আমাদের জীবনে বাস্তুশাস্ত্রের কিন্তু ব্যাপক অবদান রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা যারা কিছু জানি না তাঁরা হয়তো একে অবৈজ্ঞানিক বলে উড়িয়ে দেবেন, কিন্তু আদতে এই বাস্তুশাস্ত্রের নিজস্ব কিছু যুক্তি আছে যা অত্যন্ত কার্যকারী।
বাস্তু মতে ঘরের প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দিক আছে আর সেই জিনিসটি সেই দিকেই রাখা বা করা উচিৎ। তা না হলে ঘরের বা বাড়ির অমঙ্গল হতে পারে। ঘরের মানুষদের জীবন সুখকর হয় না।
বাস্তু মতে আমাদের ঘরে ঠাকুরের আসনের স্থান নিয়েও বেশ কিছু কথা বলা আছে। আসুন আজ সেই সম্পর্কিত কিছু কথা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই।
বাস্তু মতে কোন দিকে হওয়া উচিৎ ঠাকুর ঘর?
- বাস্তু মতে বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিক অর্থাৎ ঈশান কোন হল ঠাকুর ঘর করার সবচেয়ে ভালো দিক। এ ছাড়াও পূর্ব দিকে বা উত্তর দিকেও করা যেতে পারে ঠাকুর ঘর। বেডরুম বা শোবার ঘরে ঠাকুর রাখা একদম উচিৎ নয়। তবে জায়গা একান্তই না থাকলে শোবার ঘরে ঠাকুর রাখলেও রাতে সেই জায়গায় পর্দা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- আর ঠাকুর সর্বদা উত্তর বা পূর্ব দিকে প্রতিষ্ঠিত হবে। ঠাকুরঘরের উপরে বা নিচে বা পাশে কখনই টয়লেট বা বাথরুম তৈরি করা যাবে না। কোনওরকম অদরকারী জিনিস ঠাকুরঘরে রাখা মোটেই শুভ নয়।
কেন উত্তর-পূর্ব কোণে ঠাকুর ঘর?
আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাস্তু পুরুষের অস্তিত্ব আছে ধরা হয়। এই বাস্তু পুরুষের মাথা আছে উত্তর-পূর্ব কোণে, শাস্ত্র এমনটাই বলে। আমরা সবাই জানি, মানুষ হিসেবে আমাদের মাথাও যদি পজিটিভ চিন্তায় পরিপূর্ণ না থাকে তাহলে আমরা জীবনে ভালো কিছু করতে পারি না।
তেমনই বাস্তু পুরুষের মস্তিষ্ক যে দিকে অর্থাৎ যে উত্তর-পূর্ব দিকে সেই দিকটাও সবচেয়ে বেশি পজিটিভ রাখা উচিৎ। আর আমরা কেইই বা না জানি যে ঠাকুরের স্থান ছাড়া সবচেয়ে পজিটিভ আর শক্তিশালী স্থান আর কিছুই নয়। তাই বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণ হতে হবে ঠাকুরের স্থান।
ঈশান কোণে না হলে কী হবে?
এই দিকে ঠাকুর ঘর না হলে যে কোনও মানুষের জীবনে আসতে পারে দুর্ভাগ্য। একজন মানুষ সারাক্ষণ কষ্ট করে পরিশ্রম করার পরেও তাঁর উপযুক্ত ফলাফল পাচ্ছেন না। টাকা রোজগার করলেও সেই টাকা জলের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে।
আবার বাড়িতে সারাক্ষণ অশান্তি লেগে আছে। বা হয়তো বাড়ির কারোর না কারোর কিছু না কিছু রোগ লেগেই আছে। কিন্তু এই সবই হচ্ছে পজিটিভ শক্তির অভাবের জন্য। আর এই অভাব আসছে ঠাকুর ঘর ঠিক দিকে না হওয়ার জন্য।
অন্য দিকে হলে কী করবেন?
আজকের ফ্ল্যাটবাড়ির যুগে এতো কিছু মেনে তো ঘর করা সম্ভব হয় না। আর যদিও বা হয় তাহলেও কিছু ভুল থেকেই যায়। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আমরা করতেই পারি যাতে আমাদের ঠাকুর ঘর ভুল জায়গায় হলেও তার অশুভত্ব খানিক কম হতে পারে।
- সাধারণ ঘরের মেঝে আর ঠাকুর ঘরের মেঝের মধ্যে উচ্চতার ফারাক থাকবে। মানে আপনার সাধারণ ঘরের মেঝের থেকে ঠাকুর ঘরের মেঝে ১ ইঞ্চি হলেও উঁচু হবে।
- ঠাকুর ঘরে অবশ্যই একটি চৌকাঠ করতে হবে।
- ঠাকুর ঘরের দরজা খুব উঁচু হবে না, হবে ছোট। ছোট করার কারণ হল আপনাকে যাতে সবসময় মাথা নিচু করে ঠাকুর ঘরে ঢুকতে হয়। মাথা উঁচু করে ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করতে নেই। এতে অহংকার প্রকাশ পায়।
- ঠাকুর ঘরের রঙ যতটা সম্ভব হাল্কা করুন।
- আপনার সামর্থ্য থাকলেও ঠাকুর ঘর খুব বড় করবেন না। বড় ঠাকুর ঘর থেকে নেগেটিভ এনার্জি তৈরি হতে পারে।
- ঠাকুর ঘরে কখনও বটি, ছুরি, কাঁচি এই ধরণের জিনিস রাখা উচিৎ নয়। আমরা অনেক সময়ে আমাদের কাজের সুবিধের জন্য ফল কাটার বটি রেখে দিই ঠাকুর ঘরেই। কিন্তু সেটা উচিৎ নয়।
আপনার বাড়িতে যদি ঠাকুর ঘর উত্তর-পূর্বে অর্থাৎ ঈশান কোণে নাও হয়ে থাকে, তাহলেও কিন্তু উপরের এই ছোট ছোট কথাগুলি মনে রাখলে আপনার ঠাকুর ঘরের থেকেই আপনি যথেষ্ট পজিটিভ এনার্জি পেতে পারেন যা আপনাদের জীবনে আনতে পারে শুভ আর মঙ্গল দিক। তাহলে আর দেরী না করে ঠাকুর ঘর বাস্তুসম্মত করার ব্যবস্থা করুন।
মন্তব্য করুন