সেই বেদের সময় থেকে আজকের আধুনিক যুগেও নারীর গুরুত্ব কেবল তার সৌন্দর্য, দয়া-মায়া, স্নেহ, নিষ্ঠা, সমর্পণের মতো গুণাবলির দ্বারাই পরখ করা হয়ে থাকে। ইতিহাস সাক্ষী আছে যে বৈদিক যুগে নারীরা জ্ঞান, সৌন্দর্য, সম্পদ, বীরত্ব এবং পবিত্রতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আসন অর্জন করেছিলেন। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে, অনেক নারীর কাহিনি মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে। এঁদের মধ্যে দ্রৌপদী হলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ছবি ঋণঃ
দ্রৌপদী ছিলেন এক রাজকন্যা, যিনি তৎকালীন সময়ে এক অনুপম সুন্দরী হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন। যজ্ঞসেনী রূপে পরিচিত দ্রৌপদী ছিলেন কমলনয়ন, ঘন লম্বা চুল, লাল এবং বড় নখ, খিলান জাতীয় ভ্রূ, নীলকমল গন্ধ এবং শ্যামবর্ণা রঙের উপপত্নী, বেদজ্ঞ এবং বিদূষী। তাঁর সৌন্দর্যই সেই সময়ের অনেক রাজা ও রাজকুমারকে তাঁদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে বাধ্য করেছিল।
এখন আমাদের সকলেরই মনে একটা ধারণা তৈরি হতে পারে যে, আজকের আধুনিক যুগেও আমরা কি রাজকন্যার মতো অপরূপ সৌন্দর্য পেতে পারি না?
উত্তরটি অবশ্যই পেতে পারি, তাও আবার কোনও রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার না করে। এখানে আমরা আপনাকে সেই জিনিসগুলি সম্পর্কে জানাবো যা প্রাচীন কালের রানীরা ব্যবহার করতেন এবং যার দ্বারা একজন সাধারণ যুবতী তার সৌন্দর্যকে রাজকন্যা দ্রৌপদীর মতো করে তুলতে পারেন বর্তমানে।
১) নিম
নিমকে সমস্ত গাছপালা ঔষধি গাছের রাজা বলা হয়। নিমের ছাল, পাতা এবং নিম পাতার রস বিভিন্ন রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম ত্বকের পিম্পল নিরাময় করতে সাহায্য করে। এই পাতা গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে তার সঙ্গে গোলাপজল দিয়ে পেস্টে তৈরি করে মুখে লাগালে শুষ্ক ত্বক কোমল অনুভূত হয়। তেলের মধ্যে নিমের পাতা মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগানো চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
২) কেশর
কেশর হল একটি রাজকীয় উদ্ভিদ যা, সমস্ত রাজকীয় কাজকর্মে ব্যবহৃত হয়। রাজপুত্রের মতো রঙ এবং সৌন্দর্য পেতে কেশর ব্যবহার করা হয়। নরম, কোমল এবং ঝলমলে ত্বকের জন্য কেশর ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল। ত্বকের ট্যানের সমস্যা বা বর্ণহীন ত্বকের হাল ফেরাতে, দুধ, ক্রিম বা গোলাপজলের সঙ্গে সামান্য কেশর মিশিয়ে নিন এবং রাজকন্যার মতো গায়ের রঙ পান।
৩) মধু
বাচ্চাদের থেকে বয়স্ক, সমস্ত বয়সের এবং সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষই খাবার মধুর মতো মিষ্টি এবং মধুর মতো কথা শুনতে পছন্দ করেন। প্রাচীনকাল থেকেই এটি নান্দনিকতায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চন্দন, মালাই, বেসন এবং গোলাপ জলের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে তৈরি উবটন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখে।
৪) আমলা

চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য আমলার চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। খাবারে আমলা ব্যবহার করলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করা যেতে পারে। দীর্ঘ, ঘন এবং ঝলমলে চুলের জন্য আমলা পাউডার ম্যাজিকের মতো কাজ করে। শিকাকাই ও রীঠার সঙ্গে আমলা ব্যবহার করলে, চুলের প্রতিটি সমস্যা যেমন চুল পড়া, শুষ্কভাব এবং পাকা চুলের সমস্যা চিরতরে নিরাময় হয়।
৫) মুলতানি মাটি
