একেবারে সাতাশটা ফেস প্যাক! তাও আবার একসঙ্গে! সম্ভব নাকি! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমরা সম্ভব করে দেখিয়েছি। নর্মাল টু সেনসিটিভ, অয়েলি থেকে ড্রাই, যে কোনও স্কিনের যে কোনও সমস্যার জন্য আজ রইল এই সাতাশটি রামবাণ। কথা দিচ্ছি, আজকের পর আর অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার হবে না।
ক. সাধারণ বা নর্মাল ত্বকের জন্য
নর্মাল ত্বক মানে যে ত্বকের পি.এইচ ব্যাল্যান্স যথেষ্ট ভাল। এই স্কিন টোনের মানে হল স্কিন অতিরিক্ত তেলতেলেও নয়, ড্রাইও নয়। খুব একটা বেশি সমস্যা এই ধরণের স্কিনে হয় না। কিন্তু তা বলে যত্ন না করলে তো হবে না।
উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য
নর্মাল স্কিন টোন যাদের তাঁদের মূল নজর দেওয়া উচিত উজ্জ্বলতা ধরে রাখার দিকে। তাহলেই আশি শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তার জন্য রইল দুটি ফেস প্যাক।
১. হলুদ আর বেসন
খুব প্রচলিত আর চিরাচরিত একটি ফেস প্যাক। পুরনো হলেও কিন্তু ওল্ড ইস গোল্ড। তাই এই প্যাক অবজ্ঞা করে সরিয়ে রাখবেন না।
উপকরণঃ
- ২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা
- ২ চামচ বেসন
- ৪ চামচ কাঁচা দুধ
পদ্ধতিঃ
কাঁচা হলুদ বেটে তার সঙ্গে বেসন দিয়ে মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প করে দুধ মিশিয়ে মিশিয়ে ঘন একটা পেস্ট তৈরি করুন। স্নান করতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে এই প্যাক মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। তারপর হাতে অল্প অল্প জল নিয়ে ম্যাস্যাজ করুন হাল্কা হাতে আর তুলে ফেলুন। ভাল করে মুখ ধুয়ে ফেলুন সাধারণ জলে। মুখ একদম পরিষ্কার লাগবে। সপ্তাহে চার দিন করতেই পারেন।
২. টক দই আর কেসর
কেসর একটু দামী, কিন্তু অল্প একটু ব্যবহার করলেই কাজ হবে। তাই একটু কেসরের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপকরণঃ
- ২ চামচ টক দই
- অল্প কেসর
- ২ চামচ দুধ
পদ্ধতিঃ
টক দই ভাল করে ফেটিয়ে নিন। আগে থেকে দুধে কেসর ভিজিয়ে রেখে দিন। সেই দুধ এবার কেসর সমেত দইতে দিন আর ভাল করে ফেটিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর অল্প উষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। কেসর আর দুধ যেখানে মুখে উজ্জ্বলতা আনে, সেখানে টক দই স্কিন কোমল রাখে। সপ্তাহে দুই দিন করলেই হবে।
আর্দ্রতা বজায় রাখতে
নর্মাল স্কিন সবচেয়ে ভাল কারণ এই ধরণের স্কিন হাইড্রেটেড থাকে। আর স্কিনে জলের পরিমাণ ঠিক থাকায় উজ্জ্বল দেখায় সবসময়। তাই এই হাইড্রেটেড থাকাটা আমাদের বজায় রাখতে হবে। তার জন্য তিনটি ফেস প্যাক।
৩. গোলাপ জল আর অলিভ তেল
অলিভ অয়েল তো শীতে এমনিই ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে গোলাপ জল নিন। দারুণ ফল পাবেন।
উপকরণঃ
- ৩ চামচ গোলাপ জল
- ১ চামচ অলিভ তেল
পদ্ধতিঃ
