একটা নয়, দুটো নয়, আজ একেবারে চল্লিশটা সমাধান নিয়ে চলে এলাম। আপনার চুলের যে কোনও সমস্যা হোক না কেন, এ টু জেড সলিউশন পাবেন আজকের লেখায়। চুল পড়া, চুলের ডগা ফাটা, পাকা চুল, খুশকি থেকে শুরু করে অ্যালোপেসিয়া পর্যন্ত সব কিছুর সমাধান রইল আজ এখানে। খুব সাধারণ কিছু জিনিস মাথায় রাখলেই কিন্তু আপনার চুল থাকবে সুন্দর।
চুলের শুষ্কতা কমাতেঃ
১. সপ্তাহে শ্যাম্পু রোজ নয়
আপনি হয়তো কম বয়সে বেশি শ্যাম্পু করে এসেছেন। বলা ভাল, চুল পরিষ্কার রাখার জন্য প্রায় রোজই শ্যাম্পু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রকম ক্ষেত্রে চুল শুকিয়ে যাওয়ার, স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বাড়ে। শ্যাম্পু বেশি করলে স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল যেমন কমে আসে, তেমনই অয়েল তৈরি হওয়াও কমে যায়। তাই সপ্তাহে দু দিন শ্যাম্পু করলেই দেখবেন চুলের ড্রাইনেস অনেক কমে গেছে।
২. চুল ময়েশ্চারাইজড রাখুন
চুলের শুষ্কতা কম করার জন্য চুলের ময়েশ্চার খুব দরকার। ময়েশ্চার ব্যবহার করলে চুল নরম থাকে, ম্যানজেবল থাকে। ফলে সহজে ভেঙে যায় না, চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। ময়েশ্চার বলতে আমরা বলছি শ্যাম্পু করার পর নিয়ম করে কন্ডিশনার ব্যবহার করা। তাছাড়া এখন অনেক সিরাম চলে এসেছে। মোট কথা হল, চুল শ্যাম্পু করার পর তাকে একটু ময়েশ্চারড করা খুব দরকার।
৩. আয়রন কম করুন

আজকাল আমরা চুলে বেশি স্টাইল করি। নানা রকম ভাবে চুলের স্টাইলিং করতে গেলে চুলে আয়রন বা হিট তো দিতেই হবে। আর তাছাড়া স্নানের পর তাড়াতাড়ি চুল শুকিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা তো হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেই থাকি। কিন্তু এই সবের চক্করে চুলের যে সাধারণ সিল্কিনেস কমে যাচ্ছে সেটা আমরা দেখি না। হিট নেওয়ার জন্য আমাদের চুল তৈরি থাকে না। তাই যতটা সম্ভব হিট দেওয়া বন্ধ করা উচিত। এতেও চুলের ড্রাইনেস অনেক কম হয়।
৪. নিয়মিত তেল মাখা
আজকাল আমরা খুব একটা তেল মাখতে চাই না কারণ মাথা অয়েলি লাগবে বলে। কিন্তু চুল ভাল রাখতে গেলে তেলের যে কোনও বিকল্প নেই সেটা তো আমরা জানিই। তাই নিয়ম করে, অন্তত সপ্তাহে দুই দিন তেল মাথায় দিতেই হবে। এতে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। চুলের বৃদ্ধি ভাল হয় আর ডগা ভাঙাও কমে। আর চুলের রুক্ষতা তো কমেই।
৫. মেওনিজের প্যাক ব্যবহার
খুব ভাল একটা ওয়ান স্টপ সলিউশন এটা চুলের শুষ্কতা কমানোর জন্য। খুব বেশি কিছু লাগেও না।
উপকরণঃ
- দই ৩ চামচ
- ফ্লেভার ছাড়া মেওনিজ ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
একটি পাত্রে মেওনিজ আর দই ভাল করে নিয়ে মিশিয়ে নিন। এগলেস মেওনিজ হলে ডিম দিতে পারেন। এই মিশ্রণ চুলে মেখে এক ঘণ্টা মতো অপেক্ষা করুন। তারপর আগে অল্প উষ্ণ জল দিয়ে, তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। মাসে দুই বার করলেই দারুণ ফল পাবেন।
খুশকি দূর করতে
৬. জবা ফুল আর নারকেল তেল
উপকরণঃ
- জবা ফুল ৫ টা
