পর্ব -১ ও পর্ব – ২ তে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিপীঠ নিয়ে আলোচনা করেছি। এখানে আরও কয়েকটা সতীপীঠের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
১৮. জ্বালামুখী
হিমাচলপ্রদেশের কাঙরা অঞ্চলে অবস্থিত এই সতীপীঠ একটি জাগ্রত পীঠ। এখানে দেবীর জিভ পতিত হয়। দেবী এখানে সিদ্ধিদা বা অম্বিকা নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম উন্মট ভৈরব। আশ্চর্যের কথা হল এখানে কোন দেবী মূর্তি নেই। এখানে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। এই আগুন কবে থেকে জ্বলছে তা জানা যায় না। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী কাঙরার রাজা ভূমি চাঁদ স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই স্থানে মন্দির নির্মাণ করেন। সম্রাট আকবর এখানে এসে নাকি ওই অগ্নি নেভানোর চেষ্টা করেন জল দিয়ে। তাতে অকৃতকার্য হয়ে তাঁর দেবী শক্তি সম্বন্ধে শ্রদ্ধা হয় ও তিনি মন্দিরের চূড়ায় স্বর্ণছত্র প্রদান করেন। ১৮১৫ সালে এখানে মহারাজ রণজিৎ সিং আসেন ও মন্দিরের গম্বুজ সোনার পাতে মুড়িয়ে দেন। মন্দিরের ভিতরে একটি যন্ত্রকে বস্ত্র, অলঙ্কার সহযোগে পুজো করা হয়।
১৯. অমরকণ্টক
মধ্যপ্রদেশের শোন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই পবিত্র তীর্থস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর বাম নিতম্ভ পতিত হয়। দেবী এখানে কালী রূপে অবস্থান করছেন। মহাদেব অসিতানন্দ ভৈরব নামে পূজিত। শোনা যায় যে সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা এই মন্দির নির্মাণ করেন ছয় হাজার বছর আগে। আরও অনেক গল্প কথা স্থানীয় মানুষদের থেকে শোনা যায়।
২০. কন্যাকুমারীকা
ভারতের মূল ভূখন্ডের সবচেয়ে দক্ষিণে এই শক্তিপীঠ। তামিলনাড়ুর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এখানে দেবীর পিঠ পতিত হয়। দেবীর নাম এখানে সর্বাণী। ভৈরব নিমিষ নামে পূজিত।
২১. কঙ্কালীতলা
বীরভূমের বোলপুর স্টেশন থেকে ১০ কিমি উত্তর-পূর্বে কোপাই নদীর তীরে এই সিদ্ধস্থান অবস্থিত। দেবী স্থানীয় মানুষদের কাছে কঙ্কালেশ্বরী নামে পরিচিত। এখানে দেবীর শ্রোণি পতিত হয়। দেবীর নাম এখানে দেবগর্ভা ও ভৈরব রূরূ নামে প্রসিদ্ধ। পাশেই একটা কুন্ড আছে যার জল নাকি কখনও শুকায় না।
২২. কর্নাট
হিমাচলপ্রদেশের কাঙরা অঞ্চলেই এই তীর্থস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর কর্ণযুগল পতিত হয়। দেবী জয়দুর্গা রূপে পূজিতা ও ভৈরব আভীর নামে পরিচিত।
২৩. কিরীট
মুর্শিদাবাদের লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন থেকে ৩ কিমি দূরে কিরীটকোনা গ্রামে এই সতীপীঠ অবস্থিত। এখানে দেবীর কিরীট বা মাথার মুকুট পতিত হয়। দেবী এখানে বিমলা নামে পরিচিত। ভৈরবের নাম সম্বর্ত। দেবীকে মুকটেশ্বরী নামেও ডাকা হয়। হাজার বছরের প্রাচীন এই মন্দির। আসল মন্দির ১৪০৫ সালেই ধ্বংস হয়ে যায়। নতুন মন্দির নির্মাণ করেন ১৯ শতকের লালগোলার জমিদার দর্পনারায়ণ। কথিত আছে যে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত মীরজাফর নাকি মৃত্যুকালে দেবীর চরণামৃত চেয়েছিলেন।
২৪. আনন্দময়ী
হুগলীর খানাকুল-কৃষ্ণনগরের রত্নাকর নদীর তীরে এই তীর্থস্থান। এখানে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ পতিত হয়। দেবী কুমারী নামে অবস্থান করছেন। ভৈরব শিব রূপে পূজিত। স্থানীয় ভাবে মন্দিরটি রত্নাবলী মন্দির নামেও পরিচিত।
২৫. ভ্রামরী
জলপাইগুড়ির তিস্তা বা ত্রিস্রোতা নদীর তীরে বোদা নামে ছোট গ্রামে, এই তীর্থস্থানে দেবীর বাম পদ পতিত হয়। দেবী ভ্রামরী নামে পরিচিত। ভৈরব অম্বর রূপে পূজিত।
২৬. মানস
তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে কৈলাসের পাদদেশে এই তীর্থস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর দক্ষিণ হস্ত পতিত হয়। দেবী এখানে দাক্ষায়ণী নামে পরিচিত। ভৈরব অমর নামে প্রসিদ্ধ। মানস শৈবতীর্থ রূপেই বেশি পরিচিত।
২৭. মণিবন্ধ
রাজস্থানের পুষ্করের কাছে গায়ত্রী পাহাড়ে এই সতীপীঠ অবস্থিত। আজমীরের ১১ কিমি উত্তর-পূর্বে এই স্থানে দেবীর কবজি পতিত হয়। স্থানীয় মানুষ এই মন্দিরকে চামুন্ডা মাতা মন্দির বলেও ডেকে থাকেন। দেবীর নাম এখানে গায়ত্রী। মহাদেব সর্বানন্দ ভৈরব রূপে পূজিত। নবরাত্রির সময়ে বিশাল মেলা হয়।
২৮. মিথিলা
নেপাল ও ভারতের সীমানার কাছে জনকপুর রেল স্টেশনের কাছে এই পবিত্র তীর্থস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ পতিত হয়। দেবীর নাম এখানে উমা। ভৈরব মহোদর নামে প্রসিদ্ধ।
২৯. নয়নাতিভু ( মণিপল্লবম )
শ্রীলঙ্কার উত্তরাংশে জাফনা থেকে ৩৬ কিমি দূরে এই পবিত্র তীর্থস্থান। কথিত আছে যে দেবীর মূর্তি ইন্দ্র দ্বারা স্থাপিত ও পূজিত হয়েছিল। এখানে দেবীর পায়ের নূপুরদ্বয় পতিত হয়। এখানে দেবীর নাম ইন্দ্রাক্ষী বা ভুবনেশ্বরী। ভৈরবের নাম রাক্ষসেশ্বর।
৩০. পশুপতিনাথ
পশুপতিনাথ শৈবতীর্থ রূপেই আমাদের কাছে বেশী প্রসিদ্ধ। কিন্তু, শক্তিপীঠ রূপেও এই স্থানের মাহাত্ম্য বিপুল। এখানে দেবীর উভয় হাঁটু পতিত হয়। দেবী মহাশিরা নামে পূজিতা। ভৈরবের নাম কপালী। এই মন্দির গুহ্যেশ্বরী মন্দির নামেও পরিচিত।
এখানে আমরা কয়েকটি সতীপীঠ নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি অনেক তথ্য জানা গেল। পরবর্তী পর্বে আমরা আবার নতুন কয়েটি শক্তিপীঠের সঙ্গে পরিচিত হব।
মন্তব্য করুন