মুলতানির মাটি প্রাচীনকাল থেকেই সমস্ত ভারতীয় ঘরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুলতানি মাটি আয়ুর্বেদিক দিক থেকে একটি প্রাকৃতিক স্ক্রাব এবং ক্লিনজার। কিছুটা হলুদ, চন্দনের গুঁড়ো, একটি টমেটোর রস খানিকটা মুলতানি মাটির মিশিয়ে তৈরি করা উবটন ব্যবহার করলে তা ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বকে থাকা দাগগুলিও পরিষ্কার হয়।
৬) হলুদ
হলুদ মূলত পবিত্র কোনও অনুষ্ঠানে সমস্ত বিউটি প্রোডাক্টগুলির মধ্যে অনিবার্য হিসাবে পাওয়া যায়। হলুদ ছাড়া রান্নাঘরে কোনও খাবার প্রস্তুত হয় না, এমনকি এটি ছাড়া সৌন্দর্য বাড়ানোর কথাও ভাবাই যায় না। দই, বেসনের সঙ্গে হলুদ লাগালে স্ট্রেচ মার্ক দূর হয়। একইভাবে টমেটোর রসের সঙ্গে হলুদ ব্যবহার করলে ত্বকের রিঙ্কেলস তৎক্ষনাৎদূর করে। নারকেল তেল বা ক্যাস্টর অয়েল-এর মধ্যে হলুদ মিশিয়ে ফাটা গোড়ালিতে লাগালে সেই সমস্যাও নিরাময় হয়।
৭) চন্দন
চন্দন কাঠ মূল্যবান হওয়ার পাশাপাশি এটি ত্বকের সৌন্দর্যের জন্যও বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। ভাল অ্যান্টিসেপটিক হওয়ার পাশাপাশি এটি রক্ত সঞ্চালন ভালো করতেও সহায়তা করে। পরিষ্কার ও উজ্জ্বল স্কিনটোনের জন্য চন্দনের সঙ্গে বাদাম এবং দুধের সঙ্গে মিশিয়ে লাগান উপকার পাবেন।
8) তুলসী
বাড়ির উঠোনে তুলসীর উপস্থিতি হ’ল প্রতিটি ভারতীয় বাড়ির পরিচয় এবং গর্ব। পুজো-পাঠের যেকোনও কাজে কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি তুলসী পাতা একটা রাজকীয় সৌন্দর্য প্রদানে সহায়তা করে। মুখের দাগ পরিষ্কার করতে তুলসী পাতার গুঁড়োর অল্প দুধের সঙ্গে মাখিয়ে মুখে লাগান। এ ছাড়া দাঁত চকচকে রাখতে তুলসী পাতার গুঁড়োও ব্যবহার করা হয়।
৯) দই

দই একদিকে আমাকে মায়ের হাতের স্বাদের কথা মনে করিয়ে দেয়, পাশাপাশি এটি উবটনের একটি জরুরী অংশ হয়ে শরীরের, বিশেষত চুলের সৌন্দর্য বাড়াযতে সাহায্য করে। চুলের শুষ্কভাব দূর করতে দইয়ের চেয়ে ভাল আর কিছু নেই। আপনি যদি রাজ কন্যাদের মতো চুল রাখতে চান তাহলে দইয়ের মধ্যে দুটি ডিম, দু-চামচ বাদাম তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। আধ ঘন্টা পরে এই পেস্টটিকে পরিষ্কার করুন এবং চকচকে চুলের অধিকারীনি হয়ে উঠুন।
১০) বেসন
আপনার ত্বকের সৌন্দর্য তাৎক্ষণিক ভাবে হ্রাসকারী দাগগুলি আপনি যদি অবিলম্বে মুছে ফেলতে চান এবং যদি মখমলের মতো ত্বক পেতে চান, তাহলে শসার রসের মধ্যে বেসন মিশিয়ে মুখে লাগান। চকচকে ও রেশমী ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য বাদামের গুঁড়ো, লেবুর রস এবং এক চামচ দুধের সঙ্গে বেসন মিশিয়ে লাগালে, তা দ্রুত প্রভাব ফেলে।
১১) নারকেল
নারকেল তেল সবসময় চুলের উজ্জ্বল রঙ এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটি হ’ল একটি রাসায়নিক-মুক্ত কন্ডিশনার যা সমস্ত বয়সের মহিলারা অবাধে ব্যবহার করতে পারেন।
১২) মেহেন্দি
মহিলাদের ষোল শৃঙ্গারের মধ্যে মেহেন্দি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। হাত ও পায়ের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি এটি চুলের জন্যও খুব উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে রানী এবং নবাবী মহিলারা চুলকে রঙিন করতে মেহেন্দি ব্যবহার করে আসছেন।
চুলে হেনা ব্যবহার তা চুলকে কেবল নতুন চেহারাই দেয় না, পাশাপাশি চুলের আভা ও আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং একটি ভাল কন্ডিশনার হিসাবেও কাজ করে। চুলে খুশকির সমস্যা হোক, বা চুলের অকালে ঝলে পড়াতে মেহেদী ব্যবহারে দারুণ ফল মেলে।
তো আপনারা দেখতেই পেলেন, দ্রৌপদীর সৌন্দর্যের গোপনীয়তা এখন আর গোপন নয়, এখন আপনিও এটি জেনে গেলেন এবং জিনিসগুলি আপনার বাড়িতেও উপলব্ধ। তাহলে আর অপেক্ষা কীসের, আসুন এই জিনিসগুলি ব্যবহার করুন এবং আপনিও রাজকীয় সৌন্দর্যের খেতাব গ্রহণ করুন।
মন্তব্য করুন