আজকে নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের গ্রামীণ স্টাইলে মুরগী রান্নার মজাদার ৩টি রেসিপি, যা খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকলে বহুদিন। এই সুস্বাদু ৩টি তরকারি পোলাও, ভাত, বা খিচুড়ির সাথে বেশ ভালো লাগবে খেতে। তো দেরি না করে ঝটপট পড়ে ফেলুন আর বানিয়ে নিন নিজের পছন্দসই যেকোন একটি রেসিপি।
রেসিপি ১
যা যা লাগবেঃ
- • দেড় কেজি ওজনের ১টি বড় মুরগী
- • ২টি বড় আলু (টুকরা করে নিতে হবে)
- • আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি
- • ১ টেবিল চামচ আদা বাটা
- • ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা
- • ১ চা চামচ জিরা বাটা (চাইলে জিরা গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন)
- • দেড় চা চামচ মরিচ গুঁড়া
- • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
- • ৩টি তেজপাতা
- • ৩ টুকরা দারচিনি (দেড় ইঞ্চি সাইজের হতে হবে)
- • ১ চা চামচ আস্ত জিরা (চাইলে না-ও দিতে পারেন)
- • ৪-৫ টি এলাচ
- • ৫-৬ টি কাঁচামরিচ
- • ১ চা চামচ ভাজা জিরা গুঁড়া
- • ১ চা চামচ গরম মশলা গুঁড়া
- • লবণ (স্বাদমতো)
- • ১/৪ কাপ তেল
যেভাবে রাঁধবেন
প্রথমে একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে আস্ত জিরা, তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ ভেজে ফোঁড়ন দিয়ে তারপর ওতে পেঁয়াজ কুচি ঢেলে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ যখন বাদামি রং হবে তখন অল্প পানি দিন। এখন ভাজা জিরা গুঁড়া ও গরম মশলা গুঁড়া বাদে বাকি সব মশলা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন।
মশলা কষানো হলে তাতে প্রথমে আলু কষিয়ে নিন, তারপর মুরগী দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে থাকুন। মাঝে মাঝে মাংস আর আলু একটু নেড়ে দিবেন। এটাতে পানি দেয়ার দরকার নেই আর। মাংস থেকে যখন পানি বের হয়ে আসবে সেটা দিয়েই মাংস কষিয়ে নিবেন। কষানো হয়ে গেলে ঝোলের জন্য তখন পরিমাণমতো পানি দিবেন।
বা চাইলে ঝোল না করেও রাঁধতে পারেন। তেল যখন উঠে আসবে তখন ভাজা জিরা, গরম মশলা গুঁড়া, এবং কাঁচামরিচ ছড়িয়ে দিন এবং ৫ মিনিট দমে রাখুন। তারপর নামিয়ে ফেলুন।
রেসিপি ২
যা যা লাগবেঃ
- • বড় সাইজের মুরগী ১টি (মাঝারি সাইজের টুকরা করে নিতে হবে)
- • ১টি পেঁয়াজ (বড় সাইজের, কুচি করা থাকবে)
- • ১টি রসুন
- • ১টি আদা (মাঝারি সাইজের)
- • ১ চা চামচ লবণ
- • ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়া
- • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
- • ২ চা চামচ জিরা গুঁড়া
- • ২ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া
- • ৩ টুকরা দারচিনি (এক ইঞ্চি সাইজের হতে হবে)
- • ৩ টি তেজপাতা
- • ৩-৪ টি এলাচ
- • আধা কাপ তেল
- • ৪-৫ টি কাঁচামরিচ
- • আধা কাপ পানি
- • ১ মুঠো ধনেপাতা কুচি
- • ১ টি টমেটো (ফালি করে কাটা)
- • তেল (সামান্য, রান্নার জন্য)
যেভাবে রাঁধবেন
প্রথমে আদা ও রসুন ছিলে একসাথে বেটে নিতে পারেন, পেঁয়াজ কেটে নিতে পারেন। তাহলে প্রস্তুতিতে সুবিধা হবে। তারপর মাংসের সাথে পেঁয়াজ কুচি, লবণ, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, গরম মশলা (তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি), ও তেল দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে নিন। হাতের সাহায্যে মাখালে ভাল হয়।
যতক্ষণ না পর্যন্ত মশলাগুলো মাংসের সাথে মিশে যাচ্ছে ততক্ষণ মাখাতে থাকুন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে মাংস দিন, তারপর তাতে ২ চা চামচ আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন। নাড়া হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।
