ঢলঢলে গোলগাল মুখ মানেই সুন্দর, এই ধারণা এখন আর নেই। এখন সুন্দর মানে স্মার্ট, ঝকঝকে স্লিম চেহারা। আর স্লিম ঝরঝরে হওয়া মানেই আমাদের কাছে জিমে যাওয়া। কিন্তু জিমে না গিয়েও যে টোনড বডি আনা যায় সেটা আমরা জানি না। বাড়িতে কিছু বিশেষ এক্সারসাইজের মাধ্যমে এই টোনড শেপ কিন্তু জিমে না গিয়েও আনা সম্ভব। আগে দশ মিনিটের জন্য ওয়ার্ম-আপ আর তারপর এই কুড়িটি এক্সারসাইজ- সুন্দর ফিগার আপনার হাতের মুঠোয়।
১. কাফ রেইজেস
শুরু করার এক্সারসাইজ হিসেবে খুব ভাল। খুব সহজ- গোড়ালি তুলে পায়ের পাতার ওপর সোজা হয়ে দাঁড়ান। ১০ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে মানে দশ গুণে গোড়ালি নামিয়ে আবার পায়ের পাতার ওপর দাঁড়ান। এভাবে ১৫ বার করুন। সামনের দিকে ঝুকবেন না, একদম সোজা থাকবেন। ৩টে সেট করবেন। আস্তে আস্তে স্পিড বাড়াবেন। এভাবে করতে করতে ভিতরে একটা বার্ন ফিল করবেন।
২. স্কোয়াট
সামনের দিকে সোজা তাকিয়ে স্ট্রেট থাকুন। দুটি হাত সামনের দিকে নিয়ে যান আর মাটির সমান্তরালে রাখুন। এবার নিজেকে সোজা রেখে যতটা সম্ভব নিচের দিকে বসার চেষ্টা করুন। ভাবুন যেন আপনি একটি চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন। কুড়িবার গুনুন আর আবার সোজা হন। এভাবে ৫টা সেট করুন।
৩. জাম্প স্কোয়াট
আগের মতোই সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে স্ট্রেট দাঁড়ান। হাত দুটি ভাঁজ করে মাথার পিছন দিকে রাখুন। এবার যেভাবে বলা হয়েছিল সেভাবে আগে স্কোয়াট করুন হাত মাথার পিছনে রেখেই। এবার কুড়িবার গুণে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জাম্প করুন সামনের দিকে। দুটি হাত দুই দিকে ছড়িয়ে দিতে পারেন ব্যাল্যান্সের জন্য। এবার জাম্প করে নিজেকে সামলে নিয়ে স্কোয়াট করুন। মানে এবার জাম্প আর কোয়াট একসঙ্গে হবে। এতে অনেক ক্যালোরি বার্ন হয়।
৪. জাম্প লাংস
খুব সুন্দর একটি এক্সারসাইজ। প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রিল্যাক্স করে নিন। তারপর ডান পা সামনের দিকে এনে সোজা রেখে অল্প হাঁটুর থেকে মুড়ে নিন আর পিছনের পা ব্যাল্যান্স করুন। দুটি হাত কনুই থেকে মুড়িয়ে বুকের কাছে এনে পাঞ্জার মতো রাখুন আর এই অবস্থায় একবার জাম্প করুন। এভাবে বিপরীত পা সামনে এনে আর এখন ডান পা পিছনে নিয়ে এসে একইভাবে মুড়ে জাম্প করুন। এবার সামনের আর পিছনের পা ক্রমান্বয়ে সামনে আর পিছনে এভাবে এনে জাম্প করতে থাকুন ২০ বার করে।
৫. সাইড লাংস
মাটির সঙ্গে পা ‘ভি’ শেপ করে দাঁড়ান। পা একদম সোজা রাখুন। এবার ডান পা আস্তে আস্তে হাঁটুর কাছে মুড়ুন। বাঁ পা যেন স্ট্রেট থাকে। এভাবে দশ গুনুন। আবার সোজা হয়ে আবার ডান পা মুড়িয়ে দশ গুনুন। এভাবে ৫ বার করুন। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ পা ভাঁজ করে একইভাবে এক্সারসাইজ করতে থাকুন। মোট ৩টে সেট করুন।
৬. ডঙ্কি কিক্স
নিজের হাত আর হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসুন। হাঁটু এবং হাত যেন সম্পূর্ণ সোজা থাকে। এবার এই অবস্থাতেই ডান পা তুলুন উপরের দিকে যতটা পারেন। আবার নামিয়ে আনুন। এভাবে দশবার করুন। এবার বাঁ পা এভাবেই দশবার তুলুন উপরে। এভাবে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ৩ সেট করতে থাকুন।
