আগের পর্বে আমরা কয়েকটি সতীপীঠ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আসুন আজ আমরা আরও কয়েকটা সতীপীঠ নিয়ে কথা বলি।
৩১. চন্দ্রনাথ পাহাড়
বাংলাদেশের চিটাগাঙে সীতাকুণ্ড স্টেশনের কাছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে এই তীর্থস্থান। পাহাড়ের ওপরে আছে চন্দ্রনাথ মন্দির। এখানে দেবীর দক্ষিণ হস্ত পতিত হয়। দেবী এখানে ভবানী নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম চন্দ্রশেখর। গৌড়ের রাজা বিশ্বম্ভর শূর সমুদ্রপথে এই মন্দিরে আসার চেষ্টা করেন। ত্রিপুরার রাজা ধন্যমানিক্য চেষ্টা করেছিলেন এই শিবলিঙ্গকে তাঁর রাজত্বে সরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু, তিনি ব্যর্থ হন। তিনি অবশ্য এই মন্দিরের উন্নতিতে অনেক সাহায্য করেন।
৩২. পঞ্চসাগর
উত্তরাখন্ডের তনকপুর রেল স্টেশনের থেকে ১০০ কিমি দূরত্বে লোহাঘাট অঞ্চলে দেবীর নীচের দাঁত পতিত হয়। দেবী এখানে বারাহী নামে পরিচিতা। ভৈরবের নাম মহারুদ্র। রথযাত্রা এখানে বিশেষভাবে পালন করা হয়।
৩৩. প্রভাস
গুজরাটের জুনাগড়ে সোমনাথ মন্দিরের কাছে এই পবিত্র তীর্থস্থান। এখানে দেবীর উদর পতিত হয়েছিল। দেবীর নাম এখানে চন্দ্রভাগা। ভৈরব বক্রতুন্ড রূপে পূজিত। তিনটি নদী এখানে মিলিত হয়েছে- হিরণ, কপিলা আর সরস্বতী। পুরাণ অনুযায়ী, চন্দ্র দক্ষের সাতাশ কন্যাকে বিবাহ করলেও সবচেয়ে ভালোবাসতেন রোহিণীকে। এই জন্য বাকী কন্যারা দক্ষকে অভিযোগ করলে দক্ষ চন্দ্রকে অভিশাপ দেন যে চন্দ্রের ঔজ্জ্বল্য কমে যাবে। তখন চন্দ্র শিবের তপস্যা করেন এই স্থানে ও অভিশাপ থেকে মুক্তি পান।
৩৪. প্রয়াগ
উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে সঙ্গমের কাছে দেবীর হাতের আঙ্গুল পতিত হয়। দেবী এখানে ললিতা নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম ভব। এই স্থানকে এমনিতেও তীর্থরাজ বলা হয় কারন এখানে তিনটি প্রধান নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী মিলিত হয়। এই মন্দিরের এক বিশেষত্ব আছে। এখানে কোন মূর্তি নেই। একটা কাঠের দোলনা আছে। তার ওপরেই দেবীকে কল্পনা করে নেওয়া হয়। এখানে দেবীকে ‘ আলোপী মাতা ’ও বলা হয় কারন দেবী এখানে অদৃশ্য।
৩৫. কুরুক্ষেত্র
বর্তমান কুরুক্ষেত্র বা হরিয়ানার থানেশ্বরে এই শক্তিপীঠ। এখানে দেবীর পায়ের গাঁটের হাড় পতিত হয়। দেবীর নাম সাবিত্রী বা ভদ্রকালী। ভৈরবের নাম স্থানু। কথিত আছে যে যুদ্ধের আগে কৃষ্ণের প্রেরণায় অর্জুন দেবীর কাছে জয়ের প্রার্থনা করেন ও বলেন জয়ী হলে ঘোড়া দেবেন ও জয়ের পর তা দিয়েওছিলেন। এর পর থেকে ভক্তের মনের ইচ্ছা পূর্ণ হলে এখানে সোনা, রূপা বা মাটির ঘোড়া দেওয়া হয়।
৩৬. ত্রিহুত
মধ্যপ্রদেশের মৈহার অঞ্চলে ত্রিহুত পাহাড়ে এই জাগ্রত তীর্থস্থান। এখানে দেবীর দক্ষিণ স্তন পতিত হয়। দেবী শিবানী নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম চন্ড।
৩৭. সাঁইথিয়া
স্থানীয়ভাবে এটি নন্দীকেশ্বর মন্দির নামে পরিচিত। বীরভূমের স্টেশন থেকে দেড় কিমি দূরে এক বট গাছের নীচে এই তীর্থস্থান। এখানে দেবীর গলার আভূষণ বা হার পতিত হয়। এখানে দেবীর নাম নন্দিনী। ভৈরবের নাম নন্দীকেশ্বর।
৩৮. রাজামুন্দ্রী
অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রীতে গোদাবরী নদীর তীরে কোটিলিঙ্গেশ্বর ঘাট মন্দির হল এই শক্তিপীঠ। এখানে দেবীর গন্ডদ্বয় ( দুই গাল ) পতিত হয়। দেবী রাকিনী বা বিশ্বেশ্বরী নামে পূজিতা। ভৈরব দন্ডপাণি নামে পরিচিত। রাজামুন্দ্রীকে দক্ষিণ কাশী বলা হয়।
৩৯ .নয়না দেবী
হিমাচলপ্রদেশের বিলাসপুর জেলায় দেবীর দুই চোখ পতিত হয়। এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় নয়না দেবী মন্দির। দেবীর নাম মহিষমর্দিনী। ভৈরবের নাম ক্রোধিশ। এই মন্দির নির্মাণের পিছনে একটা গল্প আছে। এক রাখাল বালক রোজ দেখত যে এক সাদা গোরু একটা পাথরের ওপর বাঁট থেকে দুধ ঢালছে। এরপর সে স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেল যে ওই পাথর তাঁর প্রতিমূর্তি। সে সব ঘটনা রাজা বীর চাঁদকে বললে রাজা নিজ চোখে যখন ঘটনাটা দেখলেন তখন তিনি এখানে মন্দির করে দিলেন।
৪০. শোনদেশ
মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টকে নর্মদা নদীর উৎসে এই তীর্থস্থান। এখানে দেবীর দক্ষিণ নিতম্ভ পতিত হয়। দেবীর নাম নর্মদা। ভৈরবের নাম ভদ্রসেন।
এখানে আরও কয়েকটা শক্তিপীঠ নিয়ে আলোচনা করা গেল। আশা করি আমরা অনেক তথ্য জানতে পারলাম ও সমৃদ্ধ হলাম।
মন্তব্য করুন