হাঁটুর ব্যথা আধুনিক জীবনের এক অহরহ যন্ত্রণাদায়ক ব্যামো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ষাটোর্ধ প্রৌঢ় থেকে তরুণ সবার ক্ষেত্রেই হাঁটুর ব্যথা ভোগান্তি দিচ্ছে। বর্তমান অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এই ব্যথার প্রকোপকে আরো গম্ভীর করে তুলছে।
ওজন বাড়ছে কিন্তু তার সাথে পেশির গঠন সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় জয়েন্টে দেখা দিচ্ছে গ্রোথ পেইন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এর মতে প্রায় ১৮ মিলিয়ন লোক ফি বছর হাঁটুর সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছোটেন। তাহলেই ভাবুন!
হাঁটুর যন্ত্রণার কারণ:
- অস্টিওপোরোসিস
- টেডইন্টাইতিস বা কর্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া
- বার্সিটিস অর্থাৎ ধাক্কা লেগে হাঁটুর ওপরে সিরাম বা ক্ষতরস জমে ফুলে যাওয়া
- মেনিস্কাস বা পেশীর চোট
- লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া
- অসাবধানতাবশত মাত্রাতিরিক্ত মিসইউজ
- আর্থ্রারাইটিসের জন্য ব্যথা
দশটি এক্সারসাইজ:
- ভালো খবর হলো শক্তি বাড়ানোর ট্রেনিং ও স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করে আপনি আপনার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- যদি ব্যথা চোট, সার্জারি বা আর্থ্রাইটিস থেকে হয়ে থাকে, তবে শক্তিবর্ধক ব্যায়ামগুলো দ্বারা আপনার পেশীর নমনীয়তা ও মোশন রেঞ্জ বেড়ে যাবে।
- ফলে আপনার দৈনিক কাজ করতে কোনো অসুবিধে হবেনা।
- তবে এগুলি করার আগে ৫-১০মিনিট ওয়ার্ম আপ বা সাইক্লিং বা ইলিপটিকাল মেশিনে হেঁটে নিলে ভালো করবেন।
১. গোড়ালি ও কাফ মাসল ব্যায়াম:
এটা পায়ের নিচের দিকের কাফ মাসলের সংকোচন ও প্রসারণ টার্গেট করে তার শক্তি বাড়ায়।
পদ্ধতি:
- দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত দুটো সমান্তরাল ভাবে সামনে আনুন। অবশ্যই হাত সোজা রাখবেন।
- এবার হাতদুটোতে ভর দিয়ে একটা পা সামনে এনে অন্য পা থেকে দূরত্ব আনুন। পায়ের অভিমুখ থাকবে সোজা ও পায়ের পাতা চ্যাপ্টা করে স্থির রাখুন।
- এবার একটু ঝুকে হাঁটুকে সামনের দিকে ঠেলে স্ট্রেচ করুন। এইভাবে ৩০সেকেন্ড ধরে করুন।
- বিরতি নিন আবার করুন এবং পা বদল করে অভ্যাস করুন।
২. কোয়াড্রিশেপ স্ট্রেচিং:
এটি উরুর সামনের দিকে চতুর্মুখী পেশীকে টার্গেট করে সেটিকে ফ্লেক্সিবল বানাতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি:
- উপরে ছবির মত ৫ রকম ভাবে এটি করতে পারেন। আপনার সুবিধা মত যেকোনো একটি পোজ বেছে নিন।
- সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন। দেয়াল বা চেয়ার এর সাহায্য নিতে পারেন সাপোর্ট এর জন্য।
- একটা হাঁটু ভাঁজ করে সেটা হাত দিয়ে পেছনের দিকে পশ্চাৎদেশ অবধি তুলুন যতটা পারেন।
- এরপর ওই পোজে হোল্ড করুন ৩০সেকেন্ড মতো। তারপর স্বাভাবিক দাঁড়ানো পজিশনে ফিরে আসুন। এইভাবে কয়েকবার রিপিট করুন।
৩. হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ:
নাম শুনেই বুঝছেন এটা ব্যাকলেগ ও গ্লুটের গঠন মজবুত করার জন্য ও জঙ্ঘার শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।
পদ্ধতি:
- একটি ম্যাট মাটিতে বা সমতল কোনো জায়গায় বিছিয়ে তার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- এরপর পা সোজা রাখুন ও লম্বালম্বি মিলে রাখুন।
- তারপর বাম পা জঙ্ঘার অংশে ধরে দু হাত দিয়ে তুলে ধরুন।
- পা সোজা রেখে বুকের কাছাকাছি আনতে চেষ্টা করুন। ব্যথা অনুভূত হলে পূর্ববর্তী পজিশনে ফিরে আসুন আস্তে আস্তে।
- এইরকম ৩০ সেকেন্ড করে বিরতি নিয়ে পুনরায় আবার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে পা নামাবেন ও কয়েকবার রিপিট করবেন।