- নারকেল তেল ৫ চামচ
পদ্ধতিঃ
আগে জবা ফুল নিয়ে অল্প চটকে নিতে হবে। একটা বাটিতে নারকেল তেল গরম করে তার মধ্যে জবা ফুল দিয়ে অল্প ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর স্ক্যাল্পে, চুলে ভাল করে সেই তেল মেখে রাখুন সারা রাত। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন। এই তেল বানিয়ে রাখতে পারেন, অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।
৭. অ্যালোভেরা জেল
উপকরণঃ
- অ্যালোভেরা জেল ৩ চামচ
- টি ট্রি অয়েল ৪ চামচ
পদ্ধতিঃ
অ্যালোভেরা বাড়ির গাছ থেকে নিলে সবচেয়ে ভাল। নয়তো ভাল ব্র্যান্ডের হতে হবে। এর সঙ্গে টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে স্নানের দুই ঘণ্টা আগে মেখে নিন। তারপর স্নান করুন দুই ঘণ্টা পর। সপ্তাহে দুই দিন করতে পারেন। খুশকি খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় এতে।
৮. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
উপকরণঃ
- ২ বড় চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
- ৩ চামচ নারকেল তেল
পদ্ধতিঃ
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার শুধুই রোগা হতে কাজে আসে তা নয়। খুশকি দূর করতেও এটি খুব ভাল কাজ দেয়। দুটি উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন আর চুলে আগের দিন রাতে মেখে রেখে দিন। পরের দিন সকালেও স্নানের দুই ঘণ্টা আগে মাখতে পারেন। অল্প উষ্ণ জলে আগে মাথা ধুয়ে তারপর সাধারণ জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। মাসে তিন বার করলেই যথেষ্ট।
৯. ওমেগা থ্রি বেশি করে খান

ওমেগা থ্রি আমাদের স্কিন আর চুল, দুইয়ের জন্যই খুব ভাল। ওমেগা থ্রিএর ঘাটতি হলে চুলের ড্রাইনেস বাড়ে। এতে খুশকির সম্ভাবনা, চুলকুনি অনেক বেড়ে যায়। তাই ওমেগা থ্রি আছে এমন খাবার, যেমন বাদাম, ওয়ালনাট এই জিনিস বেশি করে খান।
১০. বেকিং সোডার ব্যবহার
খুশকি দূর করতে এই জিনিসটির ব্যবহার নিশ্চয়ই আপনারা আগে শোনেননি। বেকিং সোডা আসলে খুব ভাল চুল আর স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট করে। এতে ডেড স্কিন স্ক্যাল্প থেকে উঠে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়ার সম্ভাবনা কমে, খুশকিও কমে যায় অনেক। তাই সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বেকিং সোডা মাথায় দিন। হাল্কা হাতে স্ক্যাল্প ঘষুন। ভাল করে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু কিন্তু ভাল করে করতে হবে এর পর। না হলে শাওয়ারের নিচে স্নান করতে হবে।
পাকা চুলের সমস্যায়
১১. জবা ফুল আর আমলকি
উপকরণঃ
- ৭ টা লাল জবা ফুল
- ২ টি আমলকি
পদ্ধতিঃ
জবা ফুল আর আমলকি সেদ্ধ করে নিন। তারপর দুটি উপকরণ ভাল করে চটকে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। এক ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রেখে দিন। তারপর হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে চুলে শ্যাম্পু করে নিন। জবা ফুল আর আমলকি, দুটি উপকরণই চুল সাদা হয়ে যাওয়া আটকাতে খুব ভাল কাজ দেয়।