গোলাপ জল আর অলিভ তেল নিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। অল্প গরম জল দিয়ে মুখ হাল্কা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। গোলাপ জল আর অলিভ তেল দুটি উপাদানই মুখের ময়েশ্চার ধরে রাখে। সপ্তাহে একদিন করে করলেই হবে।
৪. মধু আর অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা নিয়ে কিছু তো বলার নেই। মধুও স্কিনের জন্য কত ভাল আজ আপনারা জানেন। শুধু দুটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করে দেখুন।
উপকরণঃ
- ২ চামচ মধু
- ৩ চামচ অ্যালোভেরা জেল
পদ্ধতিঃ
অ্যালোভেরা গাছের থেকে নিতে পারলে বেশি ভাল। না হলে ভাল ব্র্যান্ডের জেল ব্যবহার করবেন। জেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে মেখে নিন। ১০ মিনিট রেখে সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করে করলে ভাল ফল তাড়াতাড়ি পাবেন।
৫. দুধ আর ডিমের প্যাক
উপকরণঃ
- ৩ চামচ কাঁচা দুধ
- একটা ডিমের সাদা অংশ
পদ্ধতিঃ
ডিমের সাদা অংশ নিয়ে আগে একটু ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে দুধ মেশান আর মুখে ভাল করে মাখুন। শুকিয়ে যেতে দিন। তারপর অল্প উষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে নিন। ডিম মুখে টাইটনেস আনবে। স্কিন ধরে রাখবে। আর দুধ ময়েশ্চার ধরে রাখবে। আপনার সুবিধে মতো সপ্তাহে যতদিন খুশি ব্যবহার করুন।
শীতের যত্ন
শীত প্রায় চলেই এলো। নর্মাল স্কিন যাদের তাদেরও এখন ত্বক শুষ্ক হওয়ার মতো সমস্যা খানিক হবে। তাই সেই কথা মাথায় রেখে রইল দুটি অনবদ্য ফেস প্যাক।
৬. শশা আর কলার প্যাক
এই শীতে আপনার ত্বক যাতে খুব না শুষ্ক লাগে তার জন্য ভিতর থেকে ত্বক ভাল রাখবে শশা আর কলা।
উপকরণঃ
- কয়েক টুকরো শশা
- অর্ধেক কলা
পদ্ধতিঃ
প্রথমে শশা স্লাইস করে কেটে একটু পেস্ট করে নিন। এর সঙ্গে এবার অর্ধেক কলা চটকে মিশিয়ে নিন। ভাল করে দুটি জিনিস মেশাবেন আর মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর অল্প হাল্কা হাতে ম্যাস্যাজ করে মুখ ধুয়ে নিন। এক দিন অন্তর অন্তর করুন। এতে মুখ খুব ভাল নরম থাকবে, টান ভাব আসবে না।
৭. মুলতানি মাটি আর দইয়ের প্যাক
উপকরণঃ
- ১ বড় চামচ মুলতানি মাটি
- ২ চামচ টক দই
পদ্ধতিঃ
একটি পাত্রে আগে টক দই নিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এর সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প জল দিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। খুব ভাল প্যাক এটি শীতের জন্য। সপ্তাহে দু দিন করলেই যথেষ্ট।
খ. অয়েলি ত্বকের জন্য
যে স্কিন টোন থাকলে আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এবার সেই তেলতেলে সিন নিয়ে কথা বলব। এই শীতেও অয়েলি স্কিনের মানুষজনের মুখ সামান্য হলেও তেলতেলে থাকেই। আর সারা বছরের ফোঁড়া, ব্রণ, ব্রণর দাগ, ফুসকুড়ি, র্যা শ এইসব তো আছেই। তাই এই স্কিনের দরকার ভাল কেয়ার।
মুখ পরিষ্কারের জন্য
