একবার ভেবে দেখুন, আপনার হয়ত কোনও ইন্টারভিউ আছে। বা হয়ত কোনও মিটিং আছে। কিন্তু আপনি বাথরুম ছেড়ে বেরোতেই পারছেন না। আর এর কারণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। আপনার মধ্যে সব সময়ে এই অস্বস্তি থাকবে যে পেট আপনার পরিষ্কার হয়নি। তার উপর আপনি নতুন করে কিছু খেতেই পারবেন না। আপনার পেট ভার লাগবে। আপনার যদি এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হয় তাহলে হজমের দিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য ওষুধ তো অনেক রয়েছে, কিন্তু ওষুধের তো সাইড এফেক্ট ও থাকে। তার থেকে ভাল হয় না যদি ঘরে বসেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। আর এ ক্ষেত্রেই আপনি জুসের সাহায্য নিতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে জুস কেন
জুসের আছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার। আর আছে ভাল পরিমাণে জল। এই জল মল নরম করে। ফাইবার মল তৈরি হতে আর শরীর থেকে তা নির্গত হতে সাহায্য করে। সরবিটল বলে এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট থাকে জুসে যা মল পরিষ্কার করে। এ ছাড়া জুসের মধ্যে যে ভিটামিন বা মিনারেল থাকে তা তো আমাদের শরীরের সার্বিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। এবার জেনে নিন কী ভাবে জুস খেতে হবে।
জুস কীভাবে খাবেন
জুস খেতে হবে মানে এমন নয় যে অনেকটা করে খেতে হবে। রোজ এক কাপ করে জুস খান। তবে এতে কোনও চিনি মেশাবেন না। আপনি রোজ সকালে উঠে এই জুস আগে খান। পারলে এর মধ্যে অল্প একটু জিরে দিতে পারেন। এতে খানিক চটপটা স্বাদ আসবে। এর সঙ্গে সঙ্গে কোলন থেকে টক্সিনও বের হয়ে যাবে।
কী কী জুস খাবেন
এবার আসুন জেনে নিই যে আপনি কী কী জুস খেলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন।
১. আলুবোখারার রস
আলুবোখারার মধ্যে আছে ডায়েটারি ফাইবার আর সরবিটল যা মলের নির্গমনে গতি আনে। মধু স্বাভাবিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে।
উপকরণঃ৫-৬টি আলুবোখারা, ১/২ চা চামচ মধু, ১/২ চা চামচ জিরা, ১ কাপ গরম জল
পদ্ধতিঃ
ক. প্রথমে আলুবোখারা গরম জলে ৫ মিনিট মতো রেখে দিন।
খ. এবার আলুবোখারা নরম হয়ে গেলে আপনি তার থেকে বীজ বের করে নিন আর শাঁস মিক্সিতে জলের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন।
গ. এবার ওই রসের মধ্যে মধু আর জিরা মেশান।
ঘ. এই মিশ্রণটা এবার ভালো করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন একটি পাত্রে আর খেয়ে নিন।
২. নাসপাতির রস
নাসপাতির মধ্যেও আছে ফাইবার আর আলুবোখরার তুলনায় এর মধ্যে দ্বিগুণ পরিমাণে সরবিটল আছে। যেহেতু সরবিটল মলের নির্গমনে বাঁধা দূর করে, তাই এই রস কোষ্ঠকাঠিন্যে দারুণ কাজ দেয়। এর সঙ্গে নিতে পারেন লেবুর রস, যার মধ্যে আছে ভিটামিন, মিনারেল যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উপকরণঃ
বীজ বের করা ২টি নাসপাতি, ২ চামচ লেবুর রস, এক চিমটে সৈন্ধব লবণ।
পদ্ধতিঃ
ক. নাসপাতি কেটে নিন আর মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন।
খ. এবার এটি থেকে খোসা চিপে নিয়ে রস অন্য পাত্রে ঢালুন।
গ. এই রসের মধ্যে লেবুর রস আর সৈন্ধব লবণ মেশান।
ঘ. ভালো করে নাড়িয়ে এবার খেয়ে নিন।
৩. আপেলের রস
আপেলের মধ্যেও খুব ভালো পরিমাণে ফাইবার আছে। এর সঙ্গে আছে ভিটামিন আর মিনারেল। এছাড়াও একটি ল্যাক্সেটিভ গুণ রয়েছে। এর সঙ্গে মৌরি গুঁড়ো নিতে পারেন যার মধ্যে আছে ডায়াটেরি ফাইবার আর তাই এটি মলের মধ্যে জলের অংশ যোগ করে মল করে নরম।
উপকরণঃবীজ ছাড়ানো ১টি আপেল, ১/২ চামচ মৌরি গুঁড়ো, ১/২ কাপ জল।
পদ্ধতিঃ
ক. আপেল টুকরো করে কেটে নিয়ে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। সঙ্গে জল দেবেন।
খ. এবার রস বের করে নিন একটি পাত্রে।
গ. এই রসের মধ্যে একটু মৌরি গুঁড়ো দিয়ে দিন, খেতে ভালো লাগবে।
৪. কমলালেবুর রস
কমলালেবু হল ভিটামিন সি, মিনারেল আর ডায়াটেরি ফাইবারে সমৃদ্ধ। ডায়াটেরি ফাইবার মলে জল শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়, মল তাই নরম হয়।
উপকরণঃ১ কাপ কমলালেবুর কোয়া, ১/২ চামচ সৈন্ধব লবণ।
পদ্ধতিঃ
ক. মিক্সিতে কমলালেবু ঘুরিয়ে নিন।
খ. এবার এর থেকে রস বের করে নিন একটি পাত্রে।
গ. রসের মধ্যে খানিক সৈন্ধব লবণ মেশান আর খেয়ে নিন।
৫. পাতিলেবুর রস
পাতিলেবুতে আছে ভিটামিন সি আর ফাইবার, যা খালি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর সঙ্গে নিতে পারেন জিরে গুঁড়ো যা হজমে সাহায্য করে। আর মধুতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা টক্সিন বের করে।
উপকরণঃঅর্ধেক লেবু, ১ কাপ গরম জল, ১ চা চামচ মধু, ১/২ চা চামচ জিরে গুঁড়ো।
পদ্ধতিঃ
ক. গরম জলে লেবুর রস, মধু আর জিরে গুঁড়ো মেশান।
খ. ভালো করে নেড়ে খেয়ে নিন।
অতিরিক্ত বক্তব্য
এবার আসুন অন্য কিছু কথাও জেনে নেওয়া যাক,
ক. এই রসে কিন্তু শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।
খ. তাই ডায়াবেটিস থাকলে এই রস খাওয়া খুব একটা ভালো হবে না।
গ. খুব বেশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে খাওয়া ঠিক নয়।
তবে সাধারণ ভাবে সকালে উঠে এই কয়েকটি রস, যেটা আপনার ভালো লাগবে সেটা খেলে কিন্তু আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই কমবে।
মন্তব্য করুন