১২. আদা আর মধু
উপকরণঃ
- ২ চামচ আদা কুচি
- ৩ চামচ মধু
পদ্ধতিঃ
আদা কুড়িয়ে নিয়ে মধুর সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর চুলে বিলি কেটে কেটে এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট মতো লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন। মাসে তিন বার করলেই অনবদ্য ফল পাবেন।
১৩. পেঁয়াজের রস
উপকরণঃ
একটা বড় পেঁয়াজের রস
পদ্ধতিঃ
একটা বড় পেঁয়াজ নিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে নিন। এতে জল দিয়ে হাত দিয়ে চিপে রস বের করে নিন। এই রস এবার চুলে মেখে রাখুন। ২০ মিনিট মতো রেখে আগে উষ্ণ জলে, তারপর ঠাণ্ডা জলে চুল পরিষ্কার করে নিন। পেঁয়াজের গন্ধ সহ্য করে নিতে পারলে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
১৪. কারিপাতা আর দই
উপকরণঃ
- দশটা কারিপাতা
- ২ চামচ টক দই
পদ্ধতিঃ
কারিপাতা এক ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভাল করে পিষে নিয়ে এতে টক দই দিন। ভাল করে মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণ চুলে মেখে রেখে দিন এক ঘণ্টা মতো। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। খুব ভাল চুল কালো করে এই মিশ্রণ।
১৫. আমন্ড অয়েল
উপকরণঃ
- ৩ চামচ আমন্ড অয়েল
- ৩ চামচ রোজমেরি অয়েল
পদ্ধতিঃ
দুই রকমের তেল ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। গরম করার দরকার নেই। রাতে এই দুই তেলের মিশ্রণ মাথায় আর চুলে মেখে রাখতে হবে। পরের দিন ভাল করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। সপ্তাহে এক দিন করে করলেই হবে। দুর্দান্ত কাজ দেয় এই তেলের মিশ্রণ।
চুল পড়া কম করতে
১৬. মেথির প্যাক
উপকরণঃ
- ৩ চামচ মেথি
- টক দই ২ চামচ
পদ্ধতিঃ
আগের দিন সারা রাত মেথি জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন মেথি বেটে নিয়ে তার সঙ্গে দই মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলে ভাল করে মেখে নিন। ২০ মিনিট চুলে রেখে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন সাধারণ জলে। এটি মাসে দুই বার করলেই হবে।
১৭. মুসুরির ডালের প্যাক
উপকরণঃ
- ৪ চামচ মুসুরির ডাল
- ২ চামচ জোজোবা তেল
পদ্ধতিঃ
বাজার থেকে ভাল ব্র্যান্ডের জোজোবা তেল কিনে নিন। আগের দিন সারা রাত ভেজানো মুসুরির ডাল বেটে নিন। এই ডাল বাটার সঙ্গে তেল মিশিয়ে ভাল করে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন। সেই মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট রেখে সাধারণ জল দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে নিন। অসাধারণ কাজ পাবেন।
১৮. বিটের ব্যবহার

উপকরণঃ
- অর্ধেক বিটের রস
পদ্ধতিঃ
সামনেই শীত আসছে। এই সময়ে আমরা বিট পাব। সেই বিট কিন্তু চুল পড়া কম করতে খুব ভাল কাজ দেয়। তেমন কিছুই করতে হবে না। অর্ধেক বিট নিয়ে সেটি অল্প সেদ্ধ করে নিন। সেই সেদ্ধ করা বিট চটকে রস করে সেই রস চুলে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শ্যাম্পু না করলেও চলবে। এতে চুলে কিন্তু একটা সুন্দর শাইন আসবে।
