ে যায়। চ্যবনপ্রাশ এর মধ্যে থাকা নানা ভেষজ বনৌষধী ফুসফুস জনিত যেকোনো সমস্যাকে অনায়াসে দূর করে।
- চ্যবনপ্রাশ এর আরেকটি গুন হলো এটি এনটি এজিং। ভিটামিন সি’তে সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আপনার ত্বকে শীতের রুক্ষটান যেমন পড়বেনা তেমনি ত্বক হবে উজ্জ্বল ও ঝলমলে।
- হৃদপিণ্ডের যত্ন নিতেও এর জবাব নেই। এর মধ্যে থাকা অর্জুন আপনার হৃদপিণ্ডের খেয়াল রাখে সাথে ব্লাড প্রেসার ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরিশ্রুত করণে চ্যবনপ্রাশ অদ্বিতীয়।বর্তমান ব্যস্তজীবনে জাঙ্কফুড খাওয়ার জন্য বা সঠিক ভাবে শরীরচর্চা না করার ফলে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে নানা টক্সিন। চ্যবনপ্রাশ সেই টক্সিনকে বের করে দিয়ে রক্তকে করে বিশুদ্ধ।
- শিশুদের চ্যবনপ্রাশ যেকারণে সর্বাগ্রে দেয়া উচিত তা হলো এর মাথার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার গুন। ক্লাস এর পড়া মনে রাখতে সমস্যা হচ্ছে? যার জন্য জুটছে নিত্য বকুনি? চিন্তা নেই। এবার ওদের দিন চ্যবনপ্রাশ। কারণ এটি বৌদ্ধিক বিকাশ ও স্মৃতি শক্তিকে করে তুলবে প্রখর।
- এখন কমবেশি সকলেই যে সমস্যায় ভুগছে তা হলো স্ট্রেস। অফিসে ডেডলাইন থেকে বাড়ির অশান্তি আপনাকে করে তোলে জেরবার। চ্যবনপ্রাশ এর গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান আপনার স্নায়ুকে করে তুলবে সক্রিয় ও চাপ মোকাবিলার উপযুক্ত।
- এছাড়াও চ্যবনপ্রাশ আপনার মেটাবলিক রেটকে বৃদ্ধি করে ফলে শরীর এর অতিরিক্ত মেদ জমতে পায়না। তাই ওজন কমাতে দ্বারস্থ হতেই পারেন চ্যবনপ্রাশ এর।
বাজার চলতি কোন কোন চ্যবনপ্রাশ খাওয়া সত্যি কার্যকরী হবে? এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় ঘোরাঘুরি করছে? প্রশ্নের উত্তর হাজির আপনাদের সামনে।
১. ডাবর চ্যবনপ্রাশ, ১ কেজি, ১৫০ গ্রাম পেস্ট ফ্রি
ডাবর ব্র্যান্ড সকলের পরিচিত, আলাদা করে এর সম্পর্কে বলার নেই। প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ, কেমিক্যাল ফ্রি চ্যবনপ্রাশ এটি। কোন রকমের সন্দেহ ছাড়া এটি চোখ বন্ধ করে সেবন করতে পারেন।
২. পতঞ্জলি চ্যবনপ্রাশ, ১ কেজি
বাবা রামদেবের পতঞ্জলি ব্র্যান্ডের চ্যবনপ্রাশ। আয়ুর্বেদিক উপাদান সমূহ ভরপুর রয়েছে এতে।
মন্তব্য করুন