তেলতেলে স্কিন হলে সবার আগে দরকার মুখ ভিতর থেকে পরিষ্কার করা। সব অশুদ্ধি, তেল, জমা ময়লা আর ডেড স্কিন সেল উঠে আসলে তবেই তো মুখের স্কিন ভাল থাকবে। তার জন্য তাই রইল তিনটি ফেস প্যাক।
৮. নিমপাতা আর তুলসীর প্যাক
তেলতেলে স্কিনে যেহেতু ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বেশি, তাই নিমপাতা আর তুলসীর ভেষজ গুণ এখানে সবচেয়ে বেশী কাজে আসে।
উপকরণঃ
- ১০টা মতো নিমপাতা
- ১০টা মতো তুলসীপাতা
পদ্ধতিঃ
দুই ধরণের পাতাই আগে ভাল করে বেটে নিন। তারপর ভাল করে মিশিয়ে নিন। জল দেওয়ার দরকার নেই, পাতার রসেই মিশ্রণ তৈরি হয়ে যাবে। এই প্যাক এবার স্নানের আগে এক ঘণ্টা মুখে মেখে অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে নিন। পারলে রোজ করুন, না হলে এক দিন ছেড়ে। কথা দিচ্ছি, এক সপ্তাহের মধ্যে তেলতেলে ভাব অনেক কমে যাবে।
৯. পাতিলেবু আর পুদিনা
লেবু খুব ভাল ন্যাচারাল ব্লিচার। মুখের ময়লা আর তেল ভাব তোলার জন্য অনবদ্য কাজ দেয়।
উপকরণঃ
- ২ চামচ লেবুর রস
- ৬টা মতো পুদিনা পাতা
পদ্ধতিঃ
পুদিনা পাতা হাতে চটকে রস বের করে নিন। এর মধ্যে লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করেই ধুয়ে নিন সাধারণ জলে। তিন দিন করুন সপ্তাহে, ভাল ফল পাবেন।
১০. দারচিনি আর মধুর প্যাক
দারচিনির খড়খড়ে ভাব মুখের থেকে ডেড স্কিন সেল তুলে দেয়। ভিতর থেকে স্কিন পরিষ্কার হয়।
উপকরণঃ
- ১ চামচ দারচিনি পাউডার
- ২ চামচ মধু
পদ্ধতিঃ
দারচিনি বাড়িতে গুঁড়ো করে নিন। এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে হাল্কা হাতে ঘষুন ৫ মিনিট। তারপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন মুখ অল্প গরম জলে। সপ্তাহে তিন দিন করুন, অনেকটা মুখ ফ্রেস লাগবে।
র্যাশ কমানোর জন্য
অয়েলি স্কিন মানেই র্যাশ, চুলকুনি, জ্বালা ভাব হবেই। কিন্তু সমস্যা যেমন আছে, তেমন আছে দুটি সুন্দর সমাধান।
১১. পেঁয়াজ আর ওটমিলের প্যাক
পেঁয়াজের দাম খুবই জানি, কিন্তু একটা গোটা লাগবে না। খুব অল্প হলেই হবে। আর ওটমিল অতিরিক্ত তেল কমিয়ে র্যা শ হওয়া বন্ধ করবে।
উপকরণঃ
- ২ চামচ পেঁয়াজের রস
- অর্ধেক ছোট বাটি ভেজানো ওট
পদ্ধতিঃ
আগের দিন ওট জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে নরম হয়ে গেলে নরম করে মেখে নিন। এর সঙ্গে অল্প পেঁয়াজের রস দিন আর ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর সারা মুখে, না হলে শুধু র্যা শ হওয়া জায়গায় লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। মুখ পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। এক মাসের মধ্যেই পার্থক্য বুঝবেন।
১২. হলুদ আর অ্যালোভেরা জেলের প্যাক
হলুদের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যাকটেরিয়া ভিতর থেকে নির্মূল করবে। আর অ্যালোভেরা এর কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
উপকরণঃ
- ২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা
- ১ চামচ অ্যালোভেরার রস
পদ্ধতিঃ