১৯. চিন্তা কম করতে হবে
জানি, আজকের দিনে আমাদের চিন্তা অনেক। কিন্তু অতিরিক্ত চিন্তা করেও তো কিছু করা যাবে না। উলটে চুল পড়বে। স্ট্রেস থাকলে কিন্তু চুল পড়া কিছুতেই কমবে না। তাই চিন্তা করুন, কিন্তু স্ট্রেস নেবেন না। এতে ৮০% চুল পড়া এমনিই কমে যাবে।
২০. উপযুক্ত ডায়েট
চুল না পড়ার জন্য ডায়েট ঠিক থাকাও খুব দরকার। প্রোটিন খাবারে থাকছে কিনা দেখুন। ডিম, মাছ, মাংস, সয়াবিন ভাল করে খান। সঙ্গে সবুজ সবজি। প্রোটিন চুলের জন্য খুব দরকারি। প্রোটিন চুলের গোঁড়া মজবুত করে। এতে চুল পড়া কমে আসে।
নতুন চুল গজাতে
২১. লেবুর রস
উপকরণঃ
- একটি পাতিলেবু
পদ্ধতিঃ
পাতিলেবু থেকে আগে রস বের করে নিন। এই রস এবার চুলে লাগান স্নান করার ১৫ মিনিট আগে। তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু সবসময়ে যে করতে হবে তার কোনও মানে নেই। সপ্তাহে চার দিন পর্যন্ত আপনি এটা করতে পারেন। পাতিলেবুতে থাকা ভিটামিন সি চুল গজাতে খুব ভাল ভাবে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে লেমন এসেনশিয়াল অয়েল কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
২২. গ্রিন টি
উপকরণঃ
- দুটি ব্যবহার করা গ্রিন টি ব্যাগ
পদ্ধতিঃ
একটু গরম থাকা অবস্থাতেই দুটি ব্যবহার করা টি ব্যাগ থেকে চা পাতা বের করে নিন। একটু হাত দিয়ে পিষে নিন। এবার এই চা পাতা চুলে, স্ক্যাল্পে ভাল করে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন আর শ্যাম্পু করে নিন ভাল করে। ১৫ দিন অন্তর অন্তর করলেই দেখবেন খুব ভাল ফল পাচ্ছেন।
২৩. নারকেলের দুধ
উপকরণঃ
- এক কাপ মতো নারকেলের দুধ
- লেবুর রস
পদ্ধতিঃ
নারকেল তেলের মতো নারকেল দুধও কিন্তু চুলের জন্য খুব ভাল। নারকেল দুধ কিনে এটি করবেন না। নারকেল থেকে দুধ বের করুন। তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৪ ঘণ্টা মতো রেখে দিন। তারপর ভাল করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। খুব তাড়াতাড়ি নতুন চুল গজাবে।
২৪. এগ মাস্ক
উপকরণঃ
- ডিমের সাদা অংশ
- ১ চামচ অলিভ অয়েল
- মধু
পদ্ধতিঃ
তিনটি উপকরণ খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। স্ক্যাল্পে ভাল করে লাগিয়ে রেখে দিন ১ ঘণ্টা। তারপর অল্প উষ্ণ জল দিয়ে আগে ধুয়ে পড়ে শ্যাম্পু করে নিন। মাসে তিন বার করতে পারেন।
২৫. ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ
চুল নতুন করে গজাতে তেল মাখা তো ভালই। কিন্তু ক্যাস্টর অয়েল এক্ষেত্রে একটু বেশিই কাজে আসে। এতে থাকা ওমেগা ৬, ভিটামিন ই চুল তাড়াতাড়ি গজাতে খুব ভাল কাজ করে। আজকাল ভাল ব্র্যান্ডের ক্যাস্টর অয়েল বাজারে পাওয়া যায়। কিনে এনে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চুলে আর স্ক্যাল্পে ভাল করে মেখে নিন। গরম করলেও হয়, না করলেও হয়। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন।
উকুনের সমস্যায়
২৬. পেট্রোলিয়াল জেল