৭. সিঙ্গল-লেগ ডেডলিফটস
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আগে দুটি হাত পাশে রাখুন সোজা করে। এবার যে কোনও একটি পায়ের ওপর ভর দিয়ে আরেকটি পা আস্তে আস্তে তুলুন পিছনের দিকে যতটা পারেন আর শরীর সামনের দিকে ঝুকিয়ে দিন। যে পা সোজা আছে সেটি যেন একদম সোজা থাকে। এভাবে গোটা শরীর সামনের দিকে আর পা পিছনের দিকে, আবার পা সামনে এনে শরীর সোজা করে আগের অবস্থায় আসুন। এভাবে দশ বার করুন। এবার পা পরিবর্তন করে একইভাবে দশ বার করুন। এভাবে ৩ সেট করুন রোজ।
৮. ফ্রগ জাম্পস
খুব সহজ কিন্তু কার্যকরী একটি এক্সারসাইজ। দুটি পা ‘ভি’এর মতো রেখে দাঁড়ান সোজা হয়ে। একটু সামনের দিকে দুটি হাত ঝুকিয়ে দিন। এবার গোড়ালি অল্প তুলে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে অল্প নিচু হয়ে সামনের দিকে জাম্প করুন। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার সামনের দিকে ঝুঁকে জাম্প করুন। এতে ভাল অ্যাবস তৈরি হয়।
৯. ওয়াল সিট
দেওয়ালে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুটি হাত সামনের দিকে মাটির সঙ্গে সমান্তরালে রাখুন। এবার দেওয়াল ঘেষেই আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে বসার চেষ্টা করুন। ভাবুন আপনি যেন একটি চেয়ারে বসছেন। এভাবে বসে দশ গুনুন আর সোজা উঠে যান। এভাবে ১০ বার করতে থাকুন।
১০. পুশ-আপ
খুব পরিচিত একটি এক্সারসাইজ। মাটির দিকে পেট দিয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাত আর পায়ের পাতার ওপর জোর দিয়ে আস্তে আস্তে উঠুন ওই শুয়ে থাকা পোজেই। তারপর হাত সোজা রেখে শরীর নিচের দিকে নামিয়ে আনুন। আস্তে আস্তে এভাবে করতে থাকুন দশবার। বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ৫ বার করুন। এতে বুক আর পেটের পেশির ব্যায়াম হয়।
১১. ডিক্লাইন পুশ-আপ
এই পুশ-আপ সাধারণ পুশ-আপের মতোই, কিন্তু একটু আলাদা। সাধারণ পুশ-আপ যেমন মাটির ওপর পায়ের আঙুল রেখে তার সাহায্যে শরীর তুলি আমরা এখানে সেরকম নয়। একটা উঁচু কোনও জায়গায় পা রাখুন। আর আপনি সামনের দিকে অর্থাৎ আপনার শরীর একটু নিচে নামিয়ে রাখুন। এই অবস্থায় এবার পুশ-আপ করুন।
১২. প্ল্যাঙ্ক আপ-ডাউন
মাটির দিকে পেট দিয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত কনুই থেকে মুড়ে নিন আর বুকের সামনে রাখুন। পা আঙুলের সাহায্যে জোর দিয়ে তুলুন আর এই অবস্থায় গোটা শরীর তুলে ধরুন। দশ গুনুন আর ছেড়ে দিন। আবার করুন এভাবে। ৫ বার করে বিশ্রাম নিন।
১৩. ট্রাইশেপ ডিপস
একটা বেঞ্চ বা এই জাতীয় কোনও জায়গা থাকলে সেটিকে পিছনে রেখে ভর দিয়ে বসুন। পা সোজা করে সামনের দিকে দিয়ে রাখুন। এবার হাত পিছন দিকে নিয়ে গিয়ে ওই বেঞ্চের সাহায্যে ভর দিয়ে নিজেকে তোলার চেষ্টা করুন। পা মাটিতেই থাকবে। এভাবে দশবার করুন।
১৪. রাশিয়ান টুইস্ট
প্রথমে মেঝের ওপর টানটান করে শুয়ে পড়ুন মেঝের দিকে পিঠ দিয়ে। এবার পা হাঁটুর থেকে মুড়ে অল্প তুলুন ওপরের দিকে। সঙ্গে ধীরে ধীরে মাথা তুলুন কোমরের ওপর ভর দিয়ে। গোটা শরীর যেন ইংরেজি ‘ভি’ শেপের থাকে। এই অবস্থায় দুটি হাত কনুই থেকে মুড়ে বুকের কাছে এনে একবার ডানদিক আবার একবার বাঁদিকে টুইস্ট করুন কোমর থেকে। পা কিন্তু টানটান থাকবে। এভাবে দশবার করুন, খানিক বিশ্রাম নিন, আবার দশবার করুন। মোট ৫ সেট করুন।
