শাওন দত্তের মেট্রোনোম ইউটিউব চ্যানেলটা বেশ কয়েক দিন থেকেই শুনছে নন্দিনী। রান্না করতে ভালোবাসে বলে অনেক রেসিপি দেখে ও। কিন্তু এই চ্যানেল দেখে ও তো একেবারে থ। গানের মধ্যে দিয়ে এতো ভালভাবে রেসিপি শেখানো এমন তো ও আগে দেখেনি।
স্মার্ট উপস্থাপনা, হালকা মজা আর ভালো ভালো রেসিপি, সব মিলে এই চ্যানেলের প্রেমে পড়ে গেছে নন্দিনী। তাই অমিত যখন বলল নন্দিনীকে মটন বিরিয়ানি বানাতে তখন ও ভাবল শাওন দত্তের স্টাইলেই মটন বিরিয়ানি বানাবে। এমনিতেই বিরিয়ানি বানাতে যা হ্যাপা, খানিক গাইতে গাইতে হালকা চালে করলে কম খাটনি লাগবে।
এবার আপনাদেরও ওদের রান্নাঘরে নিয়ে যাই, দেখি কীভাবে করছে রান্নাটা। আর হ্যাঁ ওদের গল্প পড়ার আগে শুনে নিন আজকের এই রেসিপির গান।
গল্প পড়তে পড়তে রেসিপি জেনে নিন
নন্দিনীঃ সব ঠিকঠাক আনা হল তো রে? রান্নার মাঝে কিছু একটা না পেলে কিন্তু কেস খেয়ে যাব পুরো।
অমিতঃ লিস্ট দেখে একবার সব মিলিয়ে নে না। কিছু না থাকলে এক্ষুনি তাহলে পাড়ার দোকান থেকে আনা যাবে।
নন্দিনীঃ দেখি একবার। মটন ১ কেজি, ৩টে পেঁয়াজ, ১০ কোয়া মতো রসুন, আদা, টকদই, সর্ষের তেল তো ঘরেই ছিল, ক্যাওরা জল, গোলাপ জল, মিঠা আতর, কেশর, ইয়েলো ফুড কালার। বাহঃ, সবই তো এনেছিস দিব্যি।
অমিতঃ হুহ! এই সব ক্ষেত্রে আমি ভুল করি না ম্যাডাম। মটন বিরিয়ানি খাওয়া আমার কাছে পুজোর মতো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব উপকরণ আনা চাই। কিছু কম পড়লে যদি পেটপুজোয় ব্যাঘাত হয়!
নন্দিনী খানিক পর চমকে উঠে বলল, আরে! তোকে মটন আনতে তো লিখিনি আমি, এনেছিস কেন? মটন তো ছিলই ঘরে। আমি কাল রাতে ম্যারিনেট করে রেখেছিলাম। আমিও কথায় কথায় ভুলে গেলাম, ধুর!
অমিত চোখ পাকিয়ে বলল, তা আমি কী করে জানবো বল, আমি তো আর অন্তর্যামী নই। আর মাংস সারা রাত ফ্রিজে রাখারই বা কী আছে! এই এক ঢং।
নন্দিনীঃ রান্নার তো ‘র’ জানিস না। সারারাত মশলা মাখিয়ে রাখলে মাংসের টেন্ডারনেস বাড়ে, নরম থাকে মাংস। সব মশলা মাংসে ঢোকে। অতএব, স্বাদ খোলে।
অমিতঃ তা কী কী মাখালি মাংসে সারারাত শুনি!
নন্দিনীঃ কিছুদিন আগে বাড়িতে বিরিয়ানি মশলা বানিয়ে নিয়েছিলাম জানিস তো! আরে তুই যেদিন বাড়িতে ঢুকে ভেবেছিলি বিরিয়ানি করছি, আসলে ওটা এই মশলার গন্ধ ছিল। দারচিনি, লবঙ্গ , ছোট এলাচ, বড় এলাচ, জায়ফল, জৈত্রি, গোলমরিচ, সাদা গোলমরিচ, অল্প মৌরি, কাবাব চিনি, গোটা জিরে আর একটা স্টার অ্যানিস, এই সব শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে নিয়েছিলাম। নে মুখস্থ বল দেখি।
অমিতঃ বাপ রে! এতো কিছু। তুই ভাই জিনিয়াস। এই দিয়ে কী করলি?