কাঁচা হলুদ বেটে তার থেকে রস বের করে নিন। এর সঙ্গে মেশান অ্যালোভেরার রস। দুটি ভাল করে মেশান আর মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। র্যা শের খুব সমস্যা হলে রোজ করতে পারেন। না হলে সপ্তাহে তিন দিন।
ব্রণ আর ব্রণর দাগের সমস্যা
এটি সবচেয়ে খারাপ সমস্যা তেলতেলে স্কিন যাদের তাঁদের জন্য। কিন্তু কিছু নিয়ম মানলেই আর তিনটি ফেস প্যাক ব্যবহার করলেই অনেক ভাল ফল পাওয়া যায়।
১৩. গ্রিন টি আর হলুদ
হলুদের কথা তেলতেলে ত্বকের ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে আসবেই। আর গ্রিন টি সঙ্গে জুড়ে গেলে, ব্রণ পালাবার পথ পাবে না।
উপকরণঃ
- গ্রিন টি ব্যাগ একটা
- হলুদ বাটা ১ চামচ
পদ্ধতিঃ
গ্রিন টি গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর ব্যাগ থেকে চা পাতা বের করে তার সঙ্গে হলুদ বাটা মিশিয়ে মুখে মাখুন আর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। গ্রিন টির জলটা কিন্তু ফেলবেন না। ২০ মিনিট পর আগে ওই জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর এমনি জল দিন। এতে ব্রণ অনেক কমে আসবে। সপ্তাহে দু দিন করে করুন।
১৪. মুলতানি মাটি আর টি ট্রি অয়েল
উপকরণঃ
- ২ চামচ মুলতানি মাটি
- কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল
পদ্ধতিঃ
আগে মুলতানি মাটি অল্প অল্প জল দিয়ে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে এবার কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে দিন। আবার ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই প্যাক এবার মুখে মেখে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন আর উষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে চার দিন করুন, এক মাসে বুঝবেন সমস্যা কোথায় গেছে।
১৫. চন্দন আর মধু
চন্দন কিন্তু তেলতেলে ত্বকের জন্য খুব উপকারী। চন্দন গুঁড়ো বা চন্দন বাটা, দুই রূপেই চন্দন অনবদ্য।
উপকরণঃ
- ২ চামচ চন্দন গুঁড়ো বা বাটা
- ২ চামচ মধু
পদ্ধতিঃ
দুই উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ মুখে রেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। চন্দন তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তাই আগে শুকিয়ে আসলে আগেই মুখ ধুয়ে নিতে পারেন ঠাণ্ডা জলে। রোজ করলে খুব ভাল, না হলে এক দিন ছেড়ে করুন।
তেলতেলে ভাব কমাতে
সব তো হল, কিন্তু তেলতেলে ভাব না কমলে হয়! তেলতেলে ভাব থাকলে তো মুখের উজ্জ্বলতাই আসবে না। তাই একটিই অনবদ্য প্যাক তেলতেলে ভাব কমিয়ে মুখ উজ্জ্বল দেখানোর জন্য।
১৬. অ্যাক্টিভেটেড চারকোল আর টক দই
ভাল স্টোরে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল অনায়াসে পেয়ে যাবেন। অনলাইনেও পাবেন।
উপকরণঃ
- ২ চামচ অ্যাক্টিভেটেড চারকোল
- ২ চামচ মধু, একটা গোটা ডিম
পদ্ধতিঃ
সব উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। জল দেবেন না। টক দই আর ডিমে যতখানি ঘন প্যাক হয় সেটাই রাখুন। তারপর সেই প্যাক মুখে লাগিয়ে এক ঘণ্টা বসুন আর তারপর মুখ ধুয়ে নিন ঠাণ্ডা পরিষ্কার জলে। সপ্তাহে এক দিন করে করুন। কয়েক সপ্তাহে তেলতেলে ভাব কমে মুখ উজ্জ্বল দেখাবে।