৪. হাফ স্কোয়্যাট:
পদ্ধতি:
স্কোয়্যাট পজিশনে দাঁড়ান সাথে পা এর মধ্যে গ্যাপ রাখুন। হাত দুটো সামনের দিকে সোজা ভাবে আনত রাখুন।
দৃষ্টি নিবন্ধ হবে সামনের দিকে।
এবার স্কোয়্যাট করে ধীরে ধীরে নীচে ঝুকুন ১০ ইঞ্চি মতো। তবে ফুল স্কোয়্যাট এর মত ঝুঁকবেন না। তারপর পজ নিন এবং গোড়ালিতে ভর দিয়ে শরীর উপরে তুলুন।
২-৩বার পুনরাবৃত্তি করুন।
৫. কাফ রেইজ:
পদ্ধতি:
- কাঁধ টানটান রেখে সোজাভাবে মেরুদন্ড খাড়া করে দাঁড়ান।
- এরপর দুটো পা একদম কাছাকাছি নিয়ে আসুন। তারপর পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর রেখে সম্পূর্ণ দেহের ওজন ট্রান্সফার করে গোড়ালি ওপরের দিকে তুলুন।
- হাত দুটো ভাঁজ করে কোমরের দুদিকে রাখুন। এবার ভর দেওয়া অবস্থায় ৫-১০সেকেন্ড অব্দি দাঁড়িয়ে আগের পজিশনে ফিরুন।
- শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক রাখুন ও ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
৬. হ্যামস্ট্রিং কার্ল:
এটি প্রধানত হিপ বোন ও তার জয়েন্ট ঠিক রাখার জন্য প্র্যাক্টিস করা হয়।
পদ্ধতি:
- সাপোর্ট এর জন্য চেয়ার বা দেয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন।
- সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন ও থাই এর মাঝে আনুমানিক গ্যাপ রাখুন।
- ডান পা ভাঁজ করে ওপরে তুলে তা পেছন দিক থেকে যতটা পারেন স্ট্রেচ করুন। গোড়ালির মুখ হবে সিলিং এর দিকে।
- বডি ব্যালেন্স মেন্টেন করুন ও দৃষ্টি সামনের দিকে রাখুন। ৫-১০ সেকেন্ড পোজ হোল্ড করে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসুন। কয়েকবার রিপিট করে নেবেন ভালো ফল পাবার জন্য।
৭. লেগ এক্সটেনশন:
ওয়েট মেশিন নয় বরং বডি ওয়েট ব্যবহার করেই আনবেন কোয়াড্রিশেপকে শেপে।
পদ্ধতি:
- মেরুদন্ড সোজা রেখে সামনে পা এগিয়ে চেয়ার এ বসুন।
- জানুর কাছে পা এর মাঝে ফাঁক রেখে দুটো পা সোজাসুজি ভাবে ঝোলান।
- সামনের দিকে তাকিয়ে বাম পা সামনের দিকে সোজাভাবে হাঁটুর নিচ থেকে যতটা পারেন উপরে তুলুন পশ্চাৎদেশ না উঠিয়ে।
- এই অবস্থায় পজ নিন।হাতের মুদ্রা হবে জানুর উপর স্থিত। এবার অন্য পা বদল করে আবার অনুশীলন করুন।
৮. লেগ রেইজ:
প্রধানত, হিপ মাসল ও উরু শক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
পদ্ধতি:
- ম্যাটে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটো পা সোজাভাবে রাখুন।
- এরপর একটি পা হাঁটু পর্যন্ত মুড়ে রেখে অন্য পাটি সোজা টানটান রেখে মাটি থেকে সোজা ওপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন অপর পা এর হাঁটুর উচ্চতা অব্দি।
- পজ নিন ও রিপিট করুন পা বদল করে।
৯. সাইড লেগ রেইজ:
পদ্ধতি:
- শুয়ে পড়ুন পাশ ফিরে এবং শরীর উল্লম্ব ভাবে স্থির রাখুন।
- ডানহাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা দিয়ে পা দুটো একে অপরের উপর প্লেস করুন।
- তারপর উপরের পাকে যতটা সম্ভব উপরে তোলার চেষ্টা করুন ও তারপর একই হারে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।
- এইভাবে বেশ কয়েকবার করুন। ফল পাবেন।
১০. প্রোন লেগ রেইজ:
পদ্ধতি:
- পায়ে ওয়েট লাগিয়েও এই এক্সারসাইজ করতে পারেন। তবে তা পাঁচ পাউন্ডের বেশি কখনই নয়।
- ম্যাট এর উপর উবু হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত সামনে নিয়ে এসে ভাঁজ করে মাথার কাছে রাখুন ও তারপর কপালে ঠেকান।
- বাম পা’তে হ্যামস্ট্রিং মাসলের উপর চাপ দিয়ে তা হাওয়ায় তুলুন ও ডান পা সোজা মাটিতে রাখুন। পেলভিক বোন যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে তা নজরে রাখুন।
- এই লিফ্টেড পোজ ৫ সেকেন্ড মতো রাখুন তারপর রিপিট মোড চালান।
মন্তব্য করুন