নন্দিনীঃ এবার মাংসের মধ্যে এই বিরিয়ানি মশলা, ৩ চামচ টক দই, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, অল্প লঙ্কা গুঁড়ো, নুন আর ভাজা পেঁয়াজ দিয়ে মেখে রাখলাম সারা রাত। যা নিয়ে আয় মাংসটা।
অমিতঃ ওরে বাবা! দোকান থেকে আনলেই তো হত। এতো হ্যাপা আগে জানতাম না।
নন্দিনীঃ সবে তো কলির সন্ধে! কড়াইতে সেদ্ধ ডিম আর আলুগুলো নুন হলুদ দিয়ে ভেজে নে তো। ততক্ষণে আমি পেঁয়াজগুলো ভালো করে কুচিয়ে, আদা আর রসুনটা বেটে ফেলি।
অমিত আলু ভাজতে ভাজতে বলল, জানিস, শুনেছিলাম বিরিয়ানিতে আলু দেওয়া নাকি নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় চালু করেন। আর এতেই কলকাতার বিরিয়ানি তামাম বিরিয়ানির থেকে আলাদা হয়ে গেল। বেশ ইন্টারেস্টিং না!
নন্দিনীঃ আমিও শুনেছি। এবার চুপচাপ দেখ আমি মাংসটা কীভাবে করি। আমি যখন অফিস ট্যুরে যাব, তোর ইচ্ছে হলে করে খেতে পারিস এভাবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিবি, আর বেশ খানিক ঘি। গরম হলে আঁচ কমিয়ে গোটা গরমমশলা আর তেজপাতা ফোড়ন দিবি। তারপর হাল্কা গন্ধ আসলে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে ভালো করে কষাবি। প্রায় ২০ মিনিট লাগবে কিন্তু, তাই ধৈর্য ধরে করতে হবে আর তোর তো নেই সেটা।
অমিত রেগে গাল ফুলিয়ে বলল, নে নে এগো, জ্ঞান দিস না। আমি অনেক কিছুই পারি। এই তো তোর কথা মতো দুধে কেশর ভিজিয়ে রাখলাম। আরেকটা জায়গায় গোলাপ জল, ক্যাওরা জল, মিঠা আতর, ফুড কালার মিশিয়ে রাখলাম।
নন্দিনীঃ মাই গুড বয়! আর ভাতের খবর কী?
অমিতঃ সেটাও করে রেখেছি ম্যাডাম। জল বসিয়ে গরম করে তাতে তেজপাতা, লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, অল্প মৌরি দিয়েছিলাম। তারপর ফুটে আসলে পাক্কা তিরিশ মিনিট ভেজানো বাসমতী চাল দিলাম। ১০ মিনিট পর ভাত অল্প শক্ত থাকলে নামালাম আর পাখার তলায় দিয়ে একেবারে ঝরঝরে করে নিলাম। আনবো? দেখবি?
নন্দিনী অমিতের গাল টিপে বললো, ‘উফফফ তুই ফাটিয়ে দিয়েছিস। এবারই তো আসল জিনিস করতে হবে, দমে বসাবো বিরিয়ানি। দেখ গ্যাসের ওপর বড় পাত্র নিয়ে জল ভর্তি করবি। জলটা ফুটছে। এর ওপর কড়াই রেখে খানিক ঘি দিবি। তার ওপর আগে চাল দিবি ছড়িয়ে। তার ওপর মটন দিবি। এবার ওই গোলাপ জল, ক্যাওরা জলের মিশ্রণ দে, কেশর দে ছড়িয়ে। অল্প ভাজা পেঁয়াজ দে। ওপর থেকে এবার দরাজ হাতে ঘি দিয়ে দে। আবার তারপর চাল, মাংস, গোলাপ জলের মিশ্রণ, কেশর, ফুড কালার, আর এবার ডিম আর আলু, আবার সাদা চাল, আর অনেকটা ঘি। ব্যাস। ওপর দিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়ে একটা ঢাকনা চাপা দিয়ে ধিমে আঁচে রাখ ৩০ মিনিট। নে এবার অন্য কাজ কর’।
অনেক ক্ষণ রান্নাঘরের কাছে ঘুরঘুর করে ঘড়ি দেখে অমিত বলল, ‘ওরে ৩০ মিনিট হল তো’।
নন্দিনীঃ এখনও ৫ মিনিট। বললাম না তোর ধৈর্য নেই। ঠাম্মা বলত, মটন দিয়ে কিছু রান্নার করার আসল উপকরণ নাকি ধৈর্যই। নে দেখি কেমন হল।
অতঃপর ওদের বিরিয়ানি রান্না কিন্তু দারুণ হয়েছে। প্রথম ব্যাটেই ওরা ছক্কা হাঁকিয়েছে। এবার আমরা ওদের খেতে দিই নিশ্চিন্তে। আর আপনারা শুনতে শুনতে শাওনের গান রবিবারের দুপুরে মটন বিরিয়ানি খান।
মন্তব্য করুন