পেট্রোলিয়াম জেলি খুব ভাল কাজ করে উকুনের সমস্যায়। শুধু আগের দিন রাতে স্ক্যাল্পে বেশ ভাল করে পেত্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন কোনও বেবি অয়েল দিয়ে ওই জেল তুলে নিতে হবে। তারপর হাল্কা করে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। ড্রাই শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি আপনি এক দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন।
২৭. নিম আর তুলসীর হেয়ার মাস্ক
উপকরণঃ
- ১০ টা মতো নিম পাতা
- ১০ টা মতো তুলসী পাতা
পদ্ধতিঃ
দুই ধরণের পাতাই ভাল করে ধুয়ে আগে বেটে নিন। তারপর বেটে নিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট চুলে আর স্ক্যাল্পে সারা রাত লাগিয়ে রাখুন। অবশ্যই একটা শাওয়ার ক্যাপ পরে নেবেন। পরের দিন হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে দুই দিন করে করলে আপনার উকুন নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
২৮. রসুনের পেস্ট
উপকরণঃ
- ৫ কোয়া রসুন
- ২ চামচ লেবুর রস
পদ্ধতিঃ
আগে রসুন ভাল করে ধুয়ে থেঁতো করে নিন। এর থেকে রস বের করে নিন। এই রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে রেখে দিন ২০ মিনিট মতো। তারপর চুল ভাল করে শ্যাম্পু করে নিন। কন্ডিশনার দিন। এতে খুব তাড়াতাড়ি উকুন চলে যায়, আর আসেও না।
২৯. টি ট্রি অয়েল আর নারকেল তেল
উপকরণঃ
- ৫ চামচ টি ট্রি অয়েল
- ৩ চামচ নারকেল তেল
পদ্ধতিঃ
দুই ধরণের তেল আগে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। গরম করার দরকার নেই। এই মিশ্রণ স্ক্যাল্পে ভাল করে লাগিয়ে রেখে দিন সারা রাত। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে তিন দিন অনায়াসে করতে পারেন। এর পর চুল আছড়ালে দেখবেন মরা উকুন পড়ে যাচ্ছে।
৩০. ইউক্যালিপটাস অয়েল

উপকরণঃ
- ২০ ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল
- ৫ ফোঁটা অলিভ তেল
পদ্ধতিঃ
দুই ধরণের তেল ভাল করে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। স্নানের ৩ ঘণ্টা আগে ব্যবহার করলেই হবে। চাইলে সারারাত রাখতে পারেন। বেবি শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। বেশ কয়েক দিন টানা করলেই ফল বুঝতে পারবেন।
টাক পড়ার সমস্যা রুখতে
৩১. পেয়ারা পাতার জল
উপকরণঃ
- ১০টি মতো পেয়ারা পাতা
পদ্ধতিঃ
পেয়ারা পাতা টাকের সমস্যা সমাধানের খুব ভাল ওষুধ। পেয়ারা পাতা জোগাড় করে নিন। এই পাতা এবার জলে ২০ মিনিট মতো ফুটিয়ে নিন। দেখবেন জলের রঙ লালচে হয়ে এসেছে। এই জল এবার ঠাণ্ডা করে টাকের জায়গায় আর সারা মাথায় লাগিয়ে রেখে দিন। টাক যেখানে নেই সেখানকার চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেক কমে আসবে।
৩২. ল্যাভেন্ডার অয়েল
টাক পড়ার হাত থেকে বাঁচতে এটি অনবদ্য কাজ করে। বাজারে ল্যাভেন্ডার অয়েল অনায়াসে পেয়ে যাবেন। একটু ভাল ব্র্যান্ডের ল্যাভেন্ডার তেল নিয়ে সেটা কয়েক ফোঁটা চুলে, স্ক্যাল্পে আর ফাঁকা জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। সারা রাত রাখতে পারেন। পরের দিন শ্যাম্পু করার খুব একটা দরকার নেই।
৩৩. থাইম এসেনশিয়াল অয়েল