শীতের বিশেষ কেয়ার
তেলতেলে স্কিন যাদের তাঁদের জন্য শীতের একটিই বিশেষ ফেস প্যাক দারুণ কাজ দেবে।
১৭. গ্লিসারিন আর গোলাপ জল
উপকরণঃ
- দুটিই আপনার পরিমাণ মতো
পদ্ধতিঃ
দুটি জিনিস নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে মুখে, হাতে মেখে নিন। জল দিয়ে ধোয়ার কোনও দরকার নেই, এমনিই স্কিন টেনে নেবে। এটা রোজ দিনে অন্তত একবার করুন, ভাল ফল পাবেন এই শীতে।
গ. ড্রাই স্কিনের জন্য
ড্রাই স্কিনের এই শীতের সময়ে বেশি সমস্যা। আর তাছাড়া এই স্কিনের যেহেতু আর্দ্রতা কম তাই বিশেষ কিছু সমস্যা, যেমন তাড়াতাড়ি বলিরেখা হওয়া, স্কিন ঝুলে যাওয়া, উজ্জ্বলতাহীনতা এই সব হয়ে থাকে। নিচের ফেস প্যাকগুলি একসঙ্গেই এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
১৮. ডিম আর টক দইয়ের প্যাক
এই দুটি উপকরণই খুব ভাল করে স্কিনকে ধরে রাখে। ফলে ত্বক বুড়িয়ে যায় না।
উপকরণঃ
- একটি ডিমের সাদা অংশ
- ১ চামচ টক দই
পদ্ধতিঃ
দুটি উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে মুখে মাখুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন।, তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই বার অবশ্যই করুন এটি।
১৯. পেঁপে আর সর
পাকা পেঁপে আর দুধের সর এই দুই উপাদানই মুখ উজ্জ্বল করে, শুষ্ক ভাব কমিয়ে দেয়।
উপকরণঃ
- এক কাপ পাকা পেঁপে বাটা
- দুধের সর ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
দুধের সর আগে থেকে তুলে রাখুন। এর সঙ্গে পাকা পেঁপে চটকে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। উষ্ণ জল দিয়ে হাল্কা ম্যাস্যাজ করে মুখ ধুয়ে নিন। খুব ভাল ফল পাবেন সপ্তাহে এক দিন করে করলে।
২০. আমন্ড আর দুধ
উপকরণঃ
- আমন্ড বাটা ২ চামচ
- দুধ ৩ চামচ
পদ্ধতিঃ
আমন্ড আগের দিন রাতে ভিজিয়ে নিন। পরের দিন বেটে নিন দুধ দিয়ে। এই মিশ্রণ এবার মুখে মেখে নিন। অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। তারপর মুখ ধুয়ে নিন। আমন্ড আর দুধের ফ্যাট ড্রাই স্কিনের জন্য খুব উপকারী। ১৫ দিন পর পর করতে পারেন।
শীতের যত্ন
ড্রাই স্কিনের জন্য শীতের যত্ন বিশেষ দরকার। দুটি অনবদ্য প্যাক বলব, সেটাই যথেষ্ট।
২১. পাকা কলা আর শশা
উপকরণঃ
- পাকা কলা ১টি
- শশা অর্ধেক
পদ্ধতিঃ
শশা অর্ধেক নিয়ে তার থেকে রস বের করে নিন। এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন একটা কলা চটকে। ভাল করে মিশিয়ে নিন। মুখে মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন আর উষ্ণ জলে ধুয়ে নিন। দুই দিন ছেড়ে ছেড়ে করুন। এই শীতে ড্রাই স্কিন আপনার কে বলবে! শশার রস স্কিনকে ভিতর থেকে আর্দ্র করবে।
২২. গোলাপের পাপড়ি
খুব সুন্দর আর ইউনিক একটি প্যাক, ড্রাই স্কিনের জন্য খুব ভাল।
উপকরণঃ
- কয়েকটি গোলাপ পাপড়ি