১৫. প্ল্যাঙ্ক টো টাচ
মাটির দিকে বুক দিয়ে শুয়ে পড়ুন সোজা হয়ে। হাত থাকবে পাশে। আস্তে আস্তে হাত ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে রাখুন। এবার পায়ের আঙুলের ওপর আর হাতের পাতার ওপর ভর দিয়ে শরীর ওপরের দিকে তুলুন। হাত থাকবে সোজা। এবার কোমর থেকে ভাঁজ করে আস্তে আস্তে তুলুন, একটা ‘ভি’এর মতো শেপ হবে। এবার এই অবস্থায় একটা হাত আনুন পায়ের কাছে, তখন শরীরের ভর থাকবে আরেক হাতের ওপর। এভাবে আরেকটি হাত নিয়ে আসুন পায়ের কাছে, তখন শরীরের ভর থাকবে আরেক হাতের ওপর। এভাবে দশবার করে করুন তিন সেট।
১৬. ডবল লেগ রেইজেস
মাটিতে পিঠ দিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটি হাত থাকবে পাশে পাতা। এবার কোমর থেকে আস্তে আস্তে দুটি পা জোড়া আবস্থায় তুলুন কোমরের ভরে। পা যেন সোজা থাকে একদম। পা ওপরে সোজা রেখে দশ গুনুন আর নিচে নামিয়ে নিন। নিঃশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক। এভাবে পাঁচ সেট করুন।
১৭. অলটারনেটিং লেগ ড্রপস
পিঠ মাটির দিকে রেখে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটি হাত থাকবে পাশে। এবার হাত আর কোমরের ভরে দুটি পা ওপরে তুলুন সোজা করে। পা দুটি কিন্তু জোড়া থাকবে। এবার প্রথমে ডান পা নামান, কিন্তু সম্পূর্ণ না। মাটির সঙ্গে সমান্তরালে রেখে অল্প ওপরের রেখে দিন। তারপর আরেক পা নামিয়ে আগের পায়ের সমান্তরালে আনুন। এবার আবার দুটি পা ওপরে তুলুন আর এক এক করে নামান। এভাবে ১৫ বার করুন পাঁচ সেট।
১৮. বারপিস
এটা বলতে গেলে একসঙ্গে চারটে এক্সারসাইজের সমাহার, জাম্প, স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক আর পুশ-আপ। সোজা সটান দাঁড়ান দুটি হাত পাশে রেখে। এবার হাল্কা জাম্প করে স্কোয়াটের মতো বসে পড়ুন হাঁটুর ওপর, মানে যেন আপনি চেয়ারের ওপর বসে আছেন। তারপর দুটি হাত সামনে নিয়ে হাতের সাহায্যে পা পিছন দিকে ছুড়ে দিন, যেন প্ল্যাঙ্ক। এবার পুশ-আপ করুন একবার। আবার পা সামনের দিকে হাতের ভরে এনে দাঁড়িয়ে যান। এভাবে ১৫ বার করুন যতটা স্পিডে করতে পারেন।
১৯. মাউন্টেন ক্লাইম্বারস
মাটির দিকে বুক রেখে শুয়ে পড়ুন সোজা হয়ে। এবার হাতের পাতা আর পায়ের জোরে শরীর ওপরে তুলুন আর ‘ভি’ শেপ তৈরি করুন। এবার অলটারনেট করে পা হাঁটু থেকে মুড়ে সামনে আনতে থাকুন। যত স্পিডে পারবেন করুন। এভাবে ১৫ বার করুন। বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ৩ সেট করুন।
২০. বিয়ার ক্রল
মাটির দিকে বুক রেখে সোজা শুয়ে পড়ুন। এবার হাত আর পায়ের জোরে শরীর কোমর থেকে মুড়ে ওপরে তুলুন। শরীরের ভর থাকবে দুটি হাতের পাতা আর পায়ের ওপর। এই অবস্থায় হামাগুড়ি দেওয়ার মতো করে মাটিয়ে চলুন। এটি ২০ বার করুন একেকবারে। ৫ বার করুন মোট।
এই এক্সারসাইজের মধ্যে যেগুলি আপনার মনে হবে সেগুলি রোজ নিয়ম করে করুন। দেখবেন তিন মাসের মধ্যেই খুব সুন্দর টোনড বডি পেতে শুরু করেছেন।
মন্তব্য করুন