প্রবাদে আছে চল্লিশেই চালশে বা চোখের ছানি শুরু হয়। তবে ৪০ এর কোঠায় পা দিলে শুধু চোখ নয় মুখের উপর বয়সের ভাঁজ আঁকিবুকি কাটতে শুরু করে দেয়। সময়ের থাবা চুপিসারে আপনার কপাল, চোখ ও ঠোঁটের চামড়ায় কামড় বসায়।
বলিরেখা ঠেকানোর উপায় এর কথা যদি ধরি আপনি বলবেন কেন এন্টি এজিং ক্রিম আছে তো? অনেকে আবার অত্যাধুনিক লেজার থেরাপি, প্লাস্টিক সার্জারি বা বোটক্স এর সমাধান ও দেবেন। কিন্তু এগুলো খুবই বেদনাদায়ক ও খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। দাশবাস আজ আপনাদের বাতলে দেবে এমন দশটা উপায় যা মেনে চললে আপনি নিজের যৌবনকে বোতলবন্দি তো করবেনই উপরন্তু নিজের ত্বকের অবয়ব ও কমনীয়তা ও অটুট রাখতে পারবেন।
স্কিন কেয়ার রুটিন:
- ত্বককে গোড়া থেকে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখতে একটা স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করা খুব জরুরি। এতে করে একটা নিয়মমাফিক স্কিন দেখভাল করা হয় ফলে বয়স দেখায় নিয়ন্ত্রিত।
- ক্লিঞ্জার ইউজ করুন সকাল ও রাত্রে দুবেলা। ঘুমোনোর আগে ব্যবহার করলে ভালো হয়।
- ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই দিন ক্লিঞ্জার ইউজ এর পর। অন্দরের হাইড্রেসন এর জন্য এটি দরকার পড়ে। বয়স বেশি হলে লোশন নয় ক্রিম এর উপর ভরসা করুন। প্রোডাক্ট যেটা ব্যবহার করছেন তাতে রেটিনল, ভিটামিন এ ও সি আছে কিনা যাচাই করে নিন।
- দিনে বিকেলে বা সন্ধ্যের সময় ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। কপাল, চোখের কোণে ও নাকের খাঁজে তেল ময়লা বের করতে এটি উপযোগী।
- সপ্তাহে একবার ফেস স্ক্রাব ইউজ করুন। স্ক্রাব এ মধু, চিনির মতো উপাদান মাস্ট রাখবেন ও রিমুভ করার পর ঈষৎ উষ্ণ গরম জল দিয়ে মুখ সাফ করবেন।
- দরকার পড়লে মাসে ২বার গোল্ড বা ফ্রুট ফেসিয়াল ট্রাই করতে পারেন। এটা অপসনাল যদিও।
প্যাকের মহিমা:
- তৈলাক্ত বা শুস্ক ত্বকের নমনীয়তা তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়। এর ফলে দাগ, ছোপ চামড়া কোঁচকানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলির মধ্যে যেকোন ফেসপ্যাক বাড়িতেই বানিয়ে ট্রাই করুন দ্রুত ফল পেতে।
- দুধের সর, ডিমের সাদা অংশ ও কমলালেবুর রস একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানান।
- আমন্ড অয়েল, লেবুর রস এবং ওটস এর মিক্স আপ করেও ত্বকে লাগাতে পারেন।
- ডালগুঁড়ো, মধু ও দুধ একত্রে মিশিয়েও লাগাতে পারেন ভালো ফল পেতে।
- কলা ও পেঁপে একসাথে গ্রাইন্ড করে প্যাক বানাতে পারেন।
- এগুলো সবকটাই ত্বকের আর্দ্রতা, পুষ্টি ও স্টিমুলেসন এর খেয়াল রাখে।
তেজি তেজপাতা:
- তেজপাতার তেজ তো রান্নায় দেখেই থাকবেন কিন্তু আপনার বলিরেখা নির্মূলেও এটি কাজে লাগবে এবার। জীর্ণ ত্বক পুনরুজ্জীবনের জিম্মা দিন তেজপাতাকে।
- ৫টা প্রমান সাইজের তেজপাতা জলে ফুটিয়ে নিন বেশ মতো। এবার সেই জল এ তোয়ালে ভিজিয়ে নিয়ে সেটায় মুখে নিয়ে স্টিমিং করুন মিনিট পাঁচেক।
- ব্যাস আপনার কাজ শেষ। এবার ত্বক করবে রিল্যাক্স আর গ্লো বাড়বে আপনার।বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখুন না।
অ্যালোভেরা টোনার:
- বয়সের সাথে সাথে আমাদের স্কিনে কমতে থাকে কোলাজেন নামক প্রোটিনটি যার ফলে ত্বক তার দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে অকালবার্ধ্যক্য এর দিকে ছুটে চলে।
- এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে অ্যালোভেরার বিশেষ এই টোনার। ত্বক আর্দ্র করে এটি তরতাজা ভাব ফিরিয়ে আনে।