টাক পড়া বন্ধ করতে এসেনশিয়াল অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। আর সেটা যদি হয় থাইম এসেনশিয়াল অয়েল তাহলে তো কথাই নেই। কয়েক ফোঁটা থাইম এসেনশিয়াল অয়েল শুধু স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। ৩ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখলেই হবে। তারপর চুল ধুয়ে নিন।
৩৪. চিরতার জল
চিরতা টাক পড়া বন্ধ করতে খুব ভাল কাজ দেয়। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে কষ্ট করে চিরতার জল খেয়ে নিতে হবে। চিরতা দুর্বল হেয়ার ফলিকল আবার সতেজ করে তোলে। আগের দিন রাতে জলে চিরতা ভিজিয়ে পরের দিন সকালে খালি পেটে সেই জল খেয়ে নিন। এক মাস করে দেখুন। উপকার পেতে আপনি বাধ্য।
৩৫. ভেজিটেবল অয়েল
শুধু খাবার জন্য নয়, ভেজিটেবল অয়েলের অন্য অনেক উপকার আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল টাক পড়া বন্ধ করা। কয়েক ফোঁটা ভেজিটেবল অয়েল গরম করে স্নানের এক ঘণ্টা আগে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুই দিন করুন।
সাধারণ কিছু টিপস
এই টিপস আপনার সমস্যা থাক বা না থাক, আপনি করলে চুলের কোনও সমস্যা আর আসবে না।
৩৬. চুলে হেনা করা
হেনা চুলের জন্য খুব দরকারি একটি উপকরণ। এটি একদিনে যেমন চুলের পি.এইচ ব্যাল্যান্স ধরে রাখে, তেমনই অন্যদিকে চুলের গ্রোথ ভাল করে, চুল পড়া বন্ধ করে। সুন্দর ন্যাচারাল রঙ পেতে পারেন হেনা থেকেই। আজকাল অনেক ভাল কোম্পানির হেনা চলে এসেছে। মাসে একবার সেই হেনার প্যাক ব্যবহার করুন।
৩৭. ভিজে চুলে ঘুমাবেন না
ভিজে চুল মানে চুল তখন নরম আছে। নরম মানেই চুল তখন সহজে ভেঙে যেতে পারে। তাই চুল ভিজে অবস্থায় ঘুমানো একদম ঠিক নয়। আগে চুল একটু শুকিয়ে নিতে হবে অবশ্যই।
৩৮. জোরে চুল আঁচড়াবেন না
যাদের চুল বেশি পড়ে তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাঁরা তাড়াহুড়ো করে চুল আঁচড়ান। খুব জোরে জোরে চুল আঁচড়ান তাঁরা। এতে চুলের ভিত নরম হয়ে যায়, চুল দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল সহজেই পড়ে যায়।
৩৯. রঙ করলে যত্ন
চুলে রঙ করা মানেই কিন্তু চুলের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। রঙ করা মানেই আপনাকে কালার লক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। ঘন ঘন চুল পরিষ্কার করা যাবে না একদমই। আর গরম জল তো চুলে একদমই দেওয়া যাবে না। তাহলে রঙ করা চুলের জেল্লা খুব ভাল থাকবে অনেক দিন।
৪০. শ্যাম্পু বেছে ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু করার ক্ষেত্রে আমাদের খুব সাবধান হতে হবে। সবও সময়ে বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভাল। আজকাল হার্বাল শ্যাম্পু চলে এসেছে। ড্রাই শ্যাম্পুর ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু যেন অবশ্যই সালফেট আর প্যারাফিন ফ্রি হয়। নাহলে কিন্তু চুলের সমস্যা কখনই যাবে না।
এই চল্লিশটি টিপস আপনাদের চুলের সব সমস্যার সমাধানের জন্য ব্রহ্মাস্ত্র। একে যত্ন করে তুলে রাখুন আর চুলের যে কোনও সমস্যায় ব্যবহার করুন।
মন্তব্য করুন