- গোলাপ জল ৩ চামচ
পদ্ধতিঃ
গোলাপ পাপড়ি হাত দিয়ে অল্প কচলে নিন। একটা হরহরে জিনিস বেরিয়ে আসবে, সেটা খুব ভাল ড্রাই স্কিনের জন্য। এর সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে মেখে নিন। ৩০ মিনিট রেখে দিন আর ধুয়ে নিন। সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফ্রেশ হয়ে যাবে। মাসে দুই থেকে তিন বার করুন।
সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বিশেষ যত্ন
এই স্কিন টোন যাদের তাঁদের সব জিনিস আবার সহ্য হয় না। তাই তাঁদের খুবই চিন্তা থাকে কি ব্যবহার করব আর কি করব না। তাঁদের জন্য এই বিশেষ ফেস প্যাক।
২৩. গাজর আর মধু
উপকরণঃ
- ছোট অর্ধেক বাটি গাজর
- ২ চামচ মধু
পদ্ধতিঃ
গাজর কুড়িয়ে চটকে নিন। এর সঙ্গে মধু দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে স্মুদ পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সঙ্গে সঙ্গে গ্লো করবে স্কিন।
২৪. কমলালেবু আর দুধ
উপকরণঃ
- কমলালেবুর রস ৫ চামচ
- দুধ ৩ চামচ
আলাদা করে জল না মিশিয়ে এই দুই উপাদান মিশিয়ে নিন। তারপর মুখে মেখে শুকিয়ে যেতে দিন। অল্প গরম জল দিয়ে হাল্কা হাতে ম্যাস্যাজ করে তুলে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করুন। এই শীতে নিশ্চিন্তে থাকবেন।
২৫. কোকো পাউডার আর মধু
উপকরণঃ
- কোকো পাউডার ২ চামচ
- মধু ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
কোকো পাউডার আর মধু আগে মিশিয়ে নিন। এরপর চাইলে দুধ দিয়ে, না হলে জল দিয়ে স্মুদ পেস্ট তৈরি করুন। মুখে মেখে অপেক্ষা করুন ১০ মিনিট মতো। তারপর উষ্ণ জলে ধুয়ে নিন মুখ। মাসে তিন বার মতো করুন, ভাল উপকার পাবেন।
ত্বক নির্বিশেষে বিশেষ কিছু প্যাক
এবার শীতের কথা মাথায় রেখে ত্বক নির্বিশেষে কিছু ফেস প্যাকের কথা বলব। এগুলি এই শীতে বেশি করে ব্যবহার করুন।
২৬. টম্যাটোর প্যাক
সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতের টম্যাটো আরও ভাল আর সতেজ হয়। এই টম্যাটো স্কিনের জন্য সবচেয়ে ভাল।
উপকরণঃ
- টম্যাটো পাল্প ২ চামচ
- বেসন ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
দুটি উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে অল্প জল দিয়ে ঘন পেস্ট বানান। মুখে মেখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন আর ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। সঙ্গে সঙ্গে স্কিন কোমল আর চকচকে হবে।
২৭. কোকোনাট মিল্ক আর মধু
উপকরণঃ
- কোকনাট মিল্ক ৩ চামচ
- মধু ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
বাড়িতে নারকেল থেকে দুধ বের করে নিলে সবচেয়ে ভাল। তার সঙ্গে নিন মধু আর মিশিয়ে পেস্ট মুখে মাখুন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন গরম জলে। এটি সপ্তাহে একবার এই শীতে করলে শীতে আর কোনও চিন্তা থাকবে না।
এই কয়েকটা ফেস প্যাক আপনার ওয়ান স্টপ সলিউশন যে কোনও সমস্যায়। ব্যবহার করলেই ফল পাবেন হাতেনাতে।
মন্তব্য করুন