৫ মিনিট পরে কাঁচামরিচ দিয়ে আরো কিছুক্ষণ নাড়ুন। আবারো ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন, এরপরে দেখবেন মাংস থেকে পানি বেরিয়ে গেছে। সেই পানিতে মাংসটা কিছুক্ষণ কষিয়ে টমেটোর টুকরাগুলো দিন। দেয়ার পরে আরো কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে পুনরায় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
২ মিনিট পরে ঢাকনা তুলে কিছুক্ষণ নেড়ে আধা কাপ পানি দিন, আরেকটু নেড়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর ঢাকনা খুলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে একটু নেড়ে আবারো ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। নামানোর আগে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন।
এই পদ্ধতিতে মাংস রান্না করলে সিদ্ধ হবে ভালমতো, খেতেও বেশ ঝাল ঝাল লাগবে। যারা কষা মাংস একটু ঝাল করে খেতে পছন্দ করেন তারা এই রেসিপিটা ট্রাই করে দেখবেন।
রেসিপি ৩
যা যা লাগবে
- ১টি মুরগী (মাঝারি/বড়)
- ২টি আলু (ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে)
- তেল (পরিমাণমত, প্রথমে মুরগী ও আলু ভাজার জন্য এবং পরে রান্নার জন্য যতটুকু লাগে)
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া (মাংস ভাজার জন্য)
- লবণ (সামান্য, দুইবারে নিতে হবে। প্রথমবার মাংস ভাজার জন্য, পরেরবার রান্নার জন্য)
- ১ চা চামচ আদা বাটা
- ১ চা চামচ রসুন বাটা
- হলুদ গুঁড়া (সামান্য, রান্নার জন্য)
- ১ চা চামচ মরিচ গুঁড়া
- ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া
- ১ চা চামচ জিরা গুঁড়া
- ৩-৪ টুকরা দারুচিনি
- ২-৩ টি তেজপাতা
- ২-৩ টি এলাচ
- আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি
- ১ চা চামচ রেডিমেড মাংসের মশলা (বাড়তি মশলা দিলে আলাদা একটা ফ্লেভার আসবে)
- পানি (পরিমাণমতো, রান্না করতে যখন যতটুকু লাগে)
যেভাবে রাঁধবেনঃ
প্রথমে তেল গরম করে তাতে আলু ভেজে নিবেন। ভাজা হয়ে গেলে ঐ একই তেলে মুরগীর মাংসও ভেজে নিবেন। খেয়াল রাখবেন আলু আর মাংস দুটোই যেন অতিরিক্ত ভাজা না হয়। এগুলো আগে হালকা করে ভাজার কারণ হচ্ছে যাতে স্বাদ বাড়ে।
তবে মাংসটা যখন ভাজবেন, তখন এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া আর সামান্য লবণ দিয়ে ভেজে নিবেন। আরেকটা কড়াইতে তেল গরম করে তাতে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ-মরিচ-ধনিয়া-জিরা গুঁড়া, গরম মশলা, লবণ, পেঁয়াজ কুচি, এবং মাংসের মশলা দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন।মশলাগুলো ভালমতো না কষা পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। চাইলে সামান্য পানিও দিতে পারেন, তাতে মশলাটা আরো ভালোভাবে মিশবে। অবশ্যই মশলা কষানোর সময়ে চুলার আঁচ মাঝারি রাখবেন।
মশলা কষানো হলে ওতে ভাজা মুরগীর মাংস ঢেলে দিন। এরপর মাঝারি আঁচে রেখেই ভালোমত নাড়তে থাকুন যাতে মাংসের সাথে মশলাটা মিশে যায়। চুলার আঁচ বেড়ে গেলে মাংস পুড়ে যেতে পারে, তাই এই ব্যাপারটায় সাবধান থাকবেন। রান্নার এক পর্যায়ে আবার একটু পানি দিবেন যাতে মশলাটা আরেকটু ভালোভাবে মাংসের সাথে মিশে যায়। পানি দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ঢেকে দিন।
৫ মিনিট পরে মাংস যখন সিদ্ধ হবে তখন ভাজা আলুর টুকরাগুলো দিয়ে দিন। তারপর আঁচ বাড়িয়ে ঢেকে দিন, এতে মাংস এবং আলু দুটোই একসাথে সিদ্ধ হবে। আপনার রান্না প্রায় শেষের পথে এখন। খেয়াল রাখবেন, আলুর টুকরাগুলো যখন দিবেন তখন পানির পরিমাণটা আরেকবার দেখবেন। পানি যদি শুকিয়ে আসে তাহলে পরিমাণমতো আরেকটু পানি দিবেন যাতে ঝোলটা ঠিক থাকে। ৫ মিনিট পরে চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে নিন।
মন্তব্য করুন