করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি আমরা ঘরে বসে। লকডাউনে ঘর থেকে বেরনোর অনুমতি আমাদের কাছে নেই। কিন্তু সব মানুষ তা শুনছেন কই! কোনও না কোনও অজুহাতে তাঁরা বাইরে যাচ্ছেন, আড্ডা মারছেন আরও কত কিছু!
শুধু যে নিয়ম করে বা লাঠি চার্জ করে মানুষের বাইরে বেরনোর অভ্যেস বন্ধ করা যাবে না সেটা পুলিশ-প্রশাসন সবাই জানতেন। তাই পুলিশ যেমন গান গেয়ে বা মিম বানিয়ে মনোরঞ্জনের মাধ্যমে মানুষকে ঘরে থাকার বার্তা দিচ্ছেন, সতর্ক করছেন।
এবার তেমনই আমাদের টালিগঞ্জের কলাকুশলীরাও ঘরে বসে আমাদের সতর্ক করছেন, ঘরে থাকার আর্জি জানাচ্ছেন, তাও একটি সুন্দর শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে, যার নাম- ‘ঝড় থেমে যাবে একদিন’।
অনুপ্রেরণায় মুখ্যমন্ত্রী
এই শর্ট ফিল্মে কারা আছেন, কী বক্তব্য এই সবের মধ্যে পড়ে আসছি। আসল কথা হল এই শর্ট ফিল্মের নেপথ্যে ও ভাবনায় যিনি আছেন তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী একটি গান লেখেন ঝড় থেমে যাবে একদিন বলে। আপনারা ইউটিউবে পেয়েও যাবেন। এই গানটির কথাগুলির রচয়িতা মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং সুর দিয়েছেন আর গেয়েছেন কবীর সুমন। সেই গানের প্রথম লাইন নিয়েই এই শর্ট ফিল্মের নামকরণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক দিক ছাড়াও নিজস্ব সাংস্কৃতিক একটি জগত আছে সেটা আমরা সবাই জানি। এই দুঃসময়ে তিনি প্রশাসনিক দিক সামলানো ছাড়াও এইভাবেও যে আমাদের সঙ্গে আছেন তার জন্য অবশ্যই তাঁর ধন্যবাদ প্রাপ্য।
কী আছে এই শর্ট ফিল্মে?
এই শর্ট ফিল্মটির পরিচালনায় আছেন অরিন্দম শীল। আর কলাকুশলীদের মধ্যে কে না নেই! প্রথমেই দেখা যায় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর রুক্মিণীর কথোপকথন যেখানে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন রুক্মিণীর বাবা (বয়স ৭৫) এবং তিনি থাকেন বাঁকুড়ায়। বয়স্ক মানুষ, তাঁর ওষুধ শেষ। বাইরে যেতে পারছেন না বলে ওষুধ ও কিনতে পারছেন না আর ডাক্তার ও দেখাতে পারছেন না। মেয়েকে ফোন করে আসতে বলছেন, কিন্তু মেয়েও বা কলকাতা থেকে কী করে যাবে ওখানে, কোনও পরিষেবা তো নেই! এবার রুক্মিণী থাকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে যেখানে তাঁকে অস্থির দেখে অন্য সদস্যরা যেমন কোয়েল, ঋতুপর্ণা, শুভশ্রী, মিমি, নুসরত, পরমব্রত, আবীর সকলেই চিন্তায় পড়ে যায়। কোয়েল খাবার নিয়ে আসে রুক্মিণীর কাছে। শেষে প্রসেনজিতের সাহায্যে একটি ব্যবস্থা হয় আর তার ফলে রুক্মিণী যায় তাঁর বাবার কাছে। বাবাও ততক্ষণে ডাক্তার দেখাতে পেরে আর ওষুধ পেয়ে বেশ নিশ্চিন্ত। কিন্তু কীভাবে গেল রুক্মিণী বাবার কাছে? সেটা জানার জন্য দেখে ফেলতে হবে শর্ট ফিল্মটি।
কী পেলাম এই শর্ট ফিল্মে?
- করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে, মানসিক নয়। বরং এই সময়ে একসঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকার সময়, পাশে থাকার সময় বুদ্ধি করে।
- আমরা ফিল্মের শুরুতেই দেখব পরমব্রত আর আবীর দুজনে বসে অ্যাপার্টমেন্টে কার কত চাল ডাল লাগবে তার হিসেব করছে যাতে প্রত্যেককে দিয়ে দেওয়া যায় আর কাউকে না বাইরে যেতে হয়।
- ঋতুপর্ণা আবার জানান দিচ্ছে যে কেউ কেউ এখনও দরকারী কিছু সামগ্রী পাননি, তা যেন পৌঁছে দেওয়া হয়।
- কোয়েল লিফট থেকে নামার সময়ে লিফটের বোতামে হাত না দিয়ে কাঁটা জাতীয় কিছু একটা দিয়ে বোতাম টিপছে আর শুভশ্রী কলিং বেল প্রেস করার সময়ে আঙুল দিয়ে না করে কনুই দিয়ে করছে। অর্থাৎ গোটা শর্ট ফিল্ম জুড়েই সচেতনতা আর পাশে থাকার বার্তা।
- এই অ্যাপার্টমেন্টটিকে যদি আমি পশ্চিমবঙ্গ ভাবি তাহলে আমাদের সকলের কিন্তু সকলের সঙ্গে এভাবেই থাকা উচিৎ, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। এবার আপনারা ভাববেন লকডাউনে শুটিং হল কীকরে! এটা সবটাই হয়েছে প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রীর নিজের বাড়িতে বসে শুট করে।
- এভাবেও কিন্তু একটা বার্তা দেওয়া হল যে যদি শুটিং করার মতো কাজ, যা বাইরে বেরিয়ে করতেই হয়, তা যদি ঘরে বসে হয়, তাহলে বাইরে এই সময়ে সাধারণ মানুষ কেন বেরোবেন?
শুধুই কী সচেতনতা?
না, এই ভিডিও শুট করার অন্যতম কারণ সতর্ক করার জন্য হলেও সবটা কিন্তু তা নয়। আসলে আমাদের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে এমন অনেকে আছেন যাদের আমরা টেকনিশিয়ান বলি, অনেকে চা দেন। তাঁদের রোজগার কিন্তু আসে এই রোজের শুট হওয়া থেকে। এখন তাঁদের পরিবার কীভাবে চলবে? এই শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে যা টাকা আসবে তা দেওয়া হবে সেই সব মানুষদের হাতে। এটা খুবই মহৎ একটি কাজ।
সম্প্রতি বলিউডেও এরকম একটি ভিডিও শুট করতে দেখা গেছে অমিতাভ বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রনবীর কাপুর, আলিয়া ভটদের। এবার বাঙলায় হল ঝড় থেমে যাবে একদিন। সত্যিই তো ঝড় থেমে যাবে আর আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যাবে কীভাবে পাশে থাকতে হয়, দূরে থেকেও। আর বাড়িতে বসে দেখে ফেলুন- ঝড় থেমে যাবে একদিন।
মন্তব্য করুন