গরমটা বেশ ভালোই পড়েছে, কি বলেন! আর তার উপর কাজের জন্য আমাদের তো রোজই বাড়ির বাইরে যেতে হয়। আর তারপর ঘেমে স্নান করে, প্রায় সিদ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। অফিস থেকে বাড়ি, বাড়ি থেকে অফিস, এই করতে করতে আপনি নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে গেছেন। এবার আপনার মন চাইছে একটু ছুটি। কিন্তু এই বাজারে সরকারী কর্মচারী না হলে আপনি না পাবেন একসঙ্গে ১৫ দিনের ছুটি, না পাবেন অতো টাকা। তাই ছোট ট্রিপ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই আপনাদের আজ চারটি জায়গার কথা বলব, যেখানে আপনি মাত্র তিন দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারবেন।
১. খরিবিল
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেই তো যাচ্ছেন। তাই যদি একটু নিরিবিলি জায়গা হয় তাহলে মন্দ হয় না। আর সেটাও যদি হয় কটেজে থেকে। হ্যাঁ, এই সবই আপনি পাবেন খরিবিলে। কলকাতা থেকে ২৩৫ কিলোমিটার আর দীঘা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ওডিশায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি ওডিশা সরকারের তত্ত্বাবধানে আছে এই বিচিত্রপুর ন্যাচার ক্যাম্প। সুবর্ণরেখা নদীর ধারে এই জায়গায় আপনি কিন্তু আপনার মনের আনন্দে সময় কাটাতে পারবেন।
কী কী করা যাবে
আপনি যদি শুধু সারাদিন কটেজে বসে থাকতে চান সেটা যেমন করতে পারবেন, তেমনই সামনে ঘুরতে যেতে চাইলে তাও পারবেন। আপনি যেতে পারেন চন্দনেশ্বর শিব মন্দির আর তার সঙ্গে ভুশন্ডেশ্বর শিব মন্দির। বলা হয় ভুশন্ডেশ্বর শিব লিঙ্গ নাকি ভারতের সবচেয়ে বড় শিব লিঙ্গ। এর পাশাপাশি আপনারা উদয়পুর সি বিচ যেতে পারেন যা এখান থেকে ১৩ কিলোমিটার মতো দূরে। আর বিকেলে বোট ভাড়া করে সুবর্ণরেখার বিচে গিয়ে ঘুরে আসতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
কীভাবে যাবেন
আগেই বলেছি, এটি দীঘার খুবই কাছে। তাই আপনি আগে দীঘা গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে খরিবিল যেতেই পারেন। বাস, অটো সব কিছুর মাধ্যমে এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। আর এখানে থাকার কটেজ, যেখানে থাকবেন সেখানে আতিথেয়তার কোনও কমতি হবে না। আপনি সামুদ্রিক কোনও খাবার খেতে চাইলে আপনাকে করে দেওয়া হবে।
কত খরচ
এক দিনে দু জনের হিসেবে খরচ হবে ৩০০০ টাকা মতো। এটি কিন্তু খাবারের খরচ নিয়ে।
২. আশানবনি
পাহাড়ের কোলে, সবুজের মধ্যে কয়েক দিন কাটাতে চান? তাহলে এই আশানবনিতে চলে আসুন। কলকাতা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে, জামসেদপুর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে এই আশানবনি দলমা পাহাড়ের কোলে সুন্দর ডেস্টিনেশন। এই জায়গাটি মূলত ঝাড়খণ্ড সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কী কী করা যাবে
এখানে গিয়ে কিন্তু আপনাকে ঘরে বসে থাকলে হবে না। অনেক কিছু দেখার আছে। চান্ডিল ড্যাম, দলমা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, জুবিলি পার্ক, সাই বাবার মন্দির, এগুলো আপনাকে দেখতেই হবে। স্যাংচুয়ারিতে আপনি অনুমতি নিয়ে একটি ট্রিপ করতে পারেন হাতি আর হরিণ দেখার জন্য। ভাবতে পারছেন সেই অনুভূতির কথা! দলমা হিল ৯ কিলোমিটার দূরে, যেখানে গিয়ে আপনি ছোটখাটো ট্রেকিং করে নিতে পারবেন। আর চান্ডিল ড্যামে বোটিং করতে তো একদমই ভুলবেন না। চান্ডিল ড্যামের কাছেই রয়েছে শিষ মহল অডিটোরিয়াম, সেখানেও যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