- ১/২ কাপ অ্যালোভেরা, ১/২ কাপ গোলাপজল ও একটি ভিটামিন ই ট্যাবলেট।
- প্রথমে একটা স্প্রে বোতল নিয়ে সেটা গোলাপজল এ ভর্তি করুন। এবার তাতে একে একে অ্যালোভেরা জেল ও ভিটামিন ই ট্যাবলেট মিশিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে নিলেই তৈরি আপনার টোনার। দরকার মতো ত্বকে স্প্রে করে নিতে পারবেন।
জাপানি পদ্ধতি:
- জাপানিদের সৌন্দর্য এর কথা বিশ্বজোড়া।তারা কঠোর নিয়মের মধ্যে থেকে নিজেদের বয়স বেঁধে রাখেন।জাপানী ম্যাসাজ ত্বকে রক্ত প্রবাহ এর গতি বাড়ায় ফলে ফাইন লাইন আর বলিরেখা পগার পার হয়।
- চোখের নিচে দু হাতের তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে চাপ দিয়ে রাখুন ও পরে চামড়া খানিক টেনে রাখুন এতে করে চোখের নিচের অংশে ব্লাড ফ্লো বাড়বে।
- টি জোনের জন্য তিনটি আঙ্গুল নিয়ে নাকের পাশে ধরে রাখুন ৫-৭সেকেন্ড মতো ও তার পর হাত রেখে বুলিয়ে নিন।
- নিয়মিত অভ্যাসে পাবেন ম্যাজিক এর মত ফল।
চোখের যত্ন:
- মুখের কথা ভাবতে গিয়ে চোখকে আমরা অবহেলা করি। অথচ চোখের দীপ্তির উপর মুখের লাবণ্য ও তারুণ্য এর অভিব্যক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে।
- নারকোল তেল ও আদা নিয়ে কড়াইতে গরম করে নিন। সেটা স্টোর করে নিয়মিত চোখের কোনে ও নীচে লাগাতে থাকুন। কোকো ফ্যাট পুষ্টি যোগাবে আর আদা ইলাস্টিন ছড়িয়ে যাওয়া আটকাবে যেটা বলিরেখা বাড়বাড়ন্ত এর প্রধান কারণ।
- রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আই ক্রিম নিশ্চই লাগান। গ্লিসারিন ও নিয়াসিনামাইড ডার্ক সার্কেল ও ফোলাভাব এর উপরে কার্যকরী ভাবে প্রভাব ফেলে।
সানস্ক্রিন:
- বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন মাস্ট লাগিয়ে বেরোন।
- সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি কিন্তু ত্বকের সমূহ ক্ষতি করে।
- সানস্ক্রিন এর এসপিএফ এর মান ১৫ উপর আছে কিনা দেখে নেবেন অবশ্যই।
বিশেষ খাবার:
- সময়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের যৌবন অম্লান রাখতে ফুড ইনটেক ও কিন্তু সমানভাবে দরকার। এই কটি জিনিস খাদ্যতালিকায় তাই রাখুন।
- মাছ(স্যামন ও ছোট মাছ) ত্বকের পুনর্গঠন ও টানটান ভাব রাখে অক্ষত।
- জলপাইও গাজর এন্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।
- দই, পালং শাক ব্রণ নাশক, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট এবং প্রদাহরোধকারী।
হেলদি হ্যাবিট:
- স্বাস্থ্যসম্মত বিধিনিষেধ মেনে চলা যেকোনো লক্ষ্য পাবার রাস্তা সহজ করে দেয়।রিঙ্কেল এর ক্ষেত্রেও সেটার ব্যতিক্রম নয়।
- ধূমপান করবেন না।
- ৭ঘন্টার মিনিমাম ঘুমের সময় দিন। পেটে ভর দিয়ে ঘুম নয়।হরমোন গুলির ঠিক কাজের জন্য ঘুম দরকারি।
- নাইট ক্রিম ইউজ করুন সারাদিনের ক্ষতিগ্রস্ত চামড়ার মেরামত করার জন্য।
- মুখে কারণ ছাড়া বারবার হাত দেবেন না।
- এড়িয়ে চলুন জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড ও চিনি।
মুখভঙ্গী:
- শুনতে অবাক লাগলেও এটাও সত্যি যে অযথা অতিরিক্ত হাসা বা ভ্রূ কোঁচকানোর জন্য গালে ও কপালে রিঙ্কেল এর দুর্যোগ দেখা গেছে।
- স্কিনের ইলাস্টিসিটি এর ফলে নষ্ট হয় ও চামড়ায় স্ট্রেন পড়ে পোরস, গর্ত ইত্যাদির পথ সুগম হয়।
- তাই রিঙ্কেল আটকাতে হলে এসব করবেন না মোটেই।
তাহলে কি দেখলেন একটু সচেতনতার সাথে ত্বকের পরিচর্যা আর নিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাস কিন্তু আপনার বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের খোলনলচে পাল্টে দিতেই পারে।
মন্তব্য করুন