আশানবনির কাছের স্টেশন হল টাটানগর, ১৭ কিমি দূরে। আপনি হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। রাঁচি আর জামশেদপুরেরও কাছে আশানবনি, আপনি সেই দিক থেকেও যেতে পারেন। তা ছাড়া যদি আপনি চান ড্রাইভ করে যাবেন নিজের গাড়ি নিয়ে, তাও পারেন কারণ এটি ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩২ আর ৩৩ এর সঙ্গে খুব ভালো ভাবে যুক্ত।
কত খরচ
এক দিনের জন্য দু জনের হিসেবে ৩৫০০ টাকার কাছাকাছি খরচ হবে। এটি কিন্তু খাওয়া খরচ নিয়ে।
৩. ছোট কলাগাছিয়া
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাবেন না, এখানেই থাকবেন? তাহলে চলে যান সুন্দরবনের ছোট কলাগাছিয়ায়। কলকাতা থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে নদীর ধারে ছোট্ট সুন্দর একটি জায়গা। ছোট কলাগাছিয়া নদী আর রামপুর নদীতে আপনি দেখতে পাবেন সারাদিন ধরে কত মানুষ যাচ্ছে আর আসছে। আর যেহেতু একটু গ্রামের মতো তাই বুঝতেই পারছেন গরমে আরাম পাবেন ভালো।
কী কী করা যাবে
নদীর ধার, গ্রাম, পুরনো মন্দির, মসজিদ এই সব নিয়ে সুন্দরবনের এই জায়গা একদম পারফেক্ট পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। আপনি ফেরি ঘাট থেকে বোট ভাড়া করে নদীপথে সুন্দরবন ঘুরে দেখতে পারেন। যদি বাঘ দেখতে পান, ভাবতে পারছেন! আপনি লোকাল গাইড নিয়ে ঝিঙেখালি ওয়াচ টাওয়ার, মরিচঝাঁপি গ্রাম ঘুরে আসতে পারেন। মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে হয়ে যাবে। নানা রকমের পাখি, বন্য প্রাণী দেখতে দেখতেই কিন্তু আপনার সময় কেটে যাবে।
কীভাবে যাবেন
যদি আপনি গাড়ি করে যান, তাহলে সাইন্স সিটির থেকে বাসন্তী হাইওয়ে নিয়ে নিন আর যান মালঞ্চ। মালঞ্চ থেকে আপনি যান সরবেরিয়া আর সেখান থেকে বাঁ দিক ধরে ধামাখালি। এখানেই আপনার লজ পড়বে। সাইন্স সিটি থেকে ধামাখালি যাওয়ার বাসও আছে যা মাত্র দুই ঘন্টায় আপনাকে পৌঁছে দেবে।
কত খরচ
এক দিনের জন্য দু জনের হিসেবে ২০০০ – ২৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
৪. গড়পঞ্চকোট
নিশ্চয়ই নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, বেশ একটা ঐতিহাসিক ছোঁয়া পাবেন এই গড় কথাটা থেকে। কলকাতা থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়ায় এই সুন্দর জায়গাটি অবস্থিত। পাঞ্চেত পাহাড়ের কোলে অনেক পুরনো মন্দির বার বার আপনাকে ইতিহাসের কাছে আনবে যেমন, তেমনই পাঞ্চেত লেক, সবুজ গাছপালা, ঝর্না আপনার মন সতেজ করবে।
কী কী করা যাবে
এখানকার অন্যতম আকর্ষণ পাঞ্চেত লেক মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। ৪২৩২ স্কয়ার মাইল এই লেকে আপনাকে বোটিং করতেই হবে। এখান থেকে মাত্র ২২ কিমি দূরে রয়েছে মইথান ড্যাম। এছাড়াও বিকেল কাটাতে পারেন বরাকর নদীর ধারে। সঙ্গে রয়েছে জয়চন্ডী পাহাড়, মুরাদ্রি লেকে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। এই সব জায়গায় আপনি অনেক পাখি দেখতে পাবেন সুন্দর সুন্দর।
কীভাবে যাবেন
ট্রেনে আসতে হলে বরাকর বা আসানসোল স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ট্রেকার নিয়ে আসুন গড়পঞ্চকোট। এক ঘণ্টা লাগবে। যদি গাড়িতে করে আসতে চান তাহলে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২ ধরুন। আসানসোল আসার পর বাঁ দিক নিন আর রঘুনাথপুরের দিকে আসুন। সেখান থেকে সাতবাড়ি আসার পর আপনার রাস্তা মাত্র কয়েক কিমি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
কত খরচ
রিসর্ট, লাক্সারি টেন্ট, হোটেল সবই এখানে পাবেন। এখানে খরচ একটু বেশি পড়বে। ৩,৫০০ টাকা মতো ধরে রাখতে পারেন এক দিনের হিসেবে।
এই চারটি জায়গার মধ্যে যে কোনও একটিতে এবার চলেই যান সবাইকে নিয়ে। কাজের মাঝে একটু নিজেকে আর পরিবারকে তো সময় দেওয়া দরকার, তাই না!
মন